বিদায় মাহে রমজান… কিছু ভাবনা… কিছু করনিয়…


বিদায় মাহে রমজান… কিছু ভাবনা… কিছু করনিয়…

 

image

 

সম্মানিত ভ্রাতৃবৃন্দ, নিশ্চয় রমজান মাস নৈকট্য লাভ এবং গুনাহ থেকে পবিত্র হবার উত্তম সময়। এটি আপনাদের ও তাদের জন্য সাক্ষ্য হয়ে থাকবেযারা এ সময় নিজ কর্মসমূহ উত্তমরূপে সম্পাদন করে থাকে। যারা সৎ কর্ম সম্পাদন করার সুযোগ পেয়েছে তারা যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে। এবং উত্তম প্রতিদানের সুসংবাদ গ্রহণ করে। নিশ্চয় আল্লাহ উত্তম কর্ম সম্পাদন কারীকে প্রতিদান দান করবেন। আর যে ব্যক্তি পাপ কাজ করে তার তওবা করা উচিত। কেননা যিনি তওবা করেন আল্লাহ তার তওবা কবুল করে থাকেন।

আল্লাহ তাআলা আপনাদের জন্য রমজানের শেষের দিকে কিছু বাড়তি ইবাদতের বিধান দান করেছেন। সেগুলো তাঁর নৈকট্য লাভের পথকে সুগম করবে এবং আপনাদের ঈমানকে বৃদ্ধি করবে।

আল্লাহ তাআলা আরো নির্দেশ দিয়েছেন, সাদকাতুল ফিতর, তাকবীর ও ঈদের সালাত-এর।

ইরশাদ হচ্ছে,

]وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ[ (البقرة :185)

আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (সূরা বাকারা: ১৮৫)

তাকবীরের বাক্য হলো:

اللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ لاَ إلَهَ إَلاَّ الله ُ اللهُ أكْبَرُ اللهُ أكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

এ তাকবীর পুরুষদের জন্য উচ্চ:স্বরে পড়তে বলা হয়েছে।তাই তারা মসজিদে, বাজারে এবং নিজ বাড়ীতে উচ্চ:স্বরে তাকবীর পাঠ করবে। তাকবীর পাঠের সময় অবশ্যই অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব, তাঁর মর্যাদার কথা স্মরণে রাখবে। আরও স্মরণ করবে তাঁর অসংখ্য নেয়ামতকে এবং সে সব নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে সে তাকবীর পাঠ করছে। নারীরা তাকবীর পাঠ করবে অনৈচ্চ:স্বরে।

মানুষের অবস্থা বড়ই চমৎকার, প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি স্থানে যথাযথ সম্মানের সাথে তারা আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যাদা প্রকাশকরে থাকে। রমজান শেষ হওয়ার সময় তাঁর বড়ত্ব প্রকাশার্থে তাকবীর পাঠ করে থাকে।তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীলের গুঞ্জরণের মাধ্যমে আকাশ পর্যন্ত পৃথিবী মুখরিত করে তুলে। তারা আল্লাহ তাআলার রহমত কামনা করে ও তাঁর আযাবকে ভয় করে।

মহান আল্লাহ ঈদের দিন নিজ বান্দাদের উপর ঈদের নামাযের বিধান দান করেছেন।

আল্লাহর মহত্ব প্রকাশের এটি সর্বোত্তম পন্থা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন সকল মুসলমাকে ঈদের সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আরো নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

]يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُم (محمد : 33)

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূলের। আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না। [সূরা মুহাম্মাদ:৩৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে ঈদের দিন ঈদগাহে যাবার অনুমতি দিয়েছেন। তবে বাড়িতে যদি তাদের কোনো উত্তম কাজ থাকে তাহলে বাড়িতে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন।

এটি ঈদের নামাজের গুরুত্ব প্রমাণ করে, উম্মে আতীয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন বের হতে বলেছেন। তবে গোলাম, হায়েযগ্রস্তা ও অসুস্থদের কথা ভিন্ন। হায়েযগ্রস্তারা নামাজের স্থান হতে দূরে অবস্থান করবে। তারা মুসলমানদের ভাল কাজের সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের যাদের পরিধেয় বস্ত্র নেই তারা কি করবে। রাসূলুল্লাহ বললেন, তোমরা এক বোন অপর বোন থেকে নিয়ে পরিধান করবে। (বুখারী ও মুসলিম)

ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে খেজুর খাওয়া সুন্নত। ১টি, ৩টি, ৫টি এমনিভাবে বেজোড় সংখ্যায় আরো বেশি খেতে পারে।

আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন সর্ব প্রথম খেজুর আহার করতেন। আর খেজুর তিনি বেজোড় সংখ্যায় খেতেন। (আহমাদ ও বুখারী)

নবীজী অসুস্থতা, দূরত্ব বা এ জাতিয় কোনো ওজর না থাকলে ঈদের মাঠে পায়ে হেঁটে যেতেন । বাহনে চড়ে যেতেন না।

যেমন আলী ইবনে আবী তালেব রা. বলেছেন, ঈদের সুন্নত হলো, পায়ে হেটে ঈদগাহে যাওয়া। (তিরমিযী, হাসান)

পুরুষদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া ও উত্তম পোষাক পরিধান করা সুন্নত।

সহীহ বুখারীতে ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু চাকচিক্যময়- ঝলমলে একটি রেশমী পোষাক বাজার হতে ক্রয় করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে বললেন, আমি এটি ঈদের দিন পরার জন্য খরিদ করেছি। নবীজ বললেন, এটি তোমার জন্য বানানো হয়নি। কাপড়টি রেশমি হওয়াতে নবীজী এমনটি বলেছেন। কারণ রেশমি কাপড় ও স্বর্ণ ইসলামে পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।

ঈদের দিন নারীরা সুগন্ধি ব্যবহার ও সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে অর্থাৎ যথাযথ পর্দার সাথে নামাজের জন্য বের হতে পারবে। কেননা নারীরা পর্দার ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছে। এবং সুগন্ধি লাগিয়ে, সৌন্দর্য্য প্রকাশ করে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে আল্লাহ ভীতি ও তিনি উপস্থিত আছেন এমন মন নিয়ে নামাজ আদায় করবে। বেশি বেশিআল্লাহর যিকির করবে। তাঁর কাছে দোয়া করবে। তাঁর রহমতের আশা ওশাস্তিকে ভয় করবে।

সকল মানুষের সাথে একত্রে মসজিদে উপস্থিত হবে। মনে করবে যেন কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে উপস্থিত হচ্ছে। কেয়ামতের কথা স্মরণ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে। নিজ পাপের জন্য ক্ষমা চাইবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

]انْظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَلَلْآخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلاً[ (الاسراء:21)

অর্থাৎ, ভেবে দেখ, আমি তাদের কতককে কতকের উপর কিভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। আর আখিরাত নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহান এবং শ্রেষ্ঠত্বে বৃহত্তর। [সূরা বণি ইসরাঈল:২১]

আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিটি নেয়ামতে মুসলমানদের আনন্দিত হওয়া উচিত। রমজান মাস আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের মাঝে শীর্ষ পর্যায়ের একটি নেয়ামত। তাই এ রমজান প্রপ্তির কারণে তাদের খুশি হওয়া উচিত। আরো খুশি হওয়া উচিত, কারণ তারা রমজানের বদৌলতে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, সদকাসহ অন্যান্য ইবাদত করার সহজ সুযোগ পেয়েছে। এ খুশির পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করা উচিত।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

]قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ [(يونس: 58)

বল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম। [সূরা ইউনুস:৫৮]

রমজান মাস ছিল মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহর বড় একটি নেয়ামত। তাদের জন্য তাঁর দেয়া বড় একটি সুযোগ। ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় সম্পাদিত দিনের রোজা ও রাতের নামাজ ছিল কৃত গুনাহের কাফ্ফারা ও ভবিষ্যতে পাপ থেকে মুক্ত থাকার প্রশিক্ষণ স্বরূপ।

প্রিয় ভাইসব, রমজান মাস যদিও শেষ হয়ে গেছে, মুমিন ব্যক্তির আমল কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে শেষ হবে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

]وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ[ (الحجر:99)

অর্থাৎ, আর ইয়াকিন (মুত্যু) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।[

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

]يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ[ (آل عمران:102)

অর্থাৎ, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। যথাযথভাবে ভয়। আর (পরিপূর্ণ) মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।[সূরা আলে ইমরান:১০২]

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তাই মুমিন ব্যক্তি সময় থাকতেই আমল-ইবাদত অব্যহত রাখে।

সুতরাং রমজান মাস শেষ হয়ে গেলেও প্রকৃত মুমিন ব্যক্তির রোজার ইবাদাত কিন্তু শেষ হবে না। এটি সারা বছর চলতে থাকবে।

যেমন, শাওয়াল মাসের ছয় রোজা।

আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল অত:পর শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখল, সে যেন সারা জীবনই রোজা রাখল। (মুসলিম)

প্রতি মাসে তিন দিনের রোজা।

এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজান মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখা সারা জীবন রোজা রাখার ন্যায়। (মুসলিম)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার বন্ধুমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখারউপদেশ দিয়েছেন।

এ তিন দিনের রোজা আইয়ামে বীযে রাখা উত্তম। আইয়ামে বীয হলো, প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখ। (মুসলিম)

এ ব্যাপারে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, হে আবু যর! তুমি প্রতি মাসের তিন দিন রোজা রাখলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখবে। (নাসাঈ)

আরাফার দিনের রোজা

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরাফার দিন রোজা রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দিনে রোজা রাখলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

আশুরার দিনের রোজা

আশুরার দিনের রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, এ দিনের রোজা রাখলেপূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম (সাঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমজান মাসের পর কোন রোজা সবচে উত্তম ? উত্তরে রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহরম মাসের রোজা।

সাপ্তাহে সোম ও বৃহ:বারের রোজা

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সোমবার রোজা রাখার গুরুত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে বললেন, এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়ত দান করা হয়েছে। অর্থাৎ এদিনেই আমার উপর কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে অপর একটি বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজা নিয়মিত রাখতেন।

রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। তাই আমি ভাল মনে করি যে, আমার আমলটা আমি রোজাদার অবস্থায় আল্লাহর নিকট পেশ করা হোক। (তিরমিযি)

শাবান মাসের রোজা

সহিহ বুখারি ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান মাসের রোজা ছাড়া আর কোন মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখতে দেখিনি। আর শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি পরিমাণে রোজা রাখতে দেখিনি।

রমজান মাসে দিনের রোজার মত রাতের নামাজও আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। রমজান শেষ হয়ে গেলে যেমন প্রকৃত মুমিন বান্দাদের রোজার ধারা শেষ হয়ে যায় না। বরং বিভিন্নভাবে অব্যাহত থাকে। অনুরূপভাবে রমজানের রাতগুলো শেষ হয়ে গেলেও প্রকৃত মুমিন বান্দাদের রাতের ইবাদত- নামাজ, দোয়া, জিকির ইত্যাদি শেষ হয়ে যায় না বরং তাও অব্যাহত থাকে।

কেননা বছরের প্রতিটি রাতেই রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য ও আমলের মাধ্যমে নফল নামায পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

বুখারি শরীফে মুগীরা বিন শো’বা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরাতে এমনভাবে নফল নামায পড়তেন যে তাঁর পা ফুলে যেত। তাঁকে এ ব্যাপারে বলা হলে তিনি বলেন, আমি কি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হবো না?

আব্দুল্লাহ বিন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও,মানুষদেরকে খাদ্য খাওয়াও,আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চল এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় আর শান্তি ও নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কর। (তিরমিযি)

সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন, ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হল রাতের নামাজ।

রাতে অনেক নফল নামাজ আদায় করা যায়। দুই দুই রাকআত করে আদায় করবে। অতঃপর ভোর হয়ে যাবার আশঙ্ক্ষা দেখা দিলে এক রাকআত যুক্ত করে বিতর নামায আদায় করবে।

বুখারি ও মুসলিম শরীফে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হন। আর এ বলে বান্দাদের ডাকতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছ আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দান করব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।

উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যদি কোন মুসলিম বান্দা প্রত্যেহ ফরজ নামাজ ছাড়াও বারো রাকআত নামায আদায় করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। (মুসলিম)

নামাজ আদায়ান্তে আল্লাহর যিকির করা একটি উত্তম আমল। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন একান্ত উৎসাহ।আল্লাহ তাআলা বলেন,

]فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَاماً وَقُعُوداً وَعَلَى جُنُوبِكُم[ (النساء :103)

অর্থাৎ, অত:পর যখন তোমরা নামাজ আদায় করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর জিকির করবে।[সূরা নিসা: ১০৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামযখন নামায শেষে সালাম ফিরাতেন, তিনবার ইস্তেগফার পড়তেন। আর বলতেন,

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ.

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়,তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি আবর্তিত হয়। হে মহান সম্মান ও মহত্বের মালিক, তুমি আমাদের প্রতি বরকত নাযিল করেছ।

এ ব্যাপারে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ,৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলবে। তাহলে নিরানব্বই বার হল। অতঃপর একশত পূর্ণ করার জন্য একবার বলে,

لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.

অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তার কোন শরিক নেই। রাজত্ব তার জন্যই,তার জন্যই সকল প্রশংসা। আর তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। তাহলে সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ হলেও তা ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মুসলিম)

সম্মানিত ভাইয়েরা, আল্লাহর আনুগত্য প্রদর্শনে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালান। আর সকল প্রকার ত্রুটি ও গুনাহ থেকে দূরত্বে অবস্থান গ্রহণকরুন। তাহলে দুনিয়াতে উত্তম জীবন লাভ করবেন। আর মৃত্যুর পর লাভ করবেন অনেক পুরষ্কার ।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

]مَنْ عَمِلَ صَالِحاً مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. النحل:97

অর্থাৎ, যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব। [সূরা নাহল: ৯৭]

হে আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান ও সৎ আমলের উপর অটল থাকার তাওফীক দিন। উত্তম জীবন যাপন করার সুযোগ দান করুন। আর আমাদেরকে সৎকর্মশীল মানুষের সাথে সঙ্গ লাভ করার তাওফীক দান করুন।

রচনায় :- ইকবাল হুছাইন মাছুম

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে।