কল্যাণকর কাজে উদ্বুদ্ধকারী কতিপয় হাদীস


কল্যাণকর কাজে উদ্বুদ্ধকারী কতিপয় হাদীস

image

 

 

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। সওয়াব অর্জনের ক্ষেত্র অনেক এবং ভাল ও উত্তম কাজের প্রতিদান বিরাট।
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى الله ُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِيْمَا يَرْوِىْ عَن رَّبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ: إِنَّ اللهَ كَتَبَ الحَْسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ ثُّمَّ بَيَّنَ ذَلِكَ فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا الله ُلَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً. رواه البخاري -৬০১০ ، ومسلم- ১৮৭
“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা ভাল ও মন্দ উভয়টিকে লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেন : ‘যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজ করার ইচ্ছা করে অথচ তা এখনও বাস্তবে পরিণত করেনি, তার জন্য আল্লাহ নিজের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন।” [বুখারী ৬০১০, মুসলিম ১৮৭ (২৪৬)]

যে ব্যক্তি নেকির কাজে নির্দেশ প্রদান করবে এবং এ কাজের জন্য উপদেশ ও পথ-প্রদর্শন করবে তার জন্য বিরাট সওয়াব রয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
مَنْ دَعَا إِلى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُوْرِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْئاً، وَمَنْ دَعَا إِلى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الِإثْمِ مِثْلَ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا. رواه مسلم- ৪৮৩১
“যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য এ পথের অনুসারীদের বিনিময়ের সমান বিনিময় রয়েছে। এতে তাদের বিনিময় কিছুমাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকে, তার উক্ত পথের অনুসারীদের গুনাহের সমান গুনাহ হবে, এতে তাদের গুনাহ কিছুমাত্র কম হবে না।” [ মুসলিম, হাদীস নং – ৪৮৩১]

নীচের হাদীসগুলো থেকে সওয়াবের কিছু ক্ষেত্র উল্লেখ করা হল:

১- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وَضُوْئِيْ هَذَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لَا يُحْدِثُ فِيْهِمَا نَفْسَهُ غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ . رواه البخاري ১৫৯ومسلم ৩৩১
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার এই ওজুর ন্যায় ওজু করার পর একাগ্রচিত্তে দু’রাকাত (নফল) নামাজ পড়বে এবং অন্য কোন ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না, তার পূর্বকৃত সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। ” [ বুখারী ১৫৯, মুসলিম – ৩৩১ ]

২- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ ثَابَرَ عَلَى ثِنْتَيْ عَشَرَةَ رَكْعَةً فِيْ الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ دَخَلَ الْجَنَّةَ ؛ أَرْبَعاً قَبْلَ الظُّهْرِ؛ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا؛ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ؛ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ؛ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْفَجْرِ. صحيح الترغيب ৫৮০ وصحاح السنن الترمذي ৩৩৮ والنسائي১৬৯৩ وابن ماجة ৯৩৫ للألباني
২. রাসূলুল্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি দিন ও রাতে নিয়মিত বারো রাকাত নামাজ পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (নামাযগুলো হলো) যোহরের ফরজের আগে দু’ রাকাত ও পরে দু’ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে দু’ রাকাত, এশার ফরজের পরে দু’ রাকাত এবং ফজরের ফরজের পূর্বে দু’ রাকাত। ”
[সহীহ আত্‌ তারগীব ৫৮০, সহীহ তিরমিজি ৩৩৮ এবং সহীহ নাসায়ী ১৬৯৩ ইবনে মাজাহ ৯৩৫, আলবানী।]

৩- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ مَشَى إِلى صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ فِي الْجَمَاعَةِ؛ فَهِيَ كَحَجَّةٍ؛ وَمَنْ مَشَى إِلى صَلَاةٍ تَطَوُّعٍ؛ فَهِيَ كَعُمْرَةٍ . صحيح الجامع- ৬৫৫৬
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি জামাতে ফরজ নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে যায়, সে হজ আদায় করার সওয়াব পায় এবং যে ব্যক্তি কোন নফল নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে যায় সে ওমরা আদায় করার সওয়াব পায়।” [ সহীহ আল-জামে – ৭৫৫৬ ]

৪- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِيْ ذِمَّةِ اللهِ ؛ فَلَا يَطْلُبَنَّكُمْ اللهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ ؛ فَإِنَّهُ مَنْ يَطْلُبُهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ يُدْرِكْهُ؛ ثُمَّ يَكُبُّهُ عَلَى وَجْهِهِ فِيْ نَارِ جَهَنَّمَ . صحيح الجامع ২৮৯
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :”যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ল সে মহান আল্লাহর জিম্মা বা রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হলো। আর আল্লাহ যদি তার নিরাপত্তা প্রদানের হক কারো থেকে দাবি করে বসেন তাহলে সে আর রক্ষা পাবে না। তাই তাকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। ” [সহীহ আল জামে – ২৮৯ ]

৫- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ تَوَضَأَّ لِلصَّلَاةِ فَأَسْبَغَ الْوَضُوْءَ ثُمَّ مَشَى إِلى الصَّلَاةِ الْمَكْتُوْبَةِ، ؛فَصَلَّاهَا مَعَ النَّاسِ, غَفَرَ اللهُ لَهُ ذُنُوْبَهُ. ابن خزيمة صحيح الجامع ৬১৭৩
৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি নামাজ পড়ার জন্য পরিপূর্ণরূপে ওজু করে ফরজ নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যায় এবং লোকদের সাথে নামাজ আদায় করে, আল্লাহ পাক তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।” [ ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ আল জামে ৬১৭৩ ]

৬- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا فِيْ جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيْرَةَ الْأُوْلى؛ كُتِبَ لَهُ بَرَاءَتَانِ، بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ وَبرَاءَةٌ مَنَ النِّفَاقِ. الصحيحة ১৯৭৯
৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীরের সাথে জামাতে নামাজ আদায় করবে তার জন্য দু’টি অব্যাহতি ও নিষ্কৃতি লেখা হয়। একটি অব্যাহতি হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আর একটি হলো মুনাফেকি বা দ্বিমুখী থেকে নিষ্কৃতি।” [ আস্‌ সহীহ – ১৯৭৯ ]

৭- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ مُسْلِمٍ إِيْمَانًا وَاحْتِسَاباً وَكَانَ مَعَهُ حَتَى يُصَلَّى عَلَيْهَا وَيُفْرَغَ مِنْ دَفْنِهَا فَإِنَّهُ يَرْجِعُ مِنَ الْأَجْرِ بِقِيْرَاطَيْنِ ، كُلُّ قِيْرَاطٍ مِثْلُ أُحُدٍ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ رَجَعَ قَبْلَ أَنْ تُدْفَنَ فَإِنَّهُ يَرْجِعُ بِقِيْرَاطٍ . صحيح الترغيب ৩৯৪৮.
৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোন মুসলমানের লাশের সাথে গেল এবং তার জানাজার নামাজ পড়া ও তার দাফন কাজ শেষ করা পর্যন্ত তার সাথে থাকল, সে দু’ কিরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কিরাত উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি মৃতের জানাজা পড়ে তাকে দাফন করার আগে ফিরে আসবে, সে এক কিরাত নিয়ে ফিরবে।” [সহীহ আত তারগীব ৩৯৪৮ (বুখারী-৯৩০ নং হাদীস) ]

৮- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَجَّ هذَا البَيْتَ ؛ فَلَم يَرفُثْ وَلَمْ يَفسُقْ رَجَعَ كََمَا وَلَدَتهُ أُمُّهُ. صحيح النسائي- ২৪৬৪
৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি এই (কা’বা) ঘরের হজ করল, তার মধ্যে সে অন্যায় ও অশ্ল্লীল আচরণ করেনি, সে নিজের গুনাহ থেকে এমনভাবে ফিরে আসবে যেমন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।” [সহীহ নাসায়ী-২৪৬৪]

৯- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ (سَبْعًا) وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ؛ كَانَ كَعَدْلِ رَقَبَةٍ . الصحيحة ২৭২৫
৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি (কা’বা) ঘরের (সাতবার) তওয়াফ করবে এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে সে এক ক্রীতদাস আজাদ করার সওয়াব অর্জন করবে।” আস্‌-সহীহাহ -২৭২৫ ]

১০- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ طَلَبَ الشَّهَادَةَ أُعْطِيَهَا وَلَوْ لَمْ تُصِبْهُ. صحيح الترغيب ১২৭৭
১০. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি (ইসলামের পথে) শাহাদতের আগ্রহ পোষণ করে তাকে সেই মর্যাদা দেয়া হয়, যদি সে নিহত নাও হয়।” [ সহীহ আত্‌ তারগীব -১২৭৭ ]

১১- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ غَسَلَ مَيِّتًا فَسَتَرَهُ ؛ سَتَرَهُ اللَّهُ مِنَ الذُّنُوْبِ ؛ وَمَنْ كَفَنَ مُسْلِمًا كَسَاهُ اللَّهُ مِنَ السَّنْدُسِ. الصحيحة২৩৫৩
১১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন মৃত-ব্যক্তিকে গোসল দিল এবং তার গোপনীয়তা রক্ষা করল, তাহলে আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তিকে [গুনাহ থেকে] ঢেকে রাখবেন। এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে কাফন পড়িয়ে দিল আল্লাহ তাআলা (জান্নাতে) তাকে পাতলা রেশমি বস্ত্র পরাবেন।” [ আস্‌ সহীহাহ-২৩৫৩ ]

১২- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنِ اسْتَغْفَرَ ِللْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِكُلِّ مُؤْمِنٍ وَمُؤْمِنَةٍ حَسَنَةً. الصحيحة৬০২৬
১২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার নারীর জন্য ক্ষমার প্রার্থনা করল, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ এবং নারীর ক্ষমা প্রার্থনার বিনিময়ে একটি করে নেকি লিখে দেবেন।” [ আস্‌ সহীহাহ ৬০২৬ ]

১৩- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَحَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بَعَشْرِ أَمْثَالِهَا ؛ لاَ أَقُوْلُ ( الـم ) حَرْفٌ؛ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيْمٌ حَرْفٌ . الصحيحة- ৩৩২৭
১৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পড়বে তার জন্য একটি সওয়াব আছে। আর একটি সওয়াব হল তার দশ গুন হিসেবে। আমি বলি না যে, “আলিফ-লাম-মীম” একটি হরফ বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।” [ আস্‌ সহীহাহ -৩৩২৭ ]

১৪- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ فِيْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ حُطَّتْ عَنْهُ خَطَايَاهُ وَاِنْ كاَنَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ. صحيح الكلم الطيب – ৭
১৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি দিবসে একশত বার سبحان الله وبحمده [আল্লাহ পূত ও পবিত্র এবং তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা] পাঠ করে তার পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে।” [ সহীহ আল কালিমুত্‌ তাইয়েব – ৭ ]

১৫- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ صَلَّى عَلَيَّ حِيْنَ يُصْبِحُ عَشْرًا وَحِيْنَ يُمْسِيُ عَشْرًا أَدْرَكَتْهُ شَفَاعَتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ . صحيح الجامع- ৬৩৫৭
১৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে সকালে উঠে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার আমার উপরে দরুদ পাঠ করে, কেয়ামতের দিবসে সে আমার শাফাআত পাবে।” [সহীহ আল – জামে’ ৬৩৫৭ ]

১৬- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتاً فِي الْجَنَّةِ أَوْسَعَ مِنْهُ . الصحيحة ৩৪৪৫
১৬. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ তৈরি করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে এর চেয়ে প্রশস্ত একটি ঘর তৈরি করবেন।” [ আস সহীহাহ -৩৪৪৫ ]

১৭- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ. الصحيحة- ৬৪
১৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ (মহান আল্লাহ পাকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তাঁর প্রশংসাও বর্ণনা করছি) বলবে, তার জন্য জান্নাতে এটি খেজুর গাছ লাগানো হবে।” [ আস্‌ সহীহাহ- ৬৪ ]

১৮- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ من قال في يوم مائة مرة: ( لاَإِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ) كان له عدل عشر رقاب وكتبت له مائة حسنة ومحي عنه مائة سيئة وكان له حرزا من الشيطان سائر يومه إلى الليل ولم يأت أحد بأفضل مما أتى به إلا من قال أكثر.) صحيح ابن ماجة ৩০৬৪
১৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :”যে ব্যক্তি দিবসে এই দু’আ পড়বে :
( لاَإِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ )
অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। সমস্ত রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনিই সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল।” সে ব্যক্তি দশজন ক্রীতদাস মুক্ত করার সমান সওয়াব লাভ করবে। আর তার জন্য একশত সওয়াব লেখা হবে এবং তার একশতটি গুনাহ মাফ হবে। উক্ত দিবসের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের (প্ররোচনা ও বিভ্রান্তি) থেকে তাকে সুরক্ষিত রাখা হয়। কেউ নেই যে এই দুআটি পাঠকারীর চেয়ে উত্তম কোন দুআ পাঠে উক্ত মর্যাদা লাভ করতে পরে, তবে যে এর চেয়ে অধিক পাঠ করবে।” [ সহীহ ইবনে মাজাহ – ৩০৬৪ ]

১৯- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَفِظَ عَشَرَ آياَتٍ مِنْ أَوَّلِ سُوْرَةِ الْكَهْفِ عَصَمَ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ. صحيح الجامع৭২০১
১৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:”যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে সে দজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।” [ সহীহ আল জামে’ ৭২০১ ]

২০- قا قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ من رأى مبتلى فقال: اَلْحَمْدُ لِلَّهَ الَّذِيْ عَافَا نِيْ مِمَّا ابْتَلاَكَ بِهِ وَفَضَّلَنِيْ عَلَى كَثِيْرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلاً. لم يصبه ذلك البلاء – الصحيحة -৬০২
২০. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন রোগাক্রান্ত বা বিপদে পতিত লোককে দেখে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে সে উক্ত বিপদে আক্রান্ত হবে না।”
( اَلْحَمْدُ لِلَّهَ الَّذِيْ عَافَا نِيْ مِمَّا ابْتَلاَكَ بِهِ وَفَضَّلَنِيْ عَلَى كَثِيْرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلاً.)
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে যে-পরীক্ষায় নিপতিত করেছেন তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং তাঁর সৃষ্টির অনেকের চেয়ে আমাকে অধিক অনুগ্রহ দান করেছেন।” [ আস সহীহাহ- ৬০২ ]

২১- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ من قال : لاَإِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ ) عشرا كان كمن أعتق رقبة من ولد إسماعيل. صحيح الجامع- ৪৬৫৩
২১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি দশবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে, সে ইসমাইল () এর বংশের একটি ক্রীতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে।
( لاَإِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ )
“আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। সমস্ত রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনিই সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল।” [ সহীহ আল জামে – ৪৬৫৩ ]

২২- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: ( مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشَرًا ) صحيح الترمذي- ৪০২
২২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশবার রহমত অবতীর্ণ করবেন।” [সহীহ আত্‌ তিরমিজি – ৪০২]

২৩. قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: ( اَلْأَنْصَارَ لاَ يُحِبِّهُمْ إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ يُبْغِضُهُمْ إِلاَّ مُنَافِقٌ ؛ فَمَنْ أَحَبَّهُمْ أَحَبَّهُ اللَّهُ؛ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ أَبْغَضَهُ اللَّهُ) الصحيحة- ১৯৭৫
২৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘আনসারগণকে ঈমানদার ছাড়া কেউ ভালোবাসে না এবং তাদের সাথে মোনাফেক ছাড়া কেউ শত্রুতা করে না। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভালোবাসেন এবং যে ব্যক্তি তাদের সাথে শত্রুতা রাখে, আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে শত্রুতা রাখেন।” [ সিলসিলা আস্‌ সহীহাহ – ১৯৭৫

২৪ – قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: ( مَن أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ؛ أَظَلَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ. ) صحيح الترمذي ১০৫২
২৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্তকে সুযোগ দিল অথবা তার ঋণ মাফ করে দিল, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়ার নীচে আশ্রয় প্রদান করবেন, যেদিন উক্ত ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। “[ সহীহ আত্‌ তিরমিজি ১০৫২ ]

২৫- قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. رواه البخاري- ২২৬২ مسلم- ৪৬৭৭
২৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের (দোষ) গোপন রাখবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার (দোষ) গোপন রাখবেন। “[ বুখারী- ২২৬২, মুসলিম – ৪৬৭৭ ]

২৬ -قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ لَهُ ثَلاَثُ بَنَاتٍ فَصَبَرَ عَلَيْهِنَّ وَأَطْعَمَهُنَّ وَسَقَاهُنَّ وَكَسَاهُنَّ من جِدَتِهِ كُنَّ لَهُ حِجَاًباً مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. الصحيحة ২৯৪
২৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তির ঘরে তিনটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করল, অতঃপর উক্ত কন্যা সন্তানদের প্রতি সে সহনশীল হলো এবং ঐকান্তিকতার সাথে তাদেরকে ভরণ-পোষণ করল, কিয়ামতের দিন উক্ত কন্যা সন্তানেরা তার জন্য জাহান্নাম থেকে প্রতিবন্ধক পর্দা হবে।” [সিলসিলা আস্‌ সহীহাহ- ২৯৪]

২৭ – قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ ذَبَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيْهِ بِالْغِيْبَةِ؛ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يَعْتِقَهُ مِنَ النَّارِ صحيح. الترغيب-২৮৪৭
২৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার অন্য মুসলমান ভাইয়ের গিবতের মাধ্যমে অমর্যাদা করা থেকে দূরে থাকল, আল্লাহর প্রতি উক্ত বান্দার হক হলো যে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা।” [ সহীহ আত্‌ তারগীব ২৮৪৭ ]

২৮ – قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنَفِّذَهُ دَعَاهُ اللَّهُ سُبْحَانَهُ عَلَى رُؤُوْسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتى يُخَيِّرَهُ مِنَ الْحُوْرِ الْعِيْنِ مَا شَاءَ. صحيح الترغيب- ২৭৫৩
২৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ক্রোধকে সংবরণ করল অথচ উক্ত ক্রোধকে সে বাস্তবায়নে সক্ষম, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের মাঠে সমস্ত সৃষ্টি জীবের সামনে তাকে আহ্বান করবেন এবং যতটি ইচ্ছে ততটি বেহেশ্‌তের হুর বেছে নেয়ার সুযোগ তাকে দেবেন। [ সহীহ আত্‌ তারগীব ২৭৫৩ ]

২৯ – قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَوَاضَعَ ِللهِ رَفَعَهُ اللهُ. الصحيحة ২৩২৮
২৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দেন। ” [ সিলসিলা আস্‌ সহীহাহ- ২৩২৮]

৩০ -قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ : مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِيْ رِزْقِهِ وَيُنْشَأَ لَهُ أَثَرُهُ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ. رواه البخاري ৫৫২৭، ومسلم ৪৬৩৯
৩০. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার রিজিক বৃদ্ধি পাক এবং তার হায়াত দীর্ঘায়িত হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” [ বুখারী ৪৬৩৯ ]

৩১ – قَالَ صَلَّى الله ُعَلَيهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَتَلَ وَزَّغًا فِيْ أَوَّلِ ضَرْبَةٍ كُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَفَي الثَّانِيَةِ دُوْنَ ذَلِكَ وَفِي الثَّالِثَةِ دُوْنَ ذَلِكَ. صحيح الترغيب- ২৯৭৮
৩১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:”যে ব্যক্তি কোন গিরগিটিকে (মুহূর্তে রং পরিবর্তন করার ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাণী) প্রথম আঘাতে হত্যা করল তার জন্য একশতটি নেকী লেখা হবে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় আঘাতে হত্যার জন্য এর চেয়ে কম নেকী লেখা হবে।” [ সহীহ আত্‌ তারগীব – ২৯]

সমাপ্ত

লেখক: মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
تأليف: محمد صالح المنجد
অনুবাদ: আব্দুন নূর বিন আব্দুল জব্বার
ترجمة: عبد النور بن عبد الجبار
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
مراجعة : عبد الله شهيد عبد الرحمن
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।

হাদীসের গল্প (গীবত ও মন্দ আচরন)


হাদীসের গল্প (গীবত ও মন্দ আচরন)

image

(১) গীবতের ভয়াবহতা

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আরবরা সফরে গেলে একে অপরের খিদমত করত। আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সাথে একজন লোক ছিল যে তাদের খিদমত করত। তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর জাগ্রত হলে লক্ষ করলেন যে, সে তাদের জন্য খাবার প্রস্ত্তত করেনি (বরং ঘুমিয়ে আছে)। ফলে একজন তার অপর সাথীকে বললেন, এতো তোমাদের নবী (ছাঃ)-এর ন্যায় ঘুমায়। অন্য বর্ণনায় আছে তোমাদের বাড়িতে ঘুমানোর ন্যায় ঘুমায় (অর্থাৎ অধিক ঘুমায় এমন ব্যক্তি)।

অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে বললেন, তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁকে বল যে, আবুবকর ও ওমর (রাঃ) আপনাকে সালাম প্রদান করেছেন এবং আপনার নিকট তরকারী চেয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, যাও, তাদেরকে আমার সালাম প্রদান করে বলবে যে, তারা তরকারী খেয়ে নিয়েছে। (একথা শুনে) তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমরা আপনার নিকট তরকারী চাইতে ওকে পাঠালাম। অথচ আপনি তাকে বলেছেন যে তারা তরকারী খেয়েছে। আমরা কি তরকারী খেয়েছি? তিনি (ছাঃ) বললেন, তোমাদের ভাইয়ের গোস্ত দিয়ে। যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোস্ত দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেন, আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি (ছাঃ) বললেন, না বরং সেই তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৮)।

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, ‘আপনার জন্য ছাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট’। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ছাফিয়া বেঁটে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহ’লে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে’।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি করলাম। তিনি বললেন, ‘কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পসন্দ করি ন’ (আবুদাউদ হা/৪৮৭৭, সনদ ছহীহ)।

কায়স বলেন, আমর ইবনুল আছ (রাঃ) তার কতিপয় সঙ্গী-সাথীসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! কোন ব্যক্তি যদি পেট পুরেও এটা খায়, তবুও তা কোন মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম’ (আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩৬, সনদ ছহীহ)।

(২) অন্যের সাথে মন্দ আচরণের প্রতিবিধান

রাবী‘আহ আল-আসলামী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খিদমত করতাম। ফলে তিনি আমাকে ও আবুবকর (রাঃ)-কে এক খন্ড জমি দান করলেন। অতঃপর দুনিয়ার চাকচিক্য আসল। ফলে একটি খেজুরের কাঁদিকে কেন্দ্র করে আমরা বিতর্কে জড়িয়ে পড়লাম। আবুবকর (রাঃ) বললেন, এটা আমার জমির সীমানার মধ্যে। আমি বললাম, না এটা আমার জমিতে। (এ বিষয়ে) আমার ও আবুবকর (রাঃ)-এর মধ্যে কথা কাটাকাটি হ’ল। আবুবকর (রাঃ) আমাকে এমন একটা কথা বললেন যেটা আমি অপসন্দ করলাম। এজন্য তিনি অনুতপ্ত হয়ে আমাকে বললেন, হে রাবী‘আহ! তুমি অনুরূপ কথা বলে প্রতিশোধ নিয়ে নাও, যাতে ওর কিছাছ হয়ে যায়। আমি বললাম, না আমি তা করব না। অতঃপর আবুবকর (রাঃ) বললেন, তুমি অবশ্যই বলবে নতুবা তোমার বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব (অর্থাৎ নালিশ করব)। আমি বললাম, এটা করতে পারব না। রাবী বলেন, তিনি জমি প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানালে আবুবকর (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গমন করলেন।

আমিও তার পদাংক অনুসরণ করে চললাম। এরই মধ্যে আসলাম গোত্রের কিছু লোক এসে বলল, আল্লাহ আবুবকর (রাঃ)-এর উপর রহম করুন! কোন বিষয়ে তিনি তোমার বিরুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট নালিস করছেন। অথচ তিনি যা ইচ্ছা তাই তোমাকে বলেছেন? আমি বললাম, তোমরা কি জান তিনি কে? ইনিই হচ্ছেন আবুবকর ছিদ্দীক, (দু’জনের ২য় জন)। তিনি মুসলমানদের মধ্যে সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। সুতরাং তোমরা তার ব্যাপারে সতর্ক থাক। তিনি তাকালে দেখবেন যে, তোমরা আমাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করছ। যার ফলে তিনি ক্রোধে ফেটে পড়বেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে যাবেন। অতঃপর তাঁর ক্রোধের কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ক্রোধান্বিত হবেন। আর তাদের দু’জনের ক্রোধের কারণে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হবেন। তখন রাবী‘আহ ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা বলল, তাহ’লে তুমি আমাদের কি করার নির্দেশ দিচ্ছ? তিনি বললেন, তোমরা ফিরে যাও।

আবুবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন এবং আমি একাকী তার পশ্চাদ্বাবন। নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট পৌঁছে তিনি তাঁর নিকট সকল ঘটনা বর্ণনা করলেন। অতঃপর তিনি আমার দিকে মাথা উঁচু করে বললেন, ‘হে রাবী‘আহ! তোমার ও আবুবকর (রাঃ)-এর মধ্যে কি ঘটেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! ঘটনা ছিল এরূপ এরূপ। অতঃপর তিনি আমাকে এমন কথা বললেন, যা আমি অপসন্দ করি। ফলে তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমাকে যেমন বলেছি তুমি আমাকে তেমন বল, যাতে সেটার প্রতিদান (কিছাছ) হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ তুমি তাঁর জবাব দিবে না। বরং বলবে, হে আবুবকর! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিন, হে আবুবকর! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিন। রাবী বলেন, (রাসূল (ছাঃ)-এর এ নির্দেশ শুনে) আবুবকর (রাঃ) ক্রন্দনরত অবস্থায় ফিরে গেলেন (ছহীহাহ হা/৩২৫৮)।

আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম,সেগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা


আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম,সেগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

image

আল্লাহ্ বলেন وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
“আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে, সেই নামের মাধ্যমে তোমরা তাঁকে ডাক। (সূরা আরাফঃ ১৮০) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إلاَّ واَحِداً مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ

“আল্লাহ তায়ালার এমন নিরানব্বইটি (এক কম একশ) নাম রয়েছে, যে উহা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীছে যে বলা হয়েছে: “যে ব্যক্তি উহা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” এর অর্থ হচ্ছে:
(১) শব্দ ও সংখ্যা সমূহ গণনা করা।
(২) উহার অর্থ ও তাৎপর্য অনুধাবন করা, তার প্রতি ঈমান রাখা ও সে অনুযায়ী আমল করা। যেমন: الْحَكِيمُ মহা বিজ্ঞ। বান্দা যখন নিজের যাবতীয় বিষয় তাঁর কাছে সমর্পণ করবে তখনই এ নামের উপর আমল হবে। কেননা সকল বিষয় তাঁরই হেকমত ও পাণ্ডিত্যেই হয়ে থাকে। বান্দা যখন বলবে الْقُدُّوسُ বা মহা পবিত্র, তখন অন্তরে অনুভব করবে যে, তিনি যাবতীয় দোষ-ত্র“টি থেকে পূত পবিত্র।
(৩) নামসমূহ উল্লেখ করে দুআ করা। এ দুআ দুপ্রকারঃ (ক) প্রশংসা ও ইবাদতের দুআ (খ) প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা।
কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুসন্ধান করে আল্লাহর যে সমস্ত নাম জানা যায় তা নিম্নরূপ:
আল্লাহর পবিত্র নাম সমুহ এবং সে নামের ব্যাখ্যা
الله
( আল্লাহ) আল্লাহ্‌। তিনি সৃষ্টিকুলের ইবাদত ও দাসত্বের অধিকারী। তিনিই মাবূদ-উপাস্য, তাঁর কাছে বিনীত হতে হয়, রুকূ-সিজদাসহ যাবতীয় ইবাদত-উপাসনা তাঁকেই নিবেদন করতে হয়।
الرَّحْمَنُ
(আর রাহমান) পরম দয়ালু, সৃষ্টির সকলের প্রতি ব্যাপক ও প্রশস্ত দয়ার অর্থবোধক নাম। এ নামটি আল্লাহর জন্যে সবিশেষ, তিনি ব্যতীত কাউকে রহমান বলা জায়েয নয়।
الرَّحِيمُ
(আর রাহীম) পরম করুণাময়, তিনি মুমিনদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমাকারী করুণাকারী, তাঁর ইবাদতের প্রতি মুমিনদের হেদায়াত করেছেন। জান্নাত দিয়ে আখেরাতে তাদেরকে সম্মানিত করবেন।
العَفُوُ
আল আফুউ) ক্ষমাকারী, তিনি বান্দার গুনাহ মিটিয়ে দেন তাকে ক্ষমা করে দেন, অপরাধ করে শাস্তিযোগ্য হওয়া সত্বেও তিনি শাস্তি দেন না।
الغَفُوْرُ
(আল গাফূর) মহাক্ষমাশীল, তিনি বান্দার অন্যায় গোপন রাখেন, তাকে লাঞ্ছিত করেন না এবং শাস্তিও দেন না।
الْغَفَّارُ
(আল গাফফার) অত্যধিক ক্ষমাকারী, গুনাহগার বান্দা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন।
الرَّءُوفُ
( আর রাউফ) অতিব দয়ালু, রহমত বা দয়ার সাধারণ অর্থের তুলনায় এ শব্দটি অধিক ও ব্যাপক অর্থবোধক তাঁর এই দয়া দুনিয়াতে সৃষ্টির সকলের জন্যে এবং আখেরাতে কতিপয় মানুষের জন্যে। আর তারা হচ্ছে আল্লাহর বন্ধু মুমিনগণ।
الحَلِيمُ
(আল হালীম) মহাসহিষ্ণু, তিনি বান্দাদেরকে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেন না; অথচ তিনি শাস্তি দিতে সক্ষম। বরং তারা মাফ চাইলে তিনি তাদেরকে মাফ করে দেন।
التَّوَّابُ
(আত তাওয়াব) তওবা কবূলকারী, তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তওবা করার তাওফীক দেন এবং তাদের তওবা কবূল করেন।
السِّتِّيْرُ
(আস সিত্তীর)[1] দোষ-ত্রুটি গোপনকারী, তিনি বান্দার অন্যায় গোপন রাখেন, সৃষ্টিকুলের সামনে তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন না। তিনি ভালবাসেন বান্দা নিজের এবং অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখুক, তাহলে তিনিও তাদের অপরাধ গোপন রাখবেন।
الغَنِيُّ
(আল গানী) ঐশ্বর্যশালী, তিনি সৃষ্টিকুলের কারো মুখাপেক্ষী নন। কেননা তিনি নিজে পরিপূর্ণ, তাঁর গুণাবলী পরিপূর্ণ। সৃষ্টির সকলেই ফকীর, অনুগ্রহ ও সাহায্যের জন্যে তাঁর উপর নির্ভরশীল।
الكَرِيمُ
(আল কারীম) মহা অনুগ্রহশীল, সর্বাধিক কল্যাণকারী, সুমহান দানকারী। যাকে যা চান যেভাবে ইচ্ছা দান করেন। চাইলেও দান করেন, না চাইলেও দান করেন। গুনাহ মাফ করেন, দোষ-ত্রুটি গোপন রাখেন।
الأَكْرَمُ
(আল আকরাম) সর্বাধিক সম্মানিত, সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী, তাতে তাঁর কোন দৃষ্টান্ত নেই। যাবতীয় কল্যাণ তাঁর নিকট থেকেই আসে। নিজ অনুগ্রহে মুমিনদের পুরস্কৃত করবেন। অবাধ্যদের সুযোগ দেন, ন্যায়নিষ্ঠার সাথে তাদের হিসাব নিবেন।
الْوَهَّابُ
(আল ওয়াহহাব) মহান দাতা, বিনিময় ব্যতীত বিনা উদ্দেশ্যেই অত্যধিক দান করেন। না চাইতেও অনুগ্রহ করেন।
الْجَوَادُ
(আল জাওয়াদ) উদার দানশীল, সৃষ্টিকুলকে উদারভাবে অধিক দান ও অনুগ্রহ করেন। তাঁর উদারতা ও অনুগ্রহ বিশেষভাবে মুমিনদের প্রতি বেশী হয়ে থাকে।
الْوَدُودُ
(আল ওয়াদূদ) মহত্তম বন্ধু, তিনি তাঁর মুমিন বন্ধুদের ভালবাসেন, মাগফিরাত ও নেয়ামত দিয়ে তিনি তাদের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেন। তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাদের আমল কবূল করেন। তাদেরকে পৃথিবীবাসীর কাছেও ভালবাসার পাত্র করেন।
الْمُعْطِي
(আল মু’তী) দানকারী, তাঁর অফুরন্ত ভান্ডার থেকে সৃষ্টিকুলের যাকে চান যা চান প্রদান করেন। তাঁর দানের শ্রেষ্ঠাংশ তাঁর (মুমিন) বন্ধুদের জন্যে হয়ে থাকে। তিনিই সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন ও তাতে আকৃতি প্রদান করেছেন।
الوَاسِعُ
(আল ওয়াসি’) মহা প্রশস্ত, তাঁর গুণাবলী সুপ্রশস্ত। কেউ যথাযথভাবে তাঁর গুণগান গাইতে পারবে না। তাঁর মহত্ব ও রাজত্ব সুবিশাল প্রশস্ত। তাঁর মাগফিরাত ও করুণা সুপ্রশস্ত। দয়া ও অনুগ্রহ সুপ্রশস্ত।
الْمُحْسِِنُ
(আল মুহসিন) মহা অনুগ্রহকারী, তিনি স্বীয় সত্বা, গুণাবলী ও কর্মে অতি উত্তম। তিনি সুন্দরভাবে সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টিকুলের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।
الرازقُ
(আর রাযিক) রিযিকদাতা, তিনি সৃষ্টিকুলের সকলকে রিযিক দিয়ে থাকেন। তিনি জগত সৃষ্টির পূর্বে তাদের রিযিক নির্ধারণ করেছেন। আর পরিপূর্ণরূপে সেই রিযিক তাদের প্রদান করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
الرَّزَّاقُ
(আর রাযযাক) সর্বাধিক রিযিকদাতা, তিনি সৃষ্টিকুলকে অধিকহারে রিযিক দিয়ে থাকেন। তাঁর কাছে প্রার্থনা না করতেই তিনি রিযিকের ব্যবস্থা করেন। এমনকি অবাধ্যদেরকেও তিনি রিযিক দিয়ে থাকেন।
اللَطِيْفُ
(আল লাত্বীফ) সুক্ষ্ণদর্শী, সকল বিষয়ের সুক্ষ্ণাতিসুক্ষ্ণ জ্ঞান আছে তাঁর কাছে। কোন কিছুই গোপন থাকেনা তাঁর নিকট। তিনি বান্দাদের নিকট এত গোপনীয়ভাবে কল্যাণ ও উপকার পৌঁছিয়ে থাকেন যে তারা ধারণাই করতে পারে না।
الخَبيْرُ
(আল খাবীর) মহাসংবাদ রক্ষক, তিনি যেমন সকল বস্তুর প্রকাশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখেন, অনুরূপভাবে তাঁর জ্ঞান সবকিছুর গোপন ও অপকাশ্য সংবাদকেও বেষ্টন করে আছে।
الْفَتَّاحُ
(আল ফাত্তাহ) উন্মোচনকারী, তিনি তাঁর রাজত্বের ভান্ডার এবং করুণা ও রিযিক থেকে যা ইচ্ছা বান্দাদের জন্যে খুলে দেন। তাঁর জ্ঞান ও হিকমত অনুযায়ীই তিনি তা উন্মুক্ত করে থাকেন।
العَلِيمُ
(আল আ’লীম) মহাজ্ঞানী, তাঁর জ্ঞান বেষ্টন করে আছে যাহের-বাতেন, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের যাবতীয় বিষয়কে। কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন বা লুকায়িত নয়।
البَرُّ
(আল বার) মহাকল্যাণদাতা, তিনি সৃষ্টিকুলকে প্রশস্ত কল্যাণদানকারী। তিনি প্রদান করেন কিন্তু তাঁর দানকে কেউ গণনা করতে পারে না। তিনি নিজ অঙ্গীকারে সত্যবাদী। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন, তাকে সাহায্য করেন ও রক্ষা করেন। তিনি বান্দার অল্পদানও গ্রহণ করেন এবং তার ছওয়াবকে বৃদ্ধি করতে থাকেন।
الحَكِيْمُ
(আল হাকীম) মহাবিজ্ঞ, তিনি নিজ জ্ঞানে সকল বস্তুকে উপযুক্তভাবে স্থাপন করেন। তাঁর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় কোন ত্রুটি হয় না ভুল হয় না।
الْحَكَمُ
(আল হাকাম) মহাবিচারক, তিনি ন্যায়নিষ্ঠার সাথে সৃষ্টিকুলের বিচার করবেন। কারো প্রতি অত্যাচার করবেন না। তিনিই সম্মানিত কিতাব (সংবিধান) নাযিল করেছেন, যাতে করে উক্ত সংবিধান অনুযায়ী মানুষের মাঝে বিচার কার্য সম্পাদন করা যায়।
الشَّاكِرُ
(আশ শাকির) কৃতজ্ঞতাকারী, যে বান্দা তাঁর আনুগত্য করে ও তাঁর গুণগান গায় তিনি তার প্রশংসা করেন। আমল যত কম হোক না কেন তিনি তাতে প্রতিদান দেন। যারা তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া করে বিনিময়ে তাদের নেয়ামতকে দুনিয়াতে আরো বৃদ্ধি করে দেন এবং পরকালে প্রতিদান বৃদ্ধি করবেন।
الشَّكُورُ
(আশ শাকুর) কৃতজ্ঞতাপ্রিয়, বান্দার সামান্য আমল তাঁর কাছে পবিত্রময়। তিনি তাতে বহুগুণ ছওয়াব প্রদান করেন। বান্দার প্রতি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা করার অর্থ হচ্ছে তার কর্মের প্রতিদান দেয়া এবং আনুগত্য গ্রহণ করা।
الجَمِيْلُ
(আল জামীল) অতিব সুন্দর, তিনি নিজ সত্বা, নাম ও গুণাবলীতে এবং কর্মে অতিব সুন্দর। সৃষ্টির যে কোন সৌন্দর্য তাঁর পক্ষ থেকেই প্রদত্ত।
الْمَجِيدُ
(আল মাজীদ) মহাগৌরবান্বিত সপ্তাকাশে ও পৃথিবীতে গর্ব ও অহংকার, সম্মান ও মর্যাদা এবং উচ্চতা ও শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র তাঁরই।
الْوَلِيُّ
(আল ওয়ালী) মহা অভিভাবক, তিনি সৃষ্টি জগতের প্রতিটি বিষয়ের পরিচালনাকারী, রাজত্বে কর্তৃত্বকারী। তিনিই তাঁর মুমিন বন্ধুদের সাহায্যকারী, মদদকারী ও রক্ষাকারী।
الْحَمِيدُ
(আল হামীদ) মহাপ্রশংসিত, তিনি নিজ নাম, গুণাবলী ও কর্মে সর্বোচ্চ প্রশংসিত। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও সচ্ছলতা-অভাবে তাঁরই প্রশংসা। তিনিই সকল প্রশংসা ও স্তুতির হকদার। কেননা তিনি সকল পরিপূর্ণ গুণাবলীর অধিকারী।
المَوْلَى
(আল মাওলা) অভিভাবক, তিনি পালনকর্তা, বাদশা, নেতা। তিনি তাঁর মুমিন বন্ধুদের সাহায্য ও সহযোগিতাকারী।
النَّصِيْرُ
(আন নাসীর) সাহায্যকারী, তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য দ্বারা শক্তিশালী করেন। তিনি যাকে মদদ করেন তাকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। তিনি যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে কেউ সাহায্য করতে পারে না।
السَّمِيعُ
মহাশ্রবণকারী, তাঁর শ্রবণ প্রত্যেক গোপনীয় সলা-পরামর্শকে বেষ্টন করে, প্রত্যেক প্রকাশ্য বিষয়কে বেষ্টন করে; বরং সকল আওয়াজকে বেষ্টন করে তা যতই উঁচু হোক অথবা নীচু বা ক্ষীণ হোক।
البَصِيرُ
(আল বাসীর) মহাদ্রষ্টা, তাঁর দৃষ্টি জগতের সকল কিছুকে বেষ্টন করে আছে। দৃশ্য-অদৃশ্য সকল কিছুই তিনি দেখতে পান। যতই গোপন বা প্রকাশ্য হোক না কেন অথবা ক্ষুদ্র ও বৃহৎ হোক না কেন তাঁর অগোচরে কিছুই থাকে না।
الشَّهِيدُ
(আশ শাহীদ) মহাস্বাক্ষী, তিনি সৃষ্টিকুলের পর্যবেক্ষক। তিনি নিজের একত্ববাদ ও ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। মুমিনগণ তাঁর একত্ববাদ ঘোষণা করলে তিনি তাদের স্বাক্ষী হন। তিনি তাঁর রাসূলগণ এবং ফেরেশতাদের জন্যেও স্বাক্ষী|
الرَّقِيبُ
(আর রাক্বীব) মহাপর্যবেক্ষক, তিনি সৃষ্টিকুলের সবকিছুই জানেন। তিনি তাদের কর্ম সমূহ গণনা করে রাখেন। কারো চোখের পলক বা অন্তরের গোপন বাসনা তাঁর জ্ঞান বহির্ভূত নয়।
الرَّفِيْقُ
(আর রাফীক্ব) মহান বন্ধু, দয়ালু, তিনি নিজের কর্মে খুব বেশী নম্রতা অবলম্বন করেন। তিনি সৃষ্টি ও নির্দেশের বিষয় ক্রমান্বয়েও ধীরস্থীরভাবে সম্পন্ন করেন। তিনি বান্দাদের সাথে কোমল ও দয়ালু আচরণ করেন। সাধ্যের বাইরে তাদের উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেন না। তিনি নম্র-ভদ্র বান্দাকে ভালবাসেন।
القَرِيْبُ
(আল ক্বরীব) সর্বাধিক নিকটবর্তী, তিনি জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে সকল সৃষ্টির নিকটবর্তী। সাহায্য ও দয়ার মাধ্যমে মুমিন বন্দাদের নিকটবর্তী। সেই সাথে তিনি সপ্তাকাশের উপর সুমহান আরশে সমুন্নত। তিনি স্বসত্বায় মাখলুকের সাথে মিশে থাকেন না।
المُجِيبُ
(আল মুজীব) কবূলকারী, আহবানে সাড়াদানকারী, তিনি আহবানকারীর আহবানে এবং প্রার্থনকারীর প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে থাকেন। তাঁর জ্ঞান ও হিকমত অনুযায়ীই তিনি সাড়া দিয়ে থাকেন।
الْمُقِيْتُ
(আল মুক্বীত) ভরণ-পোষণ দানকারী, খাদ্যদাতা, তিনি রিযিক ও খাদ্য সৃষ্টি করেছেন এবং তা মাখলুকের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও নিয়েছেন। তিনি বান্দার রিযিক ও আমল লোকসান ও ত্রুটি ছাড়াই সংরক্ষণ করেন।
الْحَسِيبُ
(আল হাসীব) মহান হিসাব রক্ষক, যথেষ্ট, বান্দার দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্যে তিনিই যথেষ্ট। তাঁর যথেষ্টতার শ্রেষ্ঠাংশ মুমিনদের জন্যে নির্ধারিত। মানুষ দুনিয়ায় যে আমল সম্পাদন করেছে তিনি তার হিসাব নিবেন।
المُؤْمِنُ
(আল মু’মিন) নিরাপত্তাদানকারী, বিশ্বাসী, নবী-রাসূল এবং তাঁদের অনুসারীদের সত্যতার সাক্ষী দিয়ে তিনি তাদের সত্যায়ন করেছেন। তাঁদের সত্যতাকে বাস্তবায়ন করার জন্যে যে দলীল-প্রমাণ দিয়েছেন তার সত্যায়ন করেছেন। দুনিয়া-আখেরাতের সকল নিরাপত্তা তাঁরই দান। মুমিনদের নিরাপত্তা দিয়েছেন যে, তিনি তাদের প্রতি যুলুম করবেন না, তাদেরকে শাস্তি দিবেন না এবং কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় তাদেরকে বিপদে ফেলবেন না।
الْمَنَّانُ
(আল মান্নান) অনুগ্রহকারী, দানকারী, তিনি অঢেল দান করেন, বড় বড় নেয়ামত প্রদান করেন। সৃষ্টির উপর পরিপূর্ণরূপে অনুগ্রহ করেন।
الطَّيِّبُ
(আত ত্বইয়েব) মহা পবিত্র, তিনি অতি পবিত্র, যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। যাবতীয় সৌন্দর্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও পরিপূর্ণতা তাঁরই। তিনি সৃষ্টিকুলকে অফুরন্ত কল্যাণ প্রদান করেন। আমল ও দান-সাদকা একনিষ্ঠভাবে তাঁর উদ্দেশ্যে না হলে এবং হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে না হলে তিনি তা কবূল করবেন না।
الشَّافِي
(আশ শাফী) আরোগ্য দানকারী, তিনি অন্তর ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের যাবতীয় ব্যাধির আরোগ্য দানকারী। আল্লাহ্‌ যা দিয়েছেন তা ব্যতীত বান্দার হাতে কোন নিরাময়ক উপকরণ নেই। আরোগ্য বা রোগমুক্তির ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতেই আছে।
الْحَفِيظُ
(আল হাফীয) মহারক্ষক, তিনি নিজ অনুগ্রহে মুমিন বান্দার আমল সমূহ হেফাযত ও সংরক্ষণ করে থাকেন। তাঁর অসীম ক্ষমতা দ্বারা মাখলুকাতকে লালন-পালন করেন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
الْوَكِيلُ
(আল ওয়াকীল) মহা প্রতিনিধি, তিনি সমস্ত জগতের দায়িত্ব নিয়েছেন, সৃষ্টি ও পরিচালনার কর্তব্যভার গ্রহণ করেছেন। অতএব সৃষ্টিকুলকে অস্তিত্ব প্রদান ও মদদ করার তিনিই যিম্মাদার।
الْخَلاَّقُ
(আল খাল্লাক্ব) সৃষ্টিকারী, আল্লাহ্‌ তাআলা যে অগণিত বস্তু সৃষ্টি করেন শব্দটি তার অর্থই বহণ করছে। তিনি সৃষ্টি করতেই আছেন এবং সৃষ্টি করার এই বিশাল ক্ষমতা তাঁর মধ্যে চিরকালীন।
الخَالِقُ
(আল খালিক্ব) স্রষ্টা, তিনি পূর্ব দৃষ্টান্ত ছাড়াই মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন।
البَارِئُ
(আল বারী) সৃজনকর্তা, তিনি যা নির্ধারণ করেছেন এবং যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে রূপ দান করেছেন।
المُصَوِّرُ
(আল মুসাব্বির) অবয়বদানকারী, আল্লাহ্‌ তা’আলা নিজের প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও করুণা অনুযায়ী সৃষ্টিকুলকে ইচ্ছামত আকৃতি ও অবয়ব দান করেছেন।
الرَّبُّ
(আর রব) প্রভু, প্রতিপালক, তিনিই সৃষ্টিকুলকে তাঁর নেয়ামতরাজী দিয়ে প্রতিপালন করেন, তাদেরকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন। তিনি মুমিন বন্ধুদের অন্তর যেভাবে সংশোধন হয় সেভাবে যত্নসহকারে লালন-পালন করেন। তিনিই মালিক, স্রষ্টা, নেতা ও পরিচালক।
العَظِيمُ
(আল আযীম) সুমহান, তিনি নিজ সত্বা, নাম ও গুণাবলীতে সুমহান গৌরবান্বিত। তাই সৃষ্টিকুলের আবশ্যক হচ্ছে তাঁর মহত্ব ঘোষণা করা, তাঁকে সম্মান করা এবং তাঁর আদেশ-নিষেধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তা মেনে চলা।
القَاهِرُ/ القَهَّارُ
(আল কাহির/আল কাহ্হার) পরাজিতকারী, অসীম ক্ষমতাবান, তিনি বান্দাদেরকে বাধ্যকারী, সৃষ্টিকুলেকে তাঁর দাসে পরিণতকারী, সকলের উপর সর্বোচ্চ। তিনিই বিজয়ী, তাঁর জন্যেই সকল মস্তক নত হয়, সব মুখমন্ডল অবনমিত হয়।
المُهَيْمِنُ
(আল মুহাইমিন) রক্ষক, কর্তৃত্বকারী, তিনি সকল বস্তুকে পরিচালনাকারী, সংরক্ষণকারী, সাক্ষী এবং সব কিছুকে বেষ্টনকারী।
العَزِيزُ
(আল আযীয) মহাপরাক্রমশালী, ক্ষমতা ও শক্তির যাবতীয় বিষয় তাঁরই অধিকারে। তিনি প্রতাপশালী- তাঁকে কেউ পারজিত করতে পারে না। তিনি বাধাদানকারী- তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, কর্তৃত্ব ও বিজয় তাঁর হাতেই- তাঁর অনুমতি ছাড়া কোন কিছুই নড়তে পারে না।
الجَبَّارُ
(আল জাব্বার) মহাশক্তিধর, তিনি যা চান তাই হয়, সৃষ্টিকুল তাঁর কাছে পরাজিত, তাঁর মহত্বের কাছে অবনমিত, তাঁর হুকুমের গোলাম। তিনি ব্যাথাতুর ভগ্নের সহায়তা করেন, অভাবীকে স্বচ্ছল করেন, কঠিনকে সহজ করেন, অসুস্থ ও বিপদাপন্নকে উদ্ধার করেন।
المُتَكَبِّرُ
(আল মুতাকাব্বির) মহাগৌরবান্বিাত তিনি মহান, সকল দোষ-ত্রুটির উর্ধ্বে। তিনি বান্দাদের প্রতি অত্যাচারের অনেক উর্ধ্বে। সৃষ্টির অবাধ্যদেরকে পরাজিতকারী। গর্ব-অহংকারের একক অধিকারী তিনিই।
الكَبيرُ
(আল কাবীর) অতীব মহান, তিনি নিজ সত্বা, গুণাবলী ও কর্মে অতিব মহান ও বড়। তাঁর চেয়ে বড় কোন বস্তু নেই। তাঁর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের সামনে সব কিছুই ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ।
الحَيـِِيُّ
(আল হায়িই) লজ্জাশীল, তাঁর সম্মানিত সত্বা ও বিশাল রাজত্বের সাথে সামঞ্জস্যশীল পন্থায় তিনি লজ্জা করেন। আল্লাহর লজ্জা হচ্ছে তাঁর দান, করুণা, উদারতা ও সম্মান।
الحَيُّ
(আল হাই) চিরঞ্জীব, তিনি চিরকাল পরিপূর্ণরূপে জীবিত। তিনি এভাবেই ছিলেন ও আছেন এবং থাকবেন। তাঁর শুরু নেই বা শেষ নেই। জগতে প্রাণের যে অস্তিত্ব তা তাঁরই দান।
القَيُّومُ
(আল কাইয়ূম) চিরস্থায়ী, তিনি নিজে নিজেই প্রতিষ্ঠিত, তিনি সৃষ্টিকুলের কারো মুখাপেক্ষী নন। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে তার সবকিছুই তাঁর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সবাই তাঁর দরবারের ভিক্ষুক।
الْوَارِثُ
(আল ওয়ারিস) উত্তরাধিকারী, সৃষ্টিকুল ধ্বংস হওয়ার পর তিনিই থাকবেন, প্রত্যেক বস্তুর মালিক ধ্বংস হওয়ার পর তা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। আমাদের কাছে যা কিছু আছে তা আমানত স্বরপ আল্লাহ্‌ দিয়েছেন। এগুলো সবই প্রকৃত মালিক আল্লাহর কাছে একদিন ফিরে যাবে।
الدَّيْانُ
(আদ দাইয়ান) মহাবিচারক, তিনি সেই সত্বা সৃষ্টিকুল যাঁর অনুগত ও অবনমিত। তিনি বান্দাদের কর্মের বিচার করবেন। ভাল কর্মে বহুগুণ প্রতিদান দিবেন। মন্দ কর্মে শাস্তি দিবেন অথবা তা ক্ষমা করে দিবেন।
المَلِكُ
(আল মালিক) মহান মালিক, বাদশা, আদেশ-নিষেধ ও কর্তৃত্বের অধিকারী তিনিই। তিনি আদেশ ও কর্মের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলকে পরিচালনাকারী। তাঁর রাজত্ব ও পরিচালনায় তাঁর কোন শরীক নেই।
الْمَالِكُ
আল (মালিক) মহান মালিক, তিনি মূলে সব কিছুর মালিক এবং মালিকানার যোগ্যও একমাত্র তিনিই। জগত পয়দা করার সময় তিনিই মালিক, তিনি ব্যতীত কেউ ছিলনা। সবশেষে সৃষ্টিকুল ধ্বংস হওয়ার পরও মালিকানা তাঁরই।
الْمَلِيْكُ
(আল মালীক) মহান বাদশা, ব্যাপকভাবে মালিকানা ও কর্তৃত্ব তাঁরই।
السُّبُّوْحُ
(আস সুব্বূহ) মহামহিম, পূতপবিত্র, তিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র। কেননা পরিপূর্ণতা, শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় গুণাবলী তাঁরই।
القُدُّوسُ
(আল ক্বুদ্দূস) মহা পবিত্র, তিনি সবধরণের ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও নিঃষ্কলুষ। কারণ পূর্ণতা বলতে যা বুঝায় এককভাবে তিনিই তার উপযুক্ত, তাঁর কোন দৃষ্টান্ত নেই।
السَّلامُ
(আস সালাম) পরম শান্তিদাতা, তিনি স্বীয় সত্বা, নাম, গুণাবলী ও কর্মে যে কোন ধরণের দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় শান্তি-শৃংখলা একমাত্র তাঁর নিকট থেকেই পাওয়া যায়।
الحَقُّ
(আল হাক্ক) মহাসত্য, তাঁর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই সংশয় নেই- না তাঁর নাম ও গুণাবলীতে না তাঁর উলুহিয়্যাতে। তিনিই সত্য মা’বূদ- তিনি ব্যতীত কোন মা’বূদ সত্য নয়।
المُبيْنُ
(আল মুবীন) সুস্পষ্টকারী, প্রকাশকারী, তাঁর একত্ববাদ, হিকমত ও রহমতের প্রতিটি বিষয় প্রকাশ্য। তিনি বান্দাদেরকে কল্যাণ ও হেদায়াতের পথ পরিস্কার বাতলিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা তার অনুসরণ করে এবং বিভ্রান্তি ও ধ্বংসের পথও সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন, যাতে তারা সতর্ক থাকতে পারে।
القَويُّ
(আল ক্বাবী)মহা শক্তিধর, তিনি পরিপূর্ণ ইচ্ছা-স্বাধিনতার সাথে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।
المَتِيْنُ
(আল মাতীন) দৃঢ়শক্তির অধিকারী, তিনি নিজ ক্ষমতা ও শক্তিতে অত্যন্ত কঠোর। কোন কাজে কষ্ট-ক্লেশ বা ক্লান্তি তাঁকে আচ্ছন্ন করে না।
الْقَادِرُ
(আল ক্বাদির) সর্বশক্তিমান, তিনি সকল বস্তুর উপর শক্তিমান, কোন কিছুই তাঁকে আপরাগ করতে পারে না- না যমীনে না আসমানে। তিনিই সব কিছু নির্ধারণ করেছেন।
القَدِيْرُ
(আল ক্বাদীর) মহাপ্রতাপশালী, এ শব্দটির অর্থ পূর্বের শব্দটিরই অনুরূপ। কিন্তু আল্‌ কাদীর শব্দটির মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা অধিক হয়।
الْمُقْتَدِرُ
(আল মুক্তাদির) মহা ক্ষমতাবান, আল্লাহর পূর্ব জ্ঞান অনুযায়ী নির্ধারণকৃত বস্তু বাস্তবায়নে ও সৃষ্টি করতে তাঁর অতিরিক্ত ক্ষমতা আছে।
العليُّ الأَعْلَى
(আল আলিউল আ’লা) সুউচ্চ, মহান, মহত্তর, সর্বোচ্চ, তিনি মর্যাদা, ক্ষমতা ও সত্বা তথা সকল দিক থেকে সর্বোচ্চ। সব কিছুই তাঁর রাজত্ব ও ক্ষমতার অধিনে। তাঁর উপরে কখনোই কিছু নেই।
المُتَعَالُ
(আল মু’তাল) চিরউন্নত, তাঁর উচ্চতা ও মহত্বের সামনে সকল বস্তু অবনমিত। তাঁর উপরে কিছু নেই। সকল বস্তু তাঁর নীচে ও অধীনে, তাঁর ক্ষমতা ও রাজত্বের বলয়ে।
الْمُقَدِّمُ
(আল মুক্বাদ্দিম) অগ্রসরকারী, তিনি নিজের ইচ্ছা ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সকল বস্তুকে বিন্যস্ত করেছেন ও স্বস্থানে রেখেছেন। তাঁর জ্ঞান ও অনুগ্রহের ভিত্তিতে সৃষ্টির কাউকে কারো উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
الْمُؤَخِّرُ
(আল মুআখখির) পশ্চাতে প্রেরণকারী, তিনি প্রতিটি বস্তুকে নিজের হিকমত অনুযায়ী যেভাবে ইচ্ছা স্থাপন করেন, যাকে ইচ্ছা অগ্রসর করেন, যাকে ইচ্ছা পশ্চাতে রাখেন। পাপী বান্দাদেরকে শাস্তি দিতে দেরী করেন, যাতে তারা তাওবা করতে পারে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে পারে।
الْمُسَعِّرُ
(আল মুসায়্যি’র)[2] মূল্য নির্ধারণকারী, তিনি নিজের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের দাবী অনুযায়ী বিভিন্ন বস্তুর মূল্য, মর্যাদা, গুরুত্ব ও প্রভাবকে বৃদ্ধি করেন অথবা হ্রাস করেন। ফলে উহা মূল্যবান (মহার্ঘ) হয় অথবা সস্তা হয়।
الْقَابِضُ
(আল কাবিয) কবজকারী, সংকুচনকারী, তিনিই প্রাণীকুলের জান কবজ করেন। তিনি নিজের হিকমত ও ক্ষমতা বলে সৃষ্টিকুলের মধ্যে যার ইচ্ছা রিযিক সংকুচন ও হ্রাস করেন- তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে।
الْبَاسِطُ
(আল বাসিত্ব) সমপ্রসারণকারী, তিনি তাঁর উদারতা ও করুণায় বান্দাদের রিযিক প্রশস্ত করেন। অতঃপর তাঁর হিকমত অনুযায়ী তা দ্বারা তাদের পরীক্ষা করেন। তিনি গুনাহগারদের তাওবা কবূল করার জন্যে দু’হস্ত প্রসারিত করেন।
الأَوَّلُ
(আল আওয়াল) অনাদী, তিনি সেই সত্বা যাঁর পূর্বে কিছুই ছিল না। তিনি সৃষ্টি করেছেন বলেই মাখলুক অস্তিত্ব লাভ করেছে। কিন্তু তাঁর অস্তিত্বের কোন শুরু নেই।
الآخِرُ
(আল আখির) অনন্ত, তাঁর পর কোন কিছু নেই। তিনিই অনন্ত, চিরকালীন ও অবিশষ্ট। পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে; অতঃপর প্রত্যাবর্তন করবে তাঁর কাছেই। কিন্তু তাঁর অস্তিত্বের শেষ নেই।
الظَّاهِرُ
(আয যাহির) প্রকাশ্য, তিনি সবকিছুর উপরে সুউচ্চ। তাঁর উচ্ছে কিছু নেই। তিনি সকল বস্তুকে করায়ত্বকারী ও বেষ্টনকারী।
البَاطِنُ
(আল বাত্বিন) গোপন, তাঁর পরে কোন কিছু নেই। তিনি দুনিয়াতে মাখলুকের দৃষ্টির আড়ালে থাকেন; তারপরও তিনি তাদের নিকটবর্তী ও তাদেরকে বেষ্টনকারী।
الوِتْرُ
(আল বিতর) বেজোড় বা একক, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি অদ্বিতীয় তাঁর কোন নযীর নেই।
السَّيِّدُ
(আস সাইয়েদ) প্রভু, নেতা, মানুষের অভাব পুরণকারী, সৃষ্টিকুলের একক নেতৃত্ব তাঁর হাতেই। তিনি তাদের মালিক ও পালনকর্তা। সবকিছু তাঁর সৃষ্টি ও দাস।
الصَّمَدُ
(আস সামাদ) অমুখাপেক্ষী, স্বয়ং সম্পূর্ণ, তিনি নিজের নেতৃত্বে স্বয়ং সম্পূর্ণ, | মাখলুকাত যাবতীয় প্রয়োজনে তাঁরই স্মরণাপন্ন হয়। কেননা তারা তাঁর কাছে বড়ই নি:স্ব তিনি সবার আহার যোগান; তাকে কেউ আহার দেয় না, তাঁর আহারের কোন দরকার নেই।
الوَاحِدُ الأَحَدُ
(আল ওয়াহিদুল আহাদ) একক, অদ্বীতিয়, সকল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতায় তিনিই একক ও অদ্বিতীয়; তাঁর কোন অংশী নেই। তাঁর অনুরূপ কোন কিছু নেই। এই গুণাবলী এককভাবে তাঁরই ইবাদতকে আবশ্যক করছে। তাঁর কোন শরীক নেই।
الإِلَهُ
(আল ইলাহ) মা’বূদ বা উপাস্য, তিনিই সত্য মাবূদ। এককভাবে তিনি যাবতীয় ইবাদত ও দাসত্ব পাওয়ার হকদার; অন্য কেউ নয়।
সংকলনে: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী
জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার
সৌদী আরব।
(তাফসীরুল উশরুর আখীর কিতাব থেকে সংকলিত)
[1] উল্লেখ্য যে, আস সাত্তার বা আস সাতির নামটি হাদীসে পাওয়া যায় না। তবে সিত্তীর নামটি হাদীসে উল্লেখি হয়েছে। যেমন:

روى أحمد وأبو داود والنسائي عن يعلى بن أمية أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: “إن الله حيي ستير يحب الحياء والستر” وصححه الألباني

ইয়ালা বিন উমাইয়া (রা.)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাশীল দোষত্রুটি গোপনকারী। তিনি লজ্জাশীলতাকে এবং মানুষের দোষত্রুটিকে গোপন করাকে ভালবাসেন। আবু দাউদ, নাসাই, আল্লামা আলবানী (রাহ:) বলেন: হাদীসটি সহীহ)
[2] এ নামটির ব্যাপারে ওলামাগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে একদল আলেমের মতে এটি আল্লাহর নামের অন্তর্ভূক্ত।

একটি মোমবাতির কাহিনী


একটি মোমবাতির কাহিনী

image

মোমের আলোয় কাজ করছিলেন খলিফা উমর রাযিআল্লাহু আনহু । এমন সময় সেখানে আসলেন তার দুই আত্মীয় । খলিফা তাড়াতাড়ি ফুঁ দিয়ে মোমবাতিটি নিভিয়ে দিলেন । অন্য আরেকটি মোমবাতি ধরিয়ে অতিথিদের বসতে দিয়ে তাদের খোজখবর নিলেন ।

কৌতুহল চাপতে না পেরে একজন জানতে চাইলেন , আমাদের দেখে কেন আপনি আগের মোমবাতি নেভালেন আর নতুন একটি জ্বালালেন ? খলিফা জবাব দিলেন : আগের মোমবাতি ছিল রাষ্ট্রের সম্পত্তি থেকে কেনা । তোমরা যেহেতু আমার আত্মীয় , তাই তোমাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত অনেক আলাপ হবে । আমার নিজের কাজে জনগণের আমানত থেকে আমি কিছু খরচ করতে পারি না । তাহলে আল্লাহর দরবারে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে । তাই নিজের টাকায় কেনা মোমবাতিটি তোমাদের দেখে জ্বালালাম ।

এই জবাবে আত্মীয়রা হতভম্ব হলেন । তারা এসেছিলেন আত্মীয়তার খাতিরে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়া যায় কি না , সেই অনুরোধ করতে । কিন্ত্ত সামান্য মোমবাতি নিয়ে খলিফার এত বিবেচনা ও সতর্কতা দেখে নিজেদের প্রস্তাব জানাতে তারা আর সাহসই করলেন না ।

আরেকবার খলিফার কাছে এক লোক অবৈধ সুবিধা চায় । খলিফার সামনে রাখা কিছু কাঠে তখন আগুন জ্বলছিল। খলিফা বললেন , ঠিক আছে । তুমি এই আগুনের ভিতর তোমার হাত কিছু সময়ের জন্য রাখো ; তারপর তোমার অনুরোধ আমি বিবেচনা করবো । লোকটি ভয় পেয়ে বললো , হে খলিফা ; এই আগুনে হাত ঢুকালে আমার হাত তো জ্বলে যাবে । খলিফা বললেন , তুমি দুনিয়ার এই সামান্য আগুনকে ভয় পাচ্ছ অথচ আমাকে তুমি দোযখের অনন্ত আগুনের ভিতরে নিয়ে যেতে চাও ? তদবিরকারী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে যায়।

***********************