বিদআত সম্পর্কে একটি গুরুত্বপুর্ণ আলোচনাঃ


বিদআত সম্পর্কে একটি গুরুত্বপুর্ণ আলোচনাঃ

image
বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা। যিনি আমাদেরকে তাঁর আনুগত্য করার আদেশ দিয়েছেন এবং সকল প্রকার বিদআত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আনুগত্য ও আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করার জন্য প্রেরিত আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর পরিবার, সাথী এবং সকল অনুসারীদের উপর।

বিদআতের সংজ্ঞাঃ

বিদআত শব্দটি আরবী البدع)) শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ হল পূর্বের কোন দৃষ্টান্ত ও নমুনা ছাড়াই কোন কিছু সৃষ্টি ও উদ্ভাবন করা। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ

অর্থঃ পূর্বের কোন নমুনা ব্যতীত আল্লাহ তায়া’লা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। (সূরা বাক্বারাঃ ১১৭)
তিনি আরো বলেন,

قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنْ الرُّسُلِ

অর্থঃ হে নবী! আপনি বলে দিন, আমি প্রথম রাসূল নই। (সূরা আহ্‌ক্বাফঃ ৯) অর্থাৎ মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে আমিই প্রথম রেসালাতের দায়িত্ব নিয়ে আসিনি বরং আমার পূর্বে আরো অনেক রাসূল আগমণ করেছেন।

ইসলামের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দ্বীনের মধ্যে এমন বিষয় তৈরী করা, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে ছিলনা বরং পরবর্তীতে উদ্ভাবন করা হয়েছে।

বিদআতের প্রকারভেদঃ
বিদআত প্রথমতঃ দু’প্রকারঃ-
(১) পার্থিব বিষয়ে বিদআত এবং
(২) দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত।

পার্থিব বিষয়ে বিদআতের অপর নাম নতুন আবিষ্কৃত বিষয়। এ প্রকার বিদআত বৈধ। কেননা দুনিয়ার সাথে সম্পর্কশীল সকল বিষয়ের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা বৈধ। তবে শর্ত হল তাতে শরঈ কোন নিষেধ না থাকা। দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা হারাম। কারণ দ্বীনের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা অহীর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দ্বীনের সমস্ত বিধান কুরআন ও সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করতে হবে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় তৈরী করবে যা তার অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। তিনি আরও বলেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যে বিষয়ে আমাদের অনুমোদন নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে।
দ্বীনের ব্যাপারে বিদআতের প্রকারভেদঃ

দ্বীনের মধ্যে বিদআত দু’প্রকার। (১) বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত এবং (২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত।
১) বিশ্বাসের ভিতরে বিদআত। যেমন যাহমীয়া, মু’তাযেলা, রাফেযী এবং অন্যান্য সকল বাতিল ফির্কার আকীদা সমূহ।
২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত। যেমন আল্লাহ আদেশ দেন নি, এমন বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা। এটা আবার কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যেমনঃ- (১) নতুন কোন ইবাদত আবিষ্কার করা, (২) শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে বৃদ্ধি করা, (৩) শরীয়ত সম্মত ইবাদত বিদআতী নিয়মে পালন করা এবং (৪) শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করা, যা শরীয়তে নির্ধারিত নয়।
প্রথম প্রকারঃ
এমন নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা, ইসলামী শরীয়তের মাঝে যার কোন ভিত্তি নেই। যেমন নতুন কোন নামায, রোজা এবং ঈদে মীলাদুন্‌ নবী ও অন্যান্য নামে বিভিন্ন ঈদের প্রচলন করা।
দ্বিতীয় প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি করা অথবা হ্রাস করা। যেমন কোন ব্যক্তি আছর কিংবা যোহরের নামায এক রাকাত বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে আদায় করল।
তৃতীয় প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদাত বিদআতী নিয়মে পালন করা। যেমন হাদীছে বর্ণিত জিকিরের বাক্যগুলি দলবদ্ধভাবে সংগীতাকারে। D‰”Pt¯^‡i পাঠ করা। কিংবা ইবাদত পালনে নফসের উপর এমন কষ্ট দেয়া, যা রাসূল (সাঃ)এর সুন্নাতের বিরোধী।
চতুর্থ প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে এমন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে আদায় করা, যা শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। যেমন শাবান মাসের ১৫তারিখ দিনের বেলা রোজা রাখা এবং রাতে নির্দিষ্ট নামায আদায় করা। মূলতঃ রোজা ও নামায শরীয়ত সম্মত ইবাদত। কিন্তু ইহাকে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে খাছ করার কোন দলীল নেই। রোজা নির্দিষ্ট মাস এবং নামায নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিটি ইবাদত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে। কিন্তু শাবান মাসের ১৫তারিখে দিনের বেলা রোজা রাখা এবং সারা রাত নফল নামায আদায় করা নিশ্চিতভাবে বিদআত। কারণ এ সম্পর্কে কোন সহীহ দলীল নেই।

দ্বীনের মধ্যে বিদআতের বিধানঃ

দ্বীনের ব্যাপারে সকল প্রকার বিদআতই হারাম ও গোমরাহী।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছেন,

وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ) رواه أبو داود والترمذى وقال حديث حسن صحيح

“তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”।
[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬, তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম তাঁর এক খুতবায় বলেছেন:

إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ. رواه مسلم والنسائى واللفظ للنسائى

“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্‌র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।
সুত্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।

*যে ব্যক্তি বিদআতের উদ্ভাবন ও প্রচার করবে যত বড় হুজুর বা মুফতি বা আলেম ই হোন না কেন তার সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন,

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ

অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন বিষয় তৈরী করবে, যা তার অন্তর্গত নয়, তা প্রত্যাখ্যত হবে। – সহিহ বুখারী ও মুসলিম

*যে ব্যক্তি বিদআতী আমল করবে সে যত বড় হুজুর বা মুফতি বা আলেম ই হোন না কেন তার সম্পর্কে রাসুল (সা:) বলেন,

مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যার মধ্যে আমাদের আদেশ নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে। – সহিহ বুখারী ও মুসলিম

বিদআত সংক্রান্ত হাদিসের বাংলা অনুবাদ সমূহ:
****************************
* আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“যে আমাদের এ ধর্মে এমন কোন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে যা ধর্মে অন্তর্ভুক্ত ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত হবে”।-[বুখারী ও মুসলিম]

* রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“আমাদের এ ধর্মে যে নতুন কোন বিষয় প্রচলন করবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।”-[বুখারী ও মুসলিম]

* আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,” আল্লাহ্‌ বলেছেন, তোমারা সাহাবীগণের হুবহু অনুসরন করবে, মনগড়া ইবাদত উদ্ভাবন করবে না। তোমাদের এই দায়িত্ব পালন করে দেওয়া হয়েছে। দীন পালনের জন্য নতুন কোন পদ্ধতি উদ্ভাবনের কোন প্রয়োজন তোমাদের নেই; কারন দীন শিক্ষা দেওয়া ও তা পালন করার পদ্ধতিসমূহ রাসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ পুরোপুরি আদায় করে গিয়েছেন। তোমাদের দায়িত্ব হল হুবহু তাঁদের অনুকরন ও অনুসরন করা।”-[বুখারী ও মুসলিম]

* রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,”যে ব্যক্তি কোন বিদআতিকে সাহায্য করে, আল্লাহ্‌ তাকে লানত করেন।”-[মুসলিম]

* “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।”-[মুসলিম]

* রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“আমি তোমাদেরকে আমার এবং আমার পরবর্তী সঠিক পথপ্রাপ্ত খলীফাদের অনুসরণের ব্যাপারে তাগিদ দিচ্ছি; তোমরা একে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাক। [দ্বীনের মধ্যে] নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সাবধান হও, কেননা প্রতিটি নবোদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত, এবং প্রতিটি বিদাতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।”-[আহমাদ, তিরমিযী]

* রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সাবধান ! ধর্মে প্রবর্তিত নতুন বিষয় থেকে সর্বদা দূরে থাকবে। কেননা নব-প্রবর্তিত প্রতিটি বিষয় হল বেদআত ও প্রতিটি বেদআত হল পথভ্রষ্ঠতা।”-[আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ]

* রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“শুনে রাখো! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রাখো! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব: হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগী, আমার অনুসারী। কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে? তিনি উত্তর দেবেন: আপনি জানেন না, আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিস্কার করেছে।”-[ইবনে মাজাহ]

* রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন বললেন,”তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে যখন বিদ’আত তোমাদেরকে এমনভাবে ঘিরে নেবে যে এই বিদ’আত করতে করতে তোমাদের যুবকেরা বৃদ্ধ হবে, আর এই বিদ’আত করতে করতে ছোটরা বড় হবে এবং মানুষ এটাকে (অর্থাৎ এই সব বিদ’আত কে) সুন্নাত হিসাবে গ্রহন করবে। আর যদি কেউ এই বিদ’আত এর কিছু ত্যাগ করে, তখন তাকে বলা হবে, ‘তুমি কি একটা সুন্নাত ত্যাগ করলে ?”;সাহাবীগন (রা) জিজ্ঞাসা করলেনঃ ”কখন এমনটা হবে??”;তিনি (স:) বললেনঃ যখন (হকপন্থি) আলিমদের মৃত্যু হয়ে যাবে, ক্বারিদের (reciters) সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, দীন এর বুঝ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা হবে খুবই অল্প, নেতা/মাতবরদের সংখ্যা বাড়বে, বিশ্বস্ত মানুষ হবে খুবই কম, দীন এর কাজের মধ্যে মানুষ দুনিয়ার লাভ খুঁজবে,এবং দীনী ‘ইলম বাদ দিয়ে বাকি অন্যান্য জ্ঞান অন্বেষণ করা হবে”-[সুনান আদ-দারেমি (১/৬৪),দুটি ভিন্ন সনদে, প্রথমটি সাহিহ এবং দ্বিতীয়টি হাসান (আলবানি); হাকিম (৪/৫১৪)]

* সাহাল বিন সাদ (রা.) বলেনে,”আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে,(যখন আমি হাউজে কাউসারের পানি পান করাব তখন) “অবশ্যই আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে যাদের আমি চিনি, এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অত:পর তাদের ও আমার মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি (ফেরেস্তাদের) বলব-এরাতো আমার উম্মত!” তখন আমাকে বলা হবে-আপনি জানেন না যে, তারা আপনার পর কি সব নতুন নতুন কাজের আবিস্কার করেছে। অত:পর আমি বলল-”যারা আমার পর আমার দ্বীনের পরিবর্তন সাধন করেছে, তারা দূর হোক, তারা দূর হোক।”-[বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৬৬৪৩]

উপরের হাদীছগুলোর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের মধ্যে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই হারাম ও গোমরাহী। তবে এ হারাম বিদআতের প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বিদআতের কিছু কিছু প্রকার প্রকাশ্য কুফরীরই নামান্তর। যেমন কবরবাসীদের নৈকট্য হানিসলের উদ্দেশ্যে কবরের চতুর্দিকে কাবা ঘরের তাওয়াফের ন্যায় তাওয়াফ করা, কবরের উদ্দেশ্যে পশু যবাই করা, নযর-মান্নত পেশ করা, কবরবাসীর কাছে দু’আ করা, তাদের কাছে আশ্রয় চাওয়া ইত্যাদি। এমন কিছু বিদআতও রয়েছে, যা শির্ক না হলেও মানুষকে শির্কের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কবরের উপর মিম্বার তৈরী করা, কবর উঁচু করা, পাকা করা, কবরের উপর লিখা, কবরের কাছে নামায আদায় করা, দু’আ করা ইত্যাদি। এমন কিছু বিদআতও আছে, যা শির্ক বা তার মাধ্যমও নয়, তবে সঠিক আকিদার পরিপন্থী ও বহির্ভুত। যেমন খারেজী, ক্বাদরীয়াও মুর্জিয়াদের আকিদাহ সমূহ। তাছাড়া এমন কিছু বিদআত রয়েছে, যা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত যেমন বৈরাগী হয়ে সংসার ত্যাগ করা, সূর্যের উত্তাপে দাড়িয়ে রোজা পালন করা এবং যৌন উত্তেজনা দমন করার জন্য খাসী হয়ে যাওয়া।

একটি সতর্কতাঃ
আমাদের দেশের কিছু কিছু আলেম বিদআতকে হাসানা এবং সাইয়েআ এদু’ভাগে ভাগ করে থাকে। বিদআতকে এভাবে ভাগ করা সম্পূর্ণ ভুল এবং রাসূল (সাঃ)এর হাদীছের সম্পূর্ণ বিপরীত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। আর এই শ্রেণীর আলেমগণ বলে থাকে, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী নয়। বরং এমন কিছু বিদআত রয়েছে, যা হাসানা বা উত্তম বিদআত। হাফেয ইবনে রজব (রঃ) বলেন, “প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী” এটি একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু পরিপূর্ণ বাক্য। এখানে প্রতিটি বিদআতকেই গোমরাহী বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) বিদআতের কোন প্রকারকেই হাসানা বলেন নি। এই হাদীছটি দ্বীনের অন্যতম মূলনীতির অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর রাসূলের বাণী “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করল, যা আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।” অতএব যে ব্যক্তি কোন নতুন বিধান রচনা করে দ্বীনের মাঝে প্রবেশ করিয়ে দিবে, তা গোমরাহী বলে বিবেচিত হবে। তা থেকে দ্বীন সম্পূর্ণ মুক্ত। চাই সে বিষয়টি বিশ্বাসগত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হোক অথবা প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য আমলগত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হোক।
সুতরাং বিদআতে হাসানার পক্ষে মত প্রকাশকারীদের কোন দলীল নেই। কিছু লোক তারাবীর নামাযের ব্যাপারে উমার (রাঃ) এর উক্তি এটি কতই না উত্তম বিদআত এ কথাটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তারা আরও বলেন, এমন অনেক বিদআত আবিষকৃত হয়েছে, যা সালাফে সালেহীনগণ সমর্থন করেছেন। যেমন গ্রন্থাকারে কুরআন একত্রিত করণ, হাদীছ সঙ্কলন করণ ইত্যাদি।

উপরোক্ত যুক্তির উত্তর এই যে, শরীয়তের ভিতরে এ বিষয়গুলোর মূল ভিত্তি রয়েছে। এগুলো নতুন কোন বিষয় নয়। উমার (রাঃ) এর কথা, “এটি একটি উত্তম বিদআত”, এর দ্বারা তিনি বিদআতের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বিদআত বলা হয়, সে অর্থ গ্রহণ করেন নি। মৌলিকভাবে ইসলামী শরীয়তে যে বিষয়ের অস্তিত্ব রয়েছে, তাকে বিদআত বলা হয়নি। এমন বিষয়কে যদি বিদআত বলা হয়, তার অর্থ দাড়ায় জিনিষটি শাব্দিক অর্থে বিদআত, পারিভাষিক অর্থে বিদআত নয়। সুতরাং শরীয়তের পরিভাষায় এমন বিষয়কে বিদআত বলা হয়, যার পক্ষে কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

আর গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলনের পক্ষে দলীল রয়েছে। নবী (সাঃ) কুরআনের আয়াতসমূহ লিখার আদেশ দিয়েছেন। তবে এই লিখাগুলো একস্থানে একত্রিত অবস্থায় ছিলনা। তা ছিল বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। সাহাবাগণ তা এক গ্রন্থে একত্রিত করেছেন। যাতে কুরআনের যথাযথ হেফাযত করা সম্ভব হয়।
তারাবীর নামাযের ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবাদেরকে নিয়ে জামাতবদ্বভাবে কয়েকরাত পর্যন্ত তারাবীর নামায আদায় করেছেন। ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পরবর্তীতে ছেড়ে দিয়েছেন। আর সাহাবাগণের প্রত্যেকেই রাসূল (সাঃ) এর জীবিতাবস্থায় ও মৃত্যুর পর একাকী এ নামায আদায় করেছেন। পরবর্তীতে উমার (রাঃ) সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্রিত করেছেন, যেমনিভাবে তাঁরা রাসূল (সাঃ) এর পিছনে তাঁর ইমামতিতে এ নামায আদায় করতেন। তারাবির সালাত রাসুল (সাঃ) তিন রাত্রি সাহাবীদের নিয়ে এক সাথে জামায়াত করেই আদায় করেছেন। সহিহ বুখারিতে তা স্পষ্টই আছে। বাকি রাত্রগুলো রাসুল (সাঃ) একাকী পড়েছেন। কিন্তু সাহাবীরা মসজিদে বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে আলদা আলদা ভাবে তারাবিহ পড়তেন। অর্থাত বিক্ষিপ্ত ভাবে একাধিক জামায়াত হত। উমর (রাঃ) শুধুমাত্র সকল বিক্ষিপ্ত জামায়াতকে একত্রিত করে দিয়েছেন একজন ইমামের পিছনে। এই জাময়াত বদ্ধ হওয়া কিন্তু নতুন ছিল না। তাই ইহা বিদআত নয়।

হাদীছ লিখিতভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারেও দলীল রয়েছে। রাসূল (সাঃ) কতিপয় সাহাবীর জন্য তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীছ লিখে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণ দেয়ার পর আবু শাহ নামক জনৈক সাহাবী রাসূল (সাঃ) এর কাছে ভাষণটি লিখে দেয়ার আবেদন করলে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, اكتبوا لأبى شاه)) অর্থাৎ আবু শাহের জন্য আমার আজকের ভাষণটি লিখে দাও। তবে রাসূল (সাঃ)এর যুগে সুনির্দিষ্ট কারণে ব্যাপকভাবে হাদীছ লিখা নিষেধ ছিল। যাতে করে কুরআনের সাথে হাদীছ মিশ্রিত না হয়ে যায়। পরবর্তীতে যখন রাসূল (সাঃ) ইন্তেকাল করলেন এবং কুরআনের সাথে হাদীছ মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূরিভুত হলো, তখন মুসলমানগণ হাদীছ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য তা লিখার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। যারা এ মহান কাজে আঞ্জাম দিয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা উত্তম বিনিময় দান করুন। কারণ তারা আল্লাহর কিতাব এবং নবী (সাঃ)এর সুন্নাতকে বিলুপ্তির আশংকা থেকে হেফাজত করেছেন।

উল্লেখিত হাদিসগুলো সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম ও আবু দাউদ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে।

”শাইখ সালেহ ফাওজান” কর্তৃক রচিত!

বিদআতীদেরকে শক্তি প্রয়োগ করে ঠেকানো সম্ভব না হলে বিদআতী এবং তাদের অনিষ্টতা হতে মানুষকে সতর্ক করা আবশ্যক। আর শক্তি প্রয়োগ করার সুযোগ থাকলে মুসলিম সমাজের আলেমদের এবং শাসকদের উচিৎ শক্তি প্রয়োগ করে বিদআত প্রতিহত করা ও বিদআতীদেরকে শাস্তি দেয়া। কেননা তারা ইসলামের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জেনে রাখা উচিৎ যে, কুফরী রাষ্টসমূহ বিদআতীদেরকে তাদের বিদআত প্রচারে উৎসাহ এবং বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করে থাকে। তারা এটাকে ইসলাম ধ্বংসের অন্যতম মাধ্যম মনে করে।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁর দ্বীনকে বিজয় দেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে অপমানিত করেন। নবী (সাঃ), তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাথীদের উপর শান্তির ধারা বর্ষিত হোক।

– অনুবাদ করেছেন আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ, জুবাইল দা’ওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব |
সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত|

সমাজে প্রচলিত কিছু কথা ও যুক্তির খণ্ডনঃ
********************************
মাদ্রাসা নির্মান বিদআতে হাসানাহ কিনা?
———————————————–
মাদ্রাসা নির্মান পার্থিব জীবনে দুনিয়ার ক্ষেত্রে মানুষের দ্বীন শিক্ষা সহজ করার ক্ষেত্রে বিদআতে হাসানাহ অর্থাৎ উত্তম নব উদ্ভাবন। পুর্বে মসজিদেই
দ্বীন শিক্ষা দেওয়া হত। এমনকি বর্তমানেও আরবে বিভিন্ন মসজিদে বসেই দ্বীন শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন শায়খগণ।
আলাদা ধর্মিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানের মাধ্যমে মূলত ছাত্রদের পার্থিব জীবনে দ্বীন শিক্ষাকে সহজ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের কোন বিধান বা রাসুল (সাঃ) এর কোন নির্দেশের বিপরীত করা হয়নি। তাই এটা দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত নয়।
যারা মাদ্রাসাকে দ্বীন ইসলামের মধ্যে বিদআতে হাসানাহ বলে তারা ভুল বলেন। মাদ্রাসায় কুরআন হাদিস শিক্ষা করা আর গাছ তলায় কুরআন হাদিস শিক্ষা করা একই কথা। এখানে মুল উদ্দেশ্য কুরআন হাদিস শিক্ষা তা পাকা দালানে বসে হোক আর গাছের ছায়ায় হোক।
মাইক ব্যবহার কি বিদআতে হাসানাহ?
মাইক হচ্ছে একটা যন্ত্র যা আওয়াজকে বৃদ্ধি করে দূরে পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মাইক দিয়ে আযান দিলে সওয়াব বাড়েও না কমেও না। মাই কব্যবহার ইসলামে অপরিহার্যও নয়। দেখুন ফজরের সালাতে যে সকল মসজিদে মাত্র এক দুই কাতার হয় সেখানে কিন্তু মাইক ব্যবহার করা হয় না কারন মুখের আওয়াজই যথষ্ঠ।
কেউ যদি বলে মাইকে আজান দিলে, মাইকে সুরা কেরাত পড়লে বেশি নেকি তাহলে তখন সেই বিশ্বাসের কারনে তা দ্বীনের মধ্যে বিদআত হয়ে যাবে।
মিলাদ পড়া কেন দ্বীনের মধ্যে বিদআতে হাসানাহ নয়?
মিলাদ তাঁবে- তাঁবেইন দের যুগ পর্যন্ত ছিলইনা। মিলাদ পড়া হয় সওয়াব হবে এই আশায় অর্থাৎ এটাকে একটা ইবাদত মনে করা হয় যার পক্ষে রাসুল (সাঃ) থেকে কোন নির্দেশনা নেই তা-ই এটা বিদআত। আর দ্বীনের মধ্যে বিদআতে হাসানাহ বলে কোন ভাগ নেই। প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী পরিণাম জাহান্নাম।
সালাত শেসে সম্মিলিত মুনাজাত করলে দোষ কি এটা তো ভাল কাজ

মাইক ব্যবহার কি বিদআতে হাসানাহ?
———————————————–
মাইক হচ্ছে একটা যন্ত্র যা আওয়াজকে বৃদ্ধি করে দূরে পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মাইক দিয়ে আযান দিলে সওয়াব বাড়েও না কমেও না। মাই কব্যবহার ইসলামে অপরিহার্যও নয়। দেখুন ফজরের সালাতে যে সকল মসজিদে মাত্র এক দুই কাতার হয় সেখানে কিন্তু মাইক ব্যবহার করা হয় না কারন মুখের আওয়াজই যথষ্ঠ।
কেউ যদি বলে মাইকে আজান দিলে, মাইকে সুরা কেরাত পড়লে বেশি নেকি তাহলে তখন সেই বিশ্বাসের কারনে তা দ্বীনের মধ্যে বিদআত হয়ে যাবে।

রাসুল (সাঃ) কোনদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করে দাওয়াত দেন নাই তাহলে ইন্টারনেট এ দাওয়াত দেওয়া দ্বীনের মধ্যে বিদাত নয় কেন? এটা কি বিদাতে হাসানাহ নয় ?
——————————————————————–
ইন্টারনেট হচ্ছে দুনিয়ার ক্ষেত্রে বিদাতে হাসানাহ বা সায়িয়াহ। ইন্টারনেট এর ভালো ব্যবহার হচ্ছে হাসানাহ আর মন্দ ব্যবহার হচ্ছে সায়িয়াহ। ইন্টারনেট এ রাসুল (সাঃ) দাওয়াত দেন নি এটা সত্য। রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে দ্বীনের মধ্যে এমন কাজ যা তাঁর নির্দেশিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। ইন্টারনেট এ দাওয়াত দেওয়াটা দ্বীনের অংশ নয়। এটা দুনিয়ার একটা ব্যবস্থা মাত্র। এর মধ্যে দাওয়াত সহজে পৌছানো যাচ্ছে। এটা বুঝার জন্য এভাবে উদাহরণ দেয়া যায় যে, একটা লোককে ইমেইল পাঠিয়ে বিদাত কাকে বলে তা জানানো হলো। অতএব তার কাছে দাওয়াত পৌছানো হলো। অথবা লোকটার কাছে গিয়ে সামনে বসে বিদাত কাকে বলে তা শিখানো হলো অর্থাত দাওয়াত দেওয়া হলো। এখানে কিন্তু ইন্টারনেট বা সামনা সামনি বিষয়টা সওয়াব আনে না বরং ”দাওয়াত” সওয়াব টেনে আনে। এখন যেই লোক অনেক অনেক দুরে তাহকে তার কাছে ইমেল পাঠিয়ে সহজে দাওয়াত দেওয়া যায়। দাওয়াত দেওয়ার কারণে এখানে সওয়াব নির্ভর করবে ইন্টানেট বা কোনো মাধ্যম ববহার নয়।

রাসুল (সাঃ) চিঠি পাঠিয়ে রাজা বাদশাহদের ইসলামের দাওয়াত দিতেন। আজকে চিঠির উন্নত ভার্সন হচ্ছে মেইল বা এ জাতীয় যা কিছু আছে। অতএব ইন্টারনেট হচ্ছে পার্থিব বিদাত এবং এর ভালো ব্যবহার হচ্ছে বিদাতে হাসানাহ।
কেউ যদি মনে করে ইন্টারনেট এ দাওয়াত দিলে ১ নেকি আর মুখে মিখে দাওয়াত দিলে ৫ নেকি তখন তার এই বিশ্বাসের কারণে তখন সেটা দ্বীনের মধ্যে বিদাত হয়ে যাবে।

একই ব্যাখ্যা বাস, ট্রেন, রেলগাড়ি, কম্পিটার, প্রিন্টার, মাইক্রোফোন, ভিডিও লেকচার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
———————————————–
দুনিয়াবী প্রয়োজনে যে সকল আবিস্কার হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করা সোয়াবের অংশ নয় । উটে চড়লে সওয়াব আছে ট্রেনে চড়লে সওয়াব নাই এমন কথা নাই। ইন্টারনেট ব্যবহার করলে কোনো সয়াব বারে কমে না। মাইক ব্যবহার করলেও সয়াব বাড়ে কমে না। এগুলো দুনিয়ায় সুবিধাগত উপকরণ মাত্র। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। দুনিয়ার প্রয়োজনে বিদাত আর দ্বীনের মধ্যে মধ্যে বিদাত ভিন্ন বিষয়।

মিলাদ পড়া কেন দ্বীনের মধ্যে বিদআতে হাসানাহ নয়?
————————————————–
মিলাদ রাসুল (সাঃ), সাহাবী, তাবেই, তাবে- তাঁবেইন দের যুগ পর্যন্ত ছিলইনা। মিলাদ পড়া হয় সওয়াব হবে এই আশায় অর্থাৎ এটাকে একটা ইবাদত মনে করা হয় যার পক্ষে রাসুল (সাঃ) থেকে কোন নির্দেশনা নেই তা-ই এটা বিদআত। আর দ্বীনের মধ্যে বিদআতে হাসানাহ বলে কোন ভাগ নেই। প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী পরিণাম জাহান্নাম।

মিলাদ অর্থ জন্মানুষ্ঠান। মিলাদুন নবী মানে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্ম দিন উপলক্ষে বাত্সরিক উত্সব। রাসুল (সাঃ) তাঁর জন্মের শুকরিয়া হিসেবে সোমবার ব্যক্তিগত সিয়াম পালন করতেন। এই সোমবারের সিয়াম সাহাবের নিয়ে একত্রে পালন করতেন বা কোনো সাহাবীকে এই সোমবার সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রমান নেই। এবং তিনি বাত্সরিক কোনো উত্সব বা কোনো সাহাবী রাসুল (সাঃ) এর জন্মদিন উপলক্ষে কোনো উত্সব পালন করেছেন এর কোনই প্রমান নাই। আমার আপনার জন্ম দিন উপলক্ষে নিজেদের ব্যক্তিগত শুকরিয়া জ্ঞাপনে যার যার জন্ম দিনে স্ব স্ব ব্যক্তি সিয়াম পালন করতে পারে। কিন্তু আমার জন্মের দিনে আপনি উত্সব করবেন এমনটা শরীয়ত সম্মত নয় তা-ই তা বিদাত।

এই মিলাদ সম্পর্কে যারা দলিল উপস্থাপন করেন তারা তাদের মত ব্যাখ্যা ব্যতীত আর কিছুই তুলে ধরতে সক্ষম হয় না । রাসুল (সাঃ) সোমবার সিয়াম পালন করতেন সেটা তাঁর নিজের কৃতজ্ঞতা বোধ আল্লাহর প্রতি। আজকে যারা মিলাদুন নবীর কথা বলে তারা কিন্তু প্রতি সপ্তাহে সোমবারের কথা কিছুই বলে না। ভন্ডামি করে এই সোমবারের উদাহরণ পেশ করে বাত্সরিক মিলাদ করে থাকে।

সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করলে দোষ কি এটা তো ভাল কাজ এটাকে কেন আমরা বিদআত বলি?
—————————————————————–
নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্র ব্যতিত রাসুল (সাঃ) সাহাবিদেরকে নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত করেন নি। অতএব যে সকল ক্ষেত্রে তিনি করেননি সে সকল ক্ষেত্র ব্যতীত বাকি ক্ষেত্রে যেখানে আমরা তা করছি সেটাই বিদাআত। সালাম ফিরিয়ে রাসুল (সাঃ) কোনদিন সাহাবিদেরকে নিয়ে একত্রে সম্মিলিত মুনাজাত করেন নাই। এখন যারা বা যে সকল আলেমগণ হুজুরগণ এই কাজটি করছেন তারা কিন্তু সওয়াব হয় মনে করেই এই মুনাজাত করছেন। অতএব সওয়াবের আশায় এমন কাজ যা রাসুল (সাঃ) নির্দেশিত নয় তা তো প্রত্যাখ্যাত ! অতএব তা বিদআত।

শবে মেরাজ, শবে বরাত এর রাত জেগে ইবাদত এ সমস্যা কোথায়?
—————————————————————
এগুলো বিদাত। কারণ এই রাত্রগুলোতে ইবাদত করার প্রমান রাসুল (সাঃ) থেকে সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত নয়। যে এমন রাসুল (সাঃ) নির্দেশিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত। শবে মেরাজ কোন রাত্রে সংঘটিত হয়েছিল তার তারিখ নির্দিষ্ট নয় অতএব কিভাবে অনির্দিষ্ট রাত্রে অনির্দেশিত ইবাদত বৈধ হতে পারে? যখন সোয়াবের আশায় এমন আমল করা হয় যার নির্দেশনা কুরআন সুন্নায় পাওয়া যায়না তখনই বিদাত হয়ে যাবে। একটা দুর্বল হাদিস দ্বারা শবে বরাতের ধারণা পাওয়া গেলেও সে রাত্রে যে ইবাদত করতে হবে তার কোনো প্রমান নেই। অর্থাত সে রাত্রে আলাদা বিশেষ কোনো ইবাদত করলে তা বিদাত হয়ে যাবে। উল্লেখ্য ইসলামে ”লায়লাতুল” শব্দের ব্যবহার আছে ”শবে” শব্দের ব্যবহার নেই। এই ”শবে” শব্দটি ফার্সি। আর পারস্য তথা ইরান ইরাক হচ্ছে বিদাতের উত্পত্তির স্থল এবং কারখানা।

কবরে ফুল দেওয়া কি বিদাত?
—————————-
কবরে ফুল দেওয়াকে অনেকে বিদাতে সায়িয়াহ বা মন্দ বিদাত বলে থাকে। আসলে এই কবরে ফুল দেওয়া কখনো বিদাত এবং কখনো শিরক। দ্বীনের মধ্যে বিদাতের কোনো প্রকার নেই। হাসানাহ সায়িয়াহ সবই বিদাত।
রাসুল (সাঃ) দুটি কবরে খেজুরের ডাল পুতে দিয়েছিলেন সেটা ছিল রাসুল (সাঃ) এর সাথে খাস বা আলাদা। এটা রাসুল (সাঃ) এর মোজেজা আল্লাহর পক্ষ থেকে। ওই দিন ব্যতীত রাসুল (সাঃ) পরবর্তিতে অন্য কোনো দিন এই কাজ করেন নি। সাহাবী গণ কেউ কোনদিন কোনো কবরে এভাবে ডাল পুতে দেন নি। ওই ডালের যুক্তিতে এখন ফুল দেওয়া হয় এবং ইসলামিক স্কলারগণ একে বিদাত সাবস্ত করেছেন।

সাধারনভাবে কবরে ফুল দেওয়া তা-ই বিদআত। এখন কেউ যদি সম্মান করে কবরে ফুল ফেয় তাহলে তা হয়ে যাবে শিরক। কেউ যদি কবরে টাকা দেয় যে এই কবরের আওলিয়া বুঝি উপকার করবে আমার জন্য দুআ করবে তাহলে তা হবে শিরক। বড় শিরক।

তসবিহ দানা ব্যবহার কি বিদাত?
——————————-
এটা এমন একটা বিষয় যে এটা ক্ষেত্র বিশেষে বিদাত আবার ক্ষেত্র বিশেষে বিদাত নয়। যেহেতু রাসুল (সাঃ) থেকে নির্দেশনা রয়েছে ডান হাতের আঙ্গুলে তসবিহ গুনা তাই এটাই সুন্নাত। এটা করলে সয়াব আছে। পক্ষান্তরে তসবিহ দানা ব্যবহার করলে এই আঙ্গুলে গুনার সুন্নত পরিত্যাগ করা হয়। তাই এক্ষেত্রে এটা বিদাত।
তবে শায়খ উসায়্মিন তসবিহ ডানাকে ”বিদাত” সাব্যস্ত করেন নি কিন্তু এটাকে তিনি ভালোও বলেন নি। তসবিহ ব্যবহার করা থেকে আঙ্গুলে গুনা উত্তম। এমনিতে গুনার সুবিধার জন্য তসবিহ দানা ব্যবহারে খুব বড় কোনো ক্ষতি নেই। যেমন কেউ যদি মনে করে আঙ্গুলে গুনে ১০০ পর্যন্ত হিসাব রাখতে পারছিনা তাই আমি এটা ব্যবহার করি তখন এটা বিদাত সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। কিন্তু কেউ যদি তসবিহ কে সুন্নাহ মনে করে তখন তা স্পষ্টই বিদাত হয়ে যাবে।

আমরা উপযুক্ত দলিল এবং ব্যাখ্যা সহকারে বিদাত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনার চেষ্টা করেছি। আমাদের এ পোস্ট অনেকের কাজে লাগবে ইনশা আল্লাহ। কমেন্টে মন্তব্য করে এই পোস্ট কে আরো সম্বৃদ্ধ করতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে।