কুরআন ও হাদীসের আলোকে মহাসাফল্য ও বড় ব্যর্থতা (১ম পর্ব)
ভূমিকা
সব প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, তাঁর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি, তাঁর কাছে আমাদের অন্তরের সব কলুষ ও আমাদের কৃত সব পাপ থেকে পানাহ চাই। তিনি যাকে হিদায়াত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না, আর তিনি যাকে পথ-ভ্রষ্ট করেন কেউ তাকে হিদায়াত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহর অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর উপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত একনিষ্ঠতার সাথে তাঁর অনুসারী সকলের উপর বর্ষিত হোক।
অতঃপর, এটি একটি সংক্ষিপ্ত গবেষণা যাতে “মহাসাফল্য ও বড় ব্যর্থতা” বর্ণনা করেছি। আর তা হলো জান্নাত ও জাহান্নামের তুলনামূলক আলোচনা। এমন জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত যা কেউ লাভ করলে সে মহা সফল্য অর্জন করল, আর জাহান্নামের আযাব যেখানে কাউকে শাস্তি দেয়া হলে সে স্পষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে আমি সংক্ষেপে পঁচিশটি পরিচ্ছেদে ‘দারুস সালাম’ তথা শান্তির নিকেতনে যাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছি এবং এর নিয়ামতরাজি ও সেখানে পৌঁছার পথ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতের অধিবাসী করুন! আর ‘দারুল বাওয়ার’ তথা ধ্বংস ও আযাবের স্থান জাহান্নাম সম্পর্কে সতর্ক করেছি এবং কি কারণে মানুষ জাহান্নামে যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। আল্লাহর কাছে আমরা জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি।
নিঃসন্দেহে প্রকৃত সফলতা হলো: জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَۗ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ١٨٥ ﴾ [ال عمران: ١٨٥]
“সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী।” [সূরা আলে-‘ইমরান: ১৮৫]
এটা সবচেয়ে বড় কামনা। এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ: «مَا تَقُولُ فِي الصَّلَاةِ؟» قَالَ: أَتَشَهَّدُ ثُمَّ أَسْأَلُ اللَّهَ الْجَنَّةَ، وَأَعُوذُ بِهِ مِنَ النَّارِ، أَمَا وَاللَّهِ، مَا أُحْسِنُ دَنْدَنَتَكَ، وَلَا دَنْدَنَةَ مُعَاذٍ قَالَ: «حَوْلَهَا نُدَنْدِنُ»
“এক ব্যক্তিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সালাতে কি পড়? সে বলল: আমি তাশাহহুদ পড়ি, এরপরে আমি আল্লাহর কাছে জান্নাতের জন্য দু‘আ করি এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। তবে আল্লাহর কসম! আপনার ও মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অস্পষ্ট কথাবার্তা কতই না উত্তম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমরা অস্পষ্ট আওয়াজে জান্নাতের পরিবেশ কামনা করি।” [1]
অর্থাৎ তুমি আল্লাহর কাছে জান্নাত কামনা কর আর জাহান্নাম থেকে পানাহ চাও। আমারও গুনগুণ করে জান্নাত কামনা করি ও জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। সাহাবীদের পরিপূর্ণ মানব হওয়া, তাদের প্রবল আগ্রহ ও বিচক্ষণ জ্ঞানের প্রমাণ রাবি‘আ ইবন কা‘আব আল-আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাজ দ্বারা প্রমাণিত হয়।
عَنْ رَبِيعَة بْن كَعْبٍ الْأَسْلَمِيّ، قَالَ: كُنْتُ أَبِيتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَيْتُهُ بِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ فَقَالَ لِي: «سَلْ» فَقُلْتُ: أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ. قَالَ: «أَوْ غَيْرَ ذَلِكَ» قُلْتُ: هُوَ ذَاكَ. قَالَ: «فَأَعِنِّي عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُو
“রাবি‘আ ইবন কা‘আব আল-আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রাত যাপন করেছিলাম। আমি তাঁর অযুর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম। তিনি আমাকে বললেন, কিছু চাও। আমি বললাম, জান্নাতে আপনার সাহচার্য প্রার্থনা করছি। তিনি বললেন, এ ছাড়া আরো কিছু আছে কি? আমি বললাম, এটাই আমার প্রার্থনা। তিনি বললেন, তাহলে তুমি অধিক পরিমানে সিজদা করে তোমার নিজের স্বার্থেই আমাকে সাহায্য করো।” [2]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী ও তাঁর উম্মতকে জান্নাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করতেন ও জাহান্নাম থেকে ভয় প্রদর্শন করতেন। এজন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত হাদীসে বলেছেন,
عَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” إِذَا وُضِعَتِ الجِنَازَةُ، فَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلَى أَعْنَاقِهِمْ، فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً قَالَتْ: قَدِّمُونِي، وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَتْ لِأَهْلِهَا: يَا وَيْلَهَا أَيْنَ يَذْهَبُونَ بِهَا، يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا الإِنْسَانَ، وَلَوْ سَمِعَ الإِنْسَانُ لَصَعِقَ “
আবু সা‘ঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন জানাযা খাটে রাখা হয় এবং পুরুষরা তা কাঁধে বহন করে নেয়, তখন সে নেক্কার হলে বলতে থাকে, আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আর নেক্কার না হলে সে বলতে থাকে, হায় আফসূস! তোমরা এটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? মানব জাতি ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পায়। মানুষেরা তা শুনলে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলত।”[3]
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমার এ কাজকে কবুল করেন, এটার দ্বারা আমাকে ও যারা এ কাজে সম্পৃক্ত সবাইকে উপকৃত করেন। কেননা তিনি হলেন উত্তম অভিভাবক ও সম্মানিত আশ্রয়স্থল। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি উত্তম অভিভাবক। আল্লাহর সালাত, সালাম ও বরকত আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত একনিষ্ঠার সাথে অনুসারী সবার উপর বর্ষিত হোক।
লেখক
বুধবার, সকাল
৭/৭/১৪১৬ হিজরী।
প্রথম পরিচ্ছেদ
মহাসফল্য ও বড় ব্যর্থতার মর্মার্থ
প্রথমত: মহাসাফল্যের মর্মার্থ:
(الفوز) আল ফাওয শব্দটি আরবী, এর অর্থ হলো, নিরাপত্তার সাথে কল্যাণ অর্জন ও সব ধরণের অপছন্দনীয় ও ক্ষতিকর জিনিস থেকে নাজাত লাভ। [4]
(العظيم ) আর আযীম শব্দটিও আরবী, যেমন বলা হয়: عَظُمَ الشيءُ: أصله كَبُرَ عظْمُهُ অর্থাৎ মহান হওয়া, বড় হওয়া। অতঃপর রূপক অর্থে সব বড় জিনিসকে আযীম বলা হয়। চাই তা স্পর্শকর জিনিস হোক বা বিবেকের জিনিস, বস্তুগত হোক বা অর্থগত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ قُلۡ هُوَ نَبَؤٌاْ عَظِيمٌ ٦٧ أَنتُمۡ عَنۡهُ مُعۡرِضُونَ ٦٨ ﴾ [ص: ٦٧، ٦٨]
“বল, এটি এক মহাসংবাদ। তোমরা তা থেকে বিমুখ হয়ে আছ।” [সূরা : সোয়াদ: ৬৭-৬৮]
আল্লাহ তা‘আলা মহাসাফল্য সম্পর্কে বলেছেন,
﴿ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٧٢ ﴾ [التوبة: ٧٢]
“আল্লাহ মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসাফল্য।” [সূরা আত্-তাওবা: ৭২]
আল্লাহ সুবহানাহু ওতা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠ ﴾ [التوبة: ١٠٠]
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য।” [সূরা আত্-তাওবা: ১০০]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি জান্নাত লাভ করল সে মহাসাফল্য অর্জন করল। আল্লাহ কুরআনে ১৬ জায়গায় এ কথা উল্লেখ করেছেন। [5] আল্লাহ এ সাফল্যের বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَهُمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡكَبِيرُ ١١ ﴾ [البروج: ١١]
“নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সফলতা।” [সূরা : আল্-বুরূজ: ১১]
আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট সফলতার কথা অন্যত্র বর্ণনা করেছেন,
﴿ قُلۡ إِنِّيٓ أَخَافُ إِنۡ عَصَيۡتُ رَبِّي عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ١٥ مَّن يُصۡرَفۡ عَنۡهُ يَوۡمَئِذٖ فَقَدۡ رَحِمَهُۥۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡمُبِينُ ١٦ ﴾ [الانعام: ١٥، ١٦]
“বল, যদি আমি আমার রবের অবাধ্য হই তবে নিশ্চয় আমি ভয় করি মহা দিবসের আযাবকে। সেদিন যার থেকে আযাব সরিয়ে নেয়া হবে তাকেই তিনি অনুগ্রহ করবেন, আর এটাই প্রকাশ্য সফলতা।” [আল-আন‘আম: ১৫-১৬]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَيُدۡخِلُهُمۡ رَبُّهُمۡ فِي رَحۡمَتِهِۦۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡمُبِينُ ٣٠ ﴾ [الجاثية: ٣٠]
“অতঃপর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের রব পরিণামে তাদেরকে স্বীয় রহমতে প্রবেশ করাবেন। এটিই সুস্পষ্ট সাফল্য।” [সূরা : আল-জাসিয়া: ৩০]
স্পষ্ট, বিরাট ও মহাসাফল্য হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাতে প্রবেশ। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ أُجُورَكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۖ فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَۗ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ١٨٥ ﴾ [ال عمران: ١٨٥]
“প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ‘অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী।” [আলে ইমরান: ১৮৫]
আল্লাহ তা ‘আলা কতিপয় জান্নাতীদের কথা বর্ণনা করে বলেন,
﴿ أَفَمَا نَحۡنُ بِمَيِّتِينَ ٥٨ إِلَّا مَوۡتَتَنَا ٱلۡأُولَىٰ وَمَا نَحۡنُ بِمُعَذَّبِينَ ٥٩ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٦٠ لِمِثۡلِ هَٰذَا فَلۡيَعۡمَلِ ٱلۡعَٰمِلُونَ ٦١ ﴾ [الصافات: ٥٨، ٦١]
“(জান্নাতবাসী ব্যক্তি বলবে) ‘তাহলে আমরা কি আর মরব না? আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া, আর আমরা কি আযাবপ্রাপ্ত হব না? নিশ্চয় এটি মহাসাফল্য! এরূপ সাফল্যের জন্যই ‘আমলকারীদের আমল করা উচিত।” [সূরা : আস্-সাফ্ফাত: ৫৮-৬১]
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ يَلۡبَسُونَ مِن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٥٣ كَذَٰلِكَ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٥٤ يَدۡعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَٰكِهَةٍ ءَامِنِينَ ٥٥ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٥٦ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكَۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٥٧ ﴾ [الدخان: ٥١، ٥٧]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, বাগ-বাগিচা ও ঝর্নাধারার মধ্যে, তারা পরিধান করবে পাতলা ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং বসবে মুখোমুখী হয়ে। এরূপই ঘটবে, আর আমি তাদেরকে বিয়ে দেব ডাগর নয়না হূরদের সাথে। সেখানে তারা প্রশান্তচিত্তে সকল প্রকারের ফলমূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর সেখানে তারা আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। তোমার রবের অনুগ্রহস্বরূপ, এটাই তো মহাসাফল্য।” [সূরা : আদ্-দুখান: ৫১-৫৭]
আল্লাহ তা‘আলা সাদিকীনদের সম্পর্কে বিশেষ করে ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেছেন,
﴿ قَالَ ٱللَّهُ هَٰذَا يَوۡمُ يَنفَعُ ٱلصَّٰدِقِينَ صِدۡقُهُمۡۚ لَهُمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١١٩ ﴾ [المائدة: ١١٩]
“আল্লাহ বলবেন, ‘এটা হল সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ যার নীচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য।” [আল-মায়েদা: ১১৯]
এ ছাড়াও অনেক আয়াতে এ মহা সফলতা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা এ মহা সফলতার পথে চলার উপায়সমূহ ও যে সব কাজ করলে এ সফলতা অর্জন করা যায় তা আল কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ ﴾ [الاحزاب: ٧٠، ٧١]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহাসাফল্য অর্জন করল।” [সূরা : আল্-আহযাব: ৭০-৭১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿ تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ ﴾ [النساء: ١٣]
“এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা।” [আন্-নিসা: ১৩]
﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٥٢ ﴾ [النور: ٥٢]
“আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য।” [সূরা : আন্-নূর: ৫২]
দ্বিতীয়ত: বড় ব্যর্থতার মর্মার্থ:
خَسِرَ অর্থ ক্ষতি, ব্যর্থতা, লোকসান, পথহারা হওয়া ইত্যাদি। যেমন বলা হয়, خَسِرَ التاجر: غُبِنَ في تجارته، ونقص ماله فيها লোকটি ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যর্থ হলো। আবার বলা হয়, خسر فلانٌ: هلك وضل সে ধ্বংস হলো ও পথহারা হলো। এগুলো প্রকাশ্য ও বস্তুগত অর্থের ব্যবহার, যেমন ধন সম্পদ। আর অন্তর্নিহিত অর্থের দিক থেকে এর ব্যবহার হতে পারে যেমন, স্বাস্থ্য, সুস্থতা, বিবেক, ঈমান, সাওয়াব ইত্যাদি। এ অর্থেই আল্লাহ তা ‘আলা স্পষ্ট ক্ষতি ও বড় ব্যর্থতা বুঝিয়েছেন। [6]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন,
﴿ قُلۡ إِنَّ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ وَأَهۡلِيهِمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ أَلَا ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡخُسۡرَانُ ٱلۡمُبِينُ ١٥ ﴾ [الزمر: ١٥]
“বল, নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত যারা কিয়ামত দিবসে নিজদেরকে ও তাদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত পাবে। জেনে রেখ, এটাই স্পষ্ট ক্ষতি।” [সূরা আয্-যুমার: ১৫]
আল্লাহ তা‘আলা যালিমদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿ وَمَن يُضۡلِلِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِن وَلِيّٖ مِّنۢ بَعۡدِهِۦۗ وَتَرَى ٱلظَّٰلِمِينَ لَمَّا رَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَ يَقُولُونَ هَلۡ إِلَىٰ مَرَدّٖ مِّن سَبِيلٖ ٤٤ وَتَرَىٰهُمۡ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا خَٰشِعِينَ مِنَ ٱلذُّلِّ يَنظُرُونَ مِن طَرۡفٍ خَفِيّٖۗ وَقَالَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ وَأَهۡلِيهِمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ أَلَآ إِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ فِي عَذَابٖ مُّقِيمٖ ٤٥ ﴾ [الشورا: ٤٤، ٤٥]
“আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তারপর তার জন্য কোন অভিভাবক নেই। আর তুমি যালিমদেরকে দেখবে, যখন তারা আযাব প্রত্যক্ষ করবে তখন বলবে, ‘ফিরে যাওয়ার কোন পথ আছে কি’? তুমি তাদেরকে আরো দেখবে যে, তাদেরকে অপমানে অবনত অবস্থায় জাহান্নামে উপস্থিত করা হচ্ছে, তারা আড় চোখে তাকাচ্ছে। আর কিয়ামতের দিন মুমিনগণ বলবে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত যারা নিজদের ও পরিবার-পরিজনের ক্ষতি সাধন করেছে। সাবধান! যালিমরাই থাকবে স্থায়ী আযাবে।” [সূরা : আশ্-শূরা: ৪৪-৪৫]
যে সব আমল স্পষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন করে সে সব আমল সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤ ﴾ [النساء: ١٤]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।” [সূরা আন-নিসা: ১৪]
﴿ أَلَمۡ يَعۡلَمُوٓاْ أَنَّهُۥ مَن يُحَادِدِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَأَنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدٗا فِيهَاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡخِزۡيُ ٱلۡعَظِيمُ ٦٣ ﴾ [التوبة: ٦٣]
“তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, তবে তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা মহালাঞ্ছনা।” [আত্-তাওবা: ৬৩]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿ وَمَن يَتَّخِذِ ٱلشَّيۡطَٰنَ وَلِيّٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ فَقَدۡ خَسِرَ خُسۡرَانٗا مُّبِينٗا ١١٩ ﴾ [النساء: ١١٩]
“আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা তো স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হল।” [সূরা আন-নিসা: ১১৯]
﴿ وَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلۡإِيمَٰنِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٥ ﴾ [المائدة: ٥]
আর যে ঈমানের সাথে কুফরী করবে, অবশ্যই তার আমল বরবাদ হবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [আল-মায়েদা: ৫]
আল্লাহ তা ‘আলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন যে, দুনিয়া ও আখেরাতের মহা ক্ষতি ও ব্যর্থতার কারণ হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা। [7]
You must be logged in to post a comment.