উযায়ের (আঃ) এর ঘটনাঃ আল্লাহ কর্তৃক একশত বছর মৃত রেখে পুনর্জিবীত করা


উযায়ের (আঃ) এর ঘটনাঃ আল্লাহ কর্তৃক একশত বছর মৃত রেখে পুনর্জিবীত করা এবং মৃত শহরকে পুনরায় জনবসতিপুর্ন করার ঘটনাঃ

উযায়ের (আঃ) এর ঘটনাঃ আল্লাহ কর্তৃক একশত বছর মৃত রেখে  পুনর্জিবীত করা এবং মৃত শহরকে পুনরায় জনবসতিপুর্ন করার ঘটনাঃ

”অথবা সেই লোকটির উপমা। [চিন্তা কর] যে একটি ক্ষুদ্র গ্রামের ধ্বংস স্তুপের মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলো।
সে বলেছিলো, “মৃত্যুর পর কিভাবে আল্লাহ্‌ ইহাকে জীবিত করবেন ?” অতঃপর আল্লাহ্‌ তাকে একশত বৎসর মৃত রাখলেন, তারপর [পুনরায়] তাকে জীবিত করলেন।
আল্লাহ্‌ বললেন, “[এরূপ অবস্থায়] তুমি কতকাল অবস্থান করলে ?”
সে বলেছিলো, [সম্ভবতঃ] একদিন বা দিনের কিছু অংশ।”
আল্লাহ্‌ বলেছিলেন, “না, বরং তুমি একশত বৎসর অবস্থান করেছ। তোমার খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি লক্ষ্য কর, উহাতে দীর্ঘদিনের অবস্থানের কোন চিহ্ন নাই। এবং তোমার গাধাটির দিকে তাকাও। তোমাকে মানব জাতির জন্য নিদর্শন স্বরূপ করবো সে কারণে আরও তাকাও [গাধাটির] অস্থিগুলির প্রতি। কিভাবে সেগুলি আমি সংযোজিত করি এবং মাংস দ্বারা ঢেকে দেই।”
যখন তাকে তা সুস্পষ্টরূপে দেখানো হলো, সে বলেছিলো, “আমি জানি যে সকল বিষয়ের উপরে আল্লাহ্‌ সর্বশক্তিমান।”
সুরা বাক্বারাহ ২৫৯।

ইবন আবী হাতিম (রহঃ) বলেন, আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াতে বর্নিত ব্যক্তি হলেন উযায়ের (আঃ)
ইবনে জারীর (রহঃ)ও অনুরূপ বর্ননা করেছেন।

মুজাহির ইবনে যাবর (রাহঃ) বলেন যে, এই আয়াত হল রাজা বখতে নাসর কর্তৃক জেরুজালেমের একটি গ্রাম সম্পুর্ন্রূপে ধ্বংস এবং জনগণকে হত্যা করার পর ওখানকার বানী ইসরাইলের এক মহান লোক সম্পর্কিত।

রাজা বখতে নাসর যখন ঐ জনবসতি ধ্বংস করে এবং জনগণকে তরবারির নীচে নিক্ষেপ করে তখন ঐ জনবসতি একেবারে শ্মশানে পরিণত হয়। তারপর ওই মহান ব্যক্তি সেখান দিয়ে গমন করেন।

যখন তিনি দেখেন যে, জনপদটি একেবারে শ্মশান হয়ে গেছে। সেখানে না আছে কোন বাড়ি ঘর, আর না আছে কোন মানুষ! সেখানে অবস্থান রত অবস্থায় তিনি চিন্তা করেন যে, এমন জাঁকজমকপুর্ন শহর যেভাবে ধ্বংস হয়েছে এটা কি আর কোন দিন জনবসতিপুর্ণ হতে পারে!

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং তাকেই মৃত্যু দান করেন। ইনি তো ওই অবস্থায়ই থাকেন।

আর এদিকে সত্তর বছর পর বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরায় জনবসতিপুর্ণ হয়। পলাতক বানী ইসরাঈল আবার ফিরে আসে এবং নিমেষের মধ্যে শহর ভরপুর হয়ে যায়। পূর্বের সেই শোভা ও জাঁকজমক পুনরায় পরিলক্ষিত হয়।

একেবারে একশ বছর পুর্ণ হওয়ার পর আল্লাহ তাকে পুনর্জীবিত করেন এবং সর্বপ্রথম চক্ষুর মধ্যে আত্মা প্রবেশ করান যেন তিনি নিজের পুনর্জীবন স্বচক্ষে দর্শন করতে পারেন।

অতঃপর যখন ফুঁ দিয়ে সারা দেহে আত্মা প্রবেশ করানো হয় তখন আল্লাহ তা’আলা মালাক/ ফেরেশতার মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ
” তুমি কতদিন ধরে মরে ছিলে?”

উত্তরে তিনি বলেনঃ ”এখনও তো একদিন পুরাই হয় নি।”

এটা বলার কারন ছিল এই যে, সকাল বেলা তার আত্মা বের হয়েছিল এবং একশ বছর পর তিনি যখন জীবিত হন তখন ছিল সন্ধ্যা। সুতরাং তিনি মনে করেন যে, অই দিনই রয়ে গেছে।

আল্লাহ তা’আলা তাকে বলেন, তুমি একশ বছর মৃত অবস্থায় ছিলে। এখন আমার ক্ষমতার প্রতি লক্ষ কর যে, পাথেয় হিসেবে যে খাদ্য তোমার নিকট ছিল তা একশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও ঐরূপ রয়েছে, পচেওনি এবং সামান্য বিকৃতও হয় নি।

ওই খাদ্য ছিল আঙ্গুর ডুমুর এবং ফলের নির্যাস। ঐ নির্যাস নষ্ট হয়নি, ডুমুর টক হয়নি এবং আঙ্গুরও খারাপ হয়নি। বরং প্রত্যেক জিনিসই আসল অবস্থায় বিদ্যমান ছিল।

অতঃপর আল্লাহ তাঁকে বলেনঃ তোমার গাধার যে গলিত অস্থি তোমার সামনে রয়েছে অদিকে দৃষ্টিপাত কর। তোমার চোখের সামনেই আমি তোমার গাধাকে জীবিত করছি। আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য নিদর্শন করতে চাই, যেন কিয়ামতের দিন পুনরুত্থানের প্রতি তাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে।

অতঃপর তিনি দেখতে দেখতেই অস্থিগুলো স্ব-স্ব জায়গায় সংযুক্ত হয়ে যায়।

সুদ্দী (রহঃ) প্রমুখ বলেন যে, অস্থিগুলো ডানে-বামে ছড়িয়ে ছিল এবং পচে জাওয়ার ফলে অগুলির শুভ্রতা চকচক করছিলো। বাতাসে ওইগুলো একত্রিত হয়ে যায়। পড়ে অগুলি নিজ নিজ জায়গায় যুক্ত হয়ে যায় এবং পুর্ণ কাঠামো রূপে দাঁড়িয়ে যায়। ওগুলিতে ময়তেও গোস্ত ছিল না। আল্লাহ তা’আলা ওগুলির উপর গোস্ত, শিরা ইত্যাদি পড়িয়ে দেন।

অতঃপ মালাক/ফেরেস্তা পাঠিয়ে দেন। তিনি তার নাসারন্ধ্রে ফুঁক দেন। আল্লাহ তা’আলার হুকুমে তাতক্ষনাত গাধাটি জীবিত হয়ে উঠে এবং শব্দ করতে থাকে।
– তাবারী ৫/৪৬৮।

উযায়ের (আঃ) দর্শন করতে থাকেন এবং মহান আল্লাহর এসব কারিগরী তা চোখের সামনেই সংঘটিত হয়।

এসব কিছু দেখার পর তিনি বলেনঃ ”আমার তো এটা বিশ্বাস ছিলই যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সব কিছুর উপর পুর্ণ ক্ষমতাবান। কিন্তু আজ আমি তা স্বচক্ষে দর্শন করলাম।

সুতরাং আমি আমার যুগের সমস্ত লোক অপেক্ষা বেশি জ্ঞান ও বিশ্বাসের অধিকারী।

– তাফসির ইবনে কাসির, ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৬৫৩-৬৫৪।

ভেজাল কিতাবের বানোয়াট কিচ্ছাকাহিনী বাদ দেই। দেখেন আমাদের কুরআনে ও কুরআনের তাফসিরের মধ্যেই কত সুন্দর সুন্দর শিক্ষামূলক বাস্তব ঘটনার বর্ননা রয়েছে।

চাইলে শেয়ার করতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে।