Category Archives: কুরআন ও হাদীসের আলোকে মহাসাফল্য ও বড় ব্যর্থতা

মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা ও তাঁকে ভালোবাসা


মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা ও তাঁকে ভালোবাসা

মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা ও তাঁকে ভালোবাসা

image

মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী ;
“আর যারা কাঁদতে কাঁদতে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়, আর (কুরআন) তাদের ভয় ভীতি ও নম্রতাকে আরো বৃদ্ধি করে দেয়”। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ১০৯)

“তবে কি তোমরা এই কথায় বিস্মিত হচ্ছো আর হাসছো কিন্তু কাঁদছো না” (সূরা নাজমঃ ৫৯-৬০)

১। হযরত ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেনঃ আমার সামনে কুরআন তিলাওয়াত করো। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আমি আপনার সামনে পড়বো, অথচ আপনার কাছেই তা নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন ; আমি অপরের তিলাওয়াত শুনতে ভালোবাসি। সুতরাং আমি তার সামনে সূরা নিসা পড়ে শুনালাম। পড়ার সময় যখন আমি এই আয়াতে এসেছি “তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেকে উম্মত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থাপিত করবো এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষীরুপে উপস্থিত করবো?”(সুরা নিসাঃ ৪১)। তিনি বললেন, বেশ যথেষ্ট হয়েছে, থামো। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর মুবারক দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। [বুখারি মুসলিম]

২। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক (নসীহতপূর্ণ) ভাষণ দিলেন, যে ধরণের ভাষণ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেন ; আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে পারতে,তাহলে হাসতে খুবই কম; কিন্তু কাঁদতে খুবই বেশী। তিনি (রাবী) বলেন, একথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগণ কাপড়ে মুখ ঢাকলেন এবং ডুকরে কাঁদতে লাগলেন। [ বুখারি ও মুসলিম]

৩। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে সে দোযখে প্রবেশ করবে না যে পর্যন্ত দুধ স্তনে ফিরে না আসে। আর আল্লাহর পথে জিহাদের ধুলোবালি এবং দোযখের ধোঁয়া কখনো একত্রিত হবে না। (বুখারি ও মুসলিম )

৪। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :৭ শ্রেণীর লোকদের মহান আল্লাহ সেদিন তাঁর সুশীতল ছায়াতলে স্থান দিবেন, যেদিন তাঁর ছাড়া অন্য কোন ছায়াই থাকবে না। তাঁরা হলেন
• ন্যায়বিচারক শাসক বা নেতা
• মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল যুবক
• মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি
• যে দুজন লোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব করে এবং এ জন্যেই আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়
• এরুপ ব্যক্তি যাকে কোনো অভিজাত পরিবারের সুন্দরী নারী খারাপ কাজে আহবান করেছে, কিন্তু সে বলে দিল, আমি আল্লাহকে ভয় করি
• যে ব্যক্তি এতো গোপনভাবে দান-খয়রাত করে যে, তার ডান হাত কি দান করলো, বাঁ হাতেও তা জানতে পারলো না
• এরুপ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকির করে এবং দু’চোখের পানি ফেলে (কাঁদে)। [বুখারি ও মুসলিম]

৫। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন শিখরীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে দেখি তিনি নামায পড়ছেন এবং আল্লাহর ভয়ে কাঁদার দরুণ তাঁর পেট থেকে হাঁড়ির মতো আওয়াজ বেরুচ্ছে। [আবু দাউদ]

৬। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম উবাই ইবন কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন; মহামহিম আল্লাহ আমাকে তোমার সামনে সূরা (বাইয়্যিনাহ) পড়তে আদেশ করেছেন। তিনি (উবাই) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি (আল্লাহ) কি আমার নাম উল্লেখ করেছেন? তিনি (নবী) বললেন; হ্যাঁ। অতঃপর উবাই(রা) কেঁদে উঠলেন। [বুখারি ও মুসলিম ]

৭। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর একদা হযরত আবু বকর(রা) হযরত উমর (রা) কে বললেন, চলো, আমরা উম্মে আয়মানকে দেখে আসি, যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দেখতে যেতেন। অতঃপর তাঁরা যখন তাঁর কাছে পৌছলেন, তিনি কেঁদে ফেললেন।তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কি জানেন না যে, মহান আল্লাহর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত মঙ্গলময় পরিবেশে ও কুশলেই আছেন? তিনি বললেন, আমি কাঁদছি এ জন্য যে, আসমান থেকে ওহী আসা যে বন্ধ হয়ে গেলো! এ কথায় তাদের অন্তর প্রভাবিত হলো এবং তাঁর সাথে তাঁরাও কাঁদতে শুরু করে দিলেন। (মুসলিম)

৮। হযরত ইবন উমার(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যথাজনিত রোগ যখন তীব্র আকার ধারণ করলো, সে সময় একদা তাঁকে নামাযে আহ্বান করা হলে তিনি বললেন; আবু বকরকে আদেশ করো, সে যেন সাহাবাদের সাথে নামায পড়ে(অর্থাৎ ইমাম হয়ে নামায পড়ায়) হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তো অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ, যখন তিনি কুরআন তিলাওয়াত করবেন, তখন ক্রন্দন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। অতঃপর আবার তিনি বললেন; তাকে আদেশ কর সে যেন নামায পড়ায়।

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (আয়েশা) বলেন, আমি বললাম, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আপনার জায়গায় দাঁড়াবেন কান্নার কারণে মুসল্লিদের (কুরআন) শুনতে পারবেন না। (বুখারি ও মুসলিম)

৯। হযরত ইবরাহীম ইবন আবদুর রহমন ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একদা আবদুর রহমান ইবন আউফের সামনে খাবার পেশ করা হলো, তখন তিনি ছিলেন রোযাদার। তিনি বললেন, মুস’আব ইবন উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হয়ে গেছেন। আর তিনি আমার চাইতে উত্তম লোক ছিলেন। তাঁকে কাফন দেয়ার মতো কাপড়ের ব্যবস্থাই ছিল না। তবে একটি চাদর ছিল, এ দ্বারা তাঁর মাথা ঢাকতে চাইলে তাঁর পা দুটি অনাবৃত হয়ে যেত, আর পা ঢাকতে চাইলে মাথা অনাবৃত হয়ে যেতো। অতঃপর আমাদের পার্থিব সুখ স্বাচ্ছন্দ দেয়া হলো। ভয় হচ্ছে, আমাদের সৎকাজের বিনিময়ে ইহকালের কখনো দস্তরখানে (খানার স্থানে) বসে খাদ্য গ্রহণ করেননি, আর কখনো চাপাতি রুটিও খাননি। (বুখারী)

১০। হযরত আবু উমাম সুদাই ইবন আজলান আল-বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহর কাছে দুটি বিন্দু (ফোঁটা) দুটি নিদর্শনের চাইতে প্রিয় বস্তু আর কিছু নেই। তার একটি হলো আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রুবিন্দু এবং অপরটি হলো; আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তবিন্দু। আর নিদর্শন দুটি হলো, আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং আল্লাহর ফরযসমূহের মধ্য থেকে কোন ফরয আদায় করা। (তিরমিযী)

১১। হযরত ইরবাদ ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সামনে এমন এক উপদেশপূর্ণ খুতবা দেন যাতে আমাদের অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে। (আবু দাউদ ও তিরমিযি)

লিংক

কুরআন ও হাদীসের আলোকে মহাসাফল্য ও বড় ব্যর্থতা (২য় পর্ব)


কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জান্নাত

কুরআন ও হাদীসের আলোকে মহাসাফল্য ও বড় ব্যর্থতা (২য় পর্ব)

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

জান্নাত ও জাহান্নামের স্তরসমূহ

প্রথমত: জান্নাতের স্তরসমূহ: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥ دَرَجَٰتٖ مِّنۡهُ وَمَغۡفِرَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٩٦ ﴾ [النساء: ٩٥، ٩٦

“বসে থাকা মুমিনগণ, যারা ওযরগ্রস্ত নয় এবং নিজদের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীগণ এক সমান নয়। নিজদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদকারীদের মর্যাদা আল্লাহ বসে থাকাদের উপর অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ প্রত্যেককেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে বসে থাকা মুমিনদের উপর মহা পুরস্কার দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাঁর পক্ষ থেকে অনেক মর্যাদা, ক্ষমা ও রহমত। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা: ৯৫-৯৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ أَفَمَنِ ٱتَّبَعَ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِ كَمَنۢ بَآءَ بِسَخَطٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأۡوَىٰهُ جَهَنَّمُۖ وَبِئۡسَ ٱلۡمَصِيرُ ١٦٢ هُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِمَا يَعۡمَلُونَ ١٦٣ ﴾ [ال عمران: ١٦٢، ١٦٣]

“যে আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছে সেকি তার মত যে আল্লাহর ক্রোধ নিয়ে ফিরে এসেছে? আর তার আশ্রয়স্থল জাহান্নাম এবং তা কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল! তাদের মর্যাদা আল্লাহর নিকট বিভিন্ন। আর তারা যা করে, আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা আলে-‘ইমরান: ১৬২-১৬৩] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন

﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَمَغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ ٤ ﴾ [الانفال: ٢، ٤]

“মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক।” [সূরা আনফাল: ২-৪]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ لَيَتَرَاءَوْنَ أَهْلَ الْغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ، كَمَا تَتَرَاءَوْنَ الْكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الْغَابِرَ مِنَ الْأُفُقِ مِنَ الْمَشْرِقِ أَوِ الْمَغْرِبِ، لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الْأَنْبِيَاءِ لَا يَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ، قَالَ «بَلَى، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ رِجَالٌ آمَنُوا بِاللهِ وَصَدَّقُوا الْمُرْسَلِينَ

আবু সাঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় জান্নাতীরা জান্নাতে তাদের মাথার উপর থেকে প্রাসাদের অধিবাসীদের দেখতে পাবে যেমনটি দেখতে পাবে প্রজ্জলিত নক্ষত্র আসমানের পশ্চিম বা পূর্ব প্রান্তে উদীয়মান। জান্নাতীদের মধ্যে তাদের মর্যাদা ও সম্মান অধিক হওয়ার কারণে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল, এতো নবীদের স্তর। এ স্তরে নবীরা ছাড়া অন্য কেউ পৌঁছতে পারবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, হ্যাঁ, আমি সে সত্ত্বার কসম করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, তারা হল, ঐ সব লোক যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং নবীদের বিশ্বাস করেছেন।” [66]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: قَالَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا دَخَلَ الْجَنَّةَ: اقْرَأْ وَاصْعَدْ، فَيَقْرَأُ وَيَصْعَدُ بِكُلِّ آيَةٍ دَرَجَةً، حَتَّى يَقْرَأَ آخِرَ شَيْءٍ مَعَهُ”.

আবু সাঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন কুরআনওয়ালাকে বলা হবে, যখন সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তুমি তিলাওয়াত কর এবং উপরের দিক উঠতে থাক। তখন সে প্রতি আয়াত তিলাওয়াতের অনুকুলে জান্নাতের একটি স্তর অতিক্রম করতে থাকবে। এভাবে তার সাথে থাকা শেষ আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা পর্যন্ত সে চলতে থাকবে।” [67]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يُقَالُ، يَعْنِي لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ،: اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَأُ بِهَا

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন, “কুরআনের সঙ্গী তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে, তুমি কুরআন পড় এবং উপরের দিকে উঠতে থাক। দুনিয়াতে তুমি যেভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে, সেভাবে তিলাওয়াত কর। কারণ, তোমার অবস্থান হবে শেষ যে আয়াতটি তুমি তিলাওয়াত করবে সেখানে।” [68]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ، وَأَقَامَ الصَّلاَةَ، وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الجَنَّةَ، جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ جَلَسَ فِي أَرْضِهِ الَّتِي وُلِدَ فِيهَا»، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلاَ نُبَشِّرُ النَّاسَ؟ قَالَ: «إِنَّ فِي الجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ، أَعَدَّهَا اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ، فَاسْأَلُوهُ الفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الجَنَّةِ وَأَعْلَى الجَنَّةِ – أُرَاهُ – فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ، وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الجَنَّةِ»

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সিয়াম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্ত্তত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দুরত্বের ন্যায়। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচাইতে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে।” [69] জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান হলো ‘আস-ওয়াসীলা’। যেমন হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ، فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا، ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ، فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ، لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ، فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ

আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, “তোমরা যখন মু‘আযযিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ করবে। কারণ যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দু‘আ করবে। ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্হান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশাকরি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।”[70] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আসনের নামকে ওয়াসীলা বলার কারণ হলো এটা রহমানের আরশের সর্বাধিক নিকটবর্তী ও আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদার আসন। [71]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামের নিম্নতম স্তরসমূহ: ‘আদ-দারাজাতু’ শব্দের অর্থ এক স্তরের উপর অন্য স্তর, আর ‘আদ-দারকু’ শব্দের অর্থ এক স্তরের নিম্নের অন্য স্তর। অতঃএব, জান্নাতের ক্ষেত্রে বলা হয় আদ-দারাজাত বা স্তরসমূহ আর জাহান্নামের ক্ষেত্রে বলা হয় দারাকাত বা একটার নিচে অন্যটি। তবে কখনও কখনও জাহান্নামকেও দারাজাত বলা হয়।[72] যেমন আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা দেয়ার পরে বলেছেন,

﴿ وَلِكُلّٖ دَرَجَٰتٞ مِّمَّا عَمِلُواْۚ ١٣٢ ﴾ [الانعام: ١٣٢

“আর তারা যা করে, সে অনুসারে প্রত্যেকের মর্যাদা রয়েছে।” [সূরা আল-আল-আন‘আম: ১৩২] আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ فِي ٱلدَّرۡكِ ٱلۡأَسۡفَلِ مِنَ ٱلنَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمۡ نَصِيرًا ١٤٥ ﴾ [النساء: ١٤٥

“নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে।” [সূরা আন্-নিসা: ১৪৫]

عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما: ((أنه رأى فِي النَّوْمِ كَأَنَّ مَلَكَيْنِ أخذاه، فَذَهَبَا به إِلَى النَّارِ، فَإِذَا هِيَ مَطْوِيَّةٌ كَطَيِّ البِئْرِ وَإِذَا لَهَا قَرْنَانِ وَإِذَا فِيهَا أُنَاسٌ قَدْ عَرَفْتُهُمْ، فَجَعَلْتُ أَقُولُ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ النَّارِ، قَالَ: فَلَقِيَنَا مَلَكٌ آخَرُ فَقَالَ لِي: لَمْ تُرَعْ، فَقَصَصْتُهَا عَلَى حَفْصَةَ فَقَصَّتْهَا حَفْصَةُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «نِعْمَ الرَّجُلُ عَبْدُ اللَّهِ، لَوْ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ» فَكَانَ بَعْدُ لاَ يَنَامُ مِنَ اللَّيْلِ إِلَّا قَلِيلًا

আবদুল্লাহ্ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি স্বপ্নে দেখলেন, যেন দু’জন ফিরিশতা তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলেছেন। তা যেন কুপের পাড় বাঁধানোর ন্যায় পাড় বাঁধানো। তাতে দু’টি শিং রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে এমন কতক লোক, যাদের আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি বলতে লাগলাম, আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহ্‌র নিকট পানাহ চাই। তিনি বলেন, তখন অন্য একজন ফিরিশতা আমাদের সংগে মিলিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, ভয় পেও না। আমি এ স্বপ্ন (আমার বোন উম্মুল মু’মিনীন) হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে বর্ণনা করলাম। এরপর হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করলেন। তখন তিনি বললেনঃ আবদুল্লাহ্ কতই ভাল লোক! যদি রাত জেগে সে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করত! এরপর থেকে আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাতে খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন।”[73]

عن عتبة بن غزوان قال عن قعر جهنم: فَإِنَّهُ قَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ الْحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفَةِ جَهَنَّمَ، فَيَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا، لَا يُدْرِكُ لَهَا قَعْرًا، وَوَاللهِ لَتُمْلَأَنَّ، أَفَعَجِبْتُمْ؟

উতবা ইবন গাযওয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জাহান্নামের তলদেশ সম্পর্কে বলেন, “আমার সামনে আলোচনা করা হয়েছে যে, জাহান্নামের এক কোণে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হলে তা সত্তর বছর পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে যেতে থাকবে, তথাপিও তা তার তলদেশে পৌঁছতে পারবে না।” [74]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ سَمِعَ وَجْبَةً، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَدْرُونَ مَا هَذَا؟» قَالَ: قُلْنَا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «هَذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ فِي النَّارِ مُنْذُ سَبْعِينَ خَرِيفًا، فَهُوَ يَهْوِي فِي النَّارِ الْآنَ، حَتَّى انْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসাছিলাম। হঠাৎ ধপাস করে একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এ কিসের আওয়াজ, তোমরা কি জান? বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এ একটি পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অতঃপর তা কেবল যেতেই ছিল। যেতে যেতে এখন উহা তার অতল তলে গিয়ে পৌছেছে।” [75]

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ সর্বনিম্ন জান্নাতীর মর্যাদা ও সবচেয়ে কম শাস্তিপ্রাপ্ত জাহান্নামীর শাস্তি

প্রথমত: সর্বনিম্ন জান্নাতীর মর্যাদা:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنِّي لَأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا، وَآخِرَ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولًا، رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ كَبْوًا، فَيَقُولُ اللَّهُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا، فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَإِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا وَعَشَرَةَ أَمْثَالِهَا – أَوْ: إِنَّ لَكَ مِثْلَ عَشَرَةِ أَمْثَالِ الدُّنْيَا – فَيَقُولُ: تَسْخَرُ مِنِّي – أَوْ: تَضْحَكُ مِنِّي – وَأَنْتَ المَلِكُ ” فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، وَكَانَ يَقُولُ: «ذَاكَ أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ مَنْزِلَةً

আব্দুল্লাহ্ ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সর্বশেষ যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হবে এবং সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক ব্যক্তি অধোবদন অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং সে ফিরে আসবে ও বলবে, হে প্রভু! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। পুনরায় আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য দুনিয়ার সমতুল্য এবং তার দশগুণ বরাদ্দ দেয়া হল, অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার দশ গুণ তোমাকে দেয়া হল। তখন লোকটি বলবে, প্রভু! তুমি কি আমার সাথে বিদ্রুপ বা হাসি ঠাট্টা করছ? (রাবী বলেন) আমি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে হাসতে দেখলাম যে তাঁর দন্তরাজি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি বললেন, এটা জান্নাতীদের নিম্নতম মর্যাদা।” [76]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً، رَجُلٌ صَرَفَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ قِبَلَ الْجَنَّةِ، وَمَثَّلَ لَهُ شَجَرَةً ذَاتَ ظِلٍّ، فَقَالَ: أَيْ رَبِّ، قَدِّمْنِي إِلَى هَذِهِ الشَّجَرَةِ أَكُونُ فِي ظِلِّهَا ” وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِنَحْوِ حَدِيثِ ابْنِ مَسْعُودٍ، وَلَمْ يَذْكُرْ: فَيَقُولُ: «يَا ابْنَ آدَمَ مَا يَصْرِينِي مِنْكَ؟» إِلَى آخِرِ الْحَدِيثِ، وَزَادَ فِيهِ: ” وَيُذَكِّرُهُ اللهُ، سَلْ كَذَا وَكَذَا، فَإِذَا انْقَطَعَتْ بِهِ الْأَمَانِيُّ، قَالَ اللهُ: هُوَ لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ “، قَالَ: ” ثُمَّ يَدْخُلُ بَيْتَهُ، فَتَدْخُلُ عَلَيْهِ زَوْجَتَاهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ، فَتَقُولَانِ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَاكَ لَنَا، وَأَحْيَانَا لَكَ “، قَالَ: ” فَيَقُولُ: مَا أُعْطِيَ أَحَدٌ مِثْلَ مَا أُعْطِيتُ

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছে, যে ব্যক্তি সবচেয়ে কম মযার্দার জান্নাতী হবে তার মুখখানি আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে জান্নাতের দিকে করে দেবেন এবং তার জন্যে একটি ছায়াযুক্ত বৃক্ষ দাঁড় করাবেন। সে বলবে, হে আমার প্রভু, আমাকে ঐ গাছের নিকটে পৌঁছে দিন। আমি এর ছায়ায় আশ্রয় নেব। এ হাদীসের অবশিষ্ট অংশ, ইবনে মাস্উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসের অনু্রূপ। তবে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, “হে আদম সন্তান, আমার নিকট তোমার চাওয়া কবে নাগাদ শেষ হবে?”………শেষ পর্যন্ত এ বাক্যটি উল্লেখ করেন নি। অবশ্য এ বণর্নায় আরো আছে: এটা ওটা চাওয়ার জন্যে আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর যখন তার সমস্ত আকাংখা শেষ হয়ে যাবে, তখন তাকে বলবেন: তুমি যা কামনা করেছো তা এবং আরো দশগুণ বেশী তোমাকে দেয়া হলো। অতঃপর সে ব্যক্তি তার জান্নাতের গৃহে প্রবেশ করবে এবং প্রবেশ করবে তার কাছে টানা টানা চোখ বিশিষ্ট দু’জন হুর তার স্ত্রী হিসাবে। তারা বলবে, সেই আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি তোমাকে আমাদের জন্যে এবং আমাদেরকে তোমার জন্যে নির্ধারিত করেছেন। তিনি বলেন, অতঃপর সে ব্যক্তি বলবে, আমাকে যা কিছু দান করা হয়েছে, অনুরূপ আর কাউকে প্রদান করা হয়নি। [77]

وعن المغيرة بن شعبة t يرفعه: “سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ، مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً، قَالَ: هُوَ رَجُلٌ يَجِيءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، فَيُقَالُ لَهُ: ادْخُلِ الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ، وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ، فَيُقَالُ لَهُ: أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا؟ فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: لَكَ ذَلِكَ، وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ، فَقَالَ فِي الْخَامِسَةِ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ، وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ، وَلَذَّتْ عَيْنُكَ، فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، قَالَ: رَبِّ

মুগীরা ইবনে শো’বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত, মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবকে জিজ্ঞেস করলেন, “একজন নিম্ন শ্রেণীর জান্নাতীর কিরূপ মযার্দা হবে? আল্লাহ তা’আলা বললেন, সমস্ত জান্নাতবাসীকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে বলা হবে, যাও, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলবে, হে প্রভু, এখন ওখানে গিয়ে কি করবো? প্রত্যেক ব্যক্তিই তো স্ব স্ব স্থান ও যা যা নেয়ার তা নিয়ে ফেলেছে। আমি ওখানে গিয়ে কিছুই তো পাবো না। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, দুনিয়ার যে কোন বাদশার রাজ্যের সম পরিমাণ এক রাজত্ব তোমাকে দেয়া হবে? সে বলবে, আমি সন্তুষ্ট, হে আমার প্রভু, তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাকে তা দেয়া হল এবং তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ দেয়া হল। পঞ্চম বারে সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, হে আমার রব। অতঃপর তিনি বলবেন, তোমাকে তা দেয়া হলো এবং তার দশগুণ পরিমাণ দেয়া হলো। আর তোমাকে তাও দেয়া হলো, যা তোমার মন চায় ও চোখে ভাল লাগে। সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।” [78] দ্বিতীয়ত: সর্বনিম্ন জাহান্নামীর শাস্তি, কঠিন উষ্ণতা ও আযাবের তারতম্য:

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ القِيَامَةِ رَجُلٌ، عَلَى أَخْمَصِ قَدَمَيْهِ جَمْرَتَانِ، يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِي المِرْجَلُ وَالقُمْقُمُ» وفي رواية لمسلم: « مَا يَرَى أَنَّ أَحَدًا أَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَإِنَّهُ لَأَهْوَنُهُمْ عَذَابًا

নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “কিয়ামতের দিন সর্বাধিক হালকা আযাব যাকে দেয়া হবে, সে হল, ঐ ব্যক্তি যাকে আগুনের কয়লার দুটি জুতো পরানো হবে। তার মগজ এরকম টগবগ করতে থাকবে যেমনটি টগবগ করতে থাকে পিতলের পাতিলের গরম পানি।” [79] মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, “অথচ সে তার মত এত কষ্ট বা শাস্তি আর কাউকে দিচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে পারবে না।”[80]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «نَارُكُمْ هَذِهِ الَّتِي يُوقِدُ ابْنُ آدَمَ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا، مِنْ حَرِّ جَهَنَّمَ» قَالُوا: وَاللهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً، يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «فَإِنَّهَا فُضِّلَتْ عَلَيْهَا بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا، كُلُّهَا مِثْلُ حَرِّهَا

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের এ অগ্নি যা আদম সন্তানগণ প্রজ্জলিত করে তা জাহান্নামের অগ্নির তাপমাত্রার সত্তর ভাগের একভাগ। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর কসম! এ আগুন কি যথেষ্ট ছিল না? তিনি বললেন, সে আগুন তো এ আগুনের তুলনায় উনসত্তর গুন বেশী তাপমাত্রা সম্পন্ন। এ উনসত্তরের প্রতিটি গুন দুনিয়ার আগুনের সমমানের।” [81]

وعن أبي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ “اشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ: رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا، فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ: نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ، فَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الحَرِّ، وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الزَّمْهَرِيرِ

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জাহান্নাম তাঁর রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন তিনি তাঁকে দু’টি নিঃশ্বাস ছাড়ার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর একটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। অতএব তোমরা যে গ্রীষ্মের উষ্ণতা ও শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক (তা নিঃশ্বাসের প্রভাব)।” [82]

عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُونَ أَلْفَ زِمَامٍ، مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ يَجُرُّونَهَا

শাকীক রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে আনা হবে। সেদিন এর মধ্যে সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। তারা তা টেনে নিয়ে যাবে।” [83]

عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى حُجْزَتِهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى تَرْقُوَتِهِ

সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামক বলেছেন, “জাহান্নামীদের কাউকে তো অগ্নি তার উভয় টাখনূ পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, আবার কাউকে তার কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে এবং কাউকে তার গর্দান পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে।” [84] এ হাদীসে জাহান্নামীদের আযাবের তারতম্য বুঝানো হয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি, আরো পানাহ চাচ্ছি সে সব কথা ও কাজ থেকে যা জাহান্নামের নিকটবর্তী করে। [85]

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ জান্নাতী ও জাহান্নামীদের পোশাক পরিচ্ছেদ

প্রথমত: জান্নাতীদের পোশাক পরিচ্ছেদ:

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلًا ٣٠ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهِمُ ٱلۡأَنۡهَٰرُ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرٗا مِّن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَّكِ‍ِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ وحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقٗا ٣١ ﴾ [الكهف: ٣٠، ٣١]

“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, নিশ্চয় আমি এমন কারো প্রতিদান নষ্ট করব না, যে সুকর্ম করেছে। এরাই তারা, যাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণের চুড়ি দিয়ে এবং তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু সিল্কের সবুজ পোশাক। তারা সেখানে (থাকবে) আসনে হেলান দিয়ে। কী উত্তম প্রতিদান এবং কী সুন্দর বিশ্রামস্থল!।” [সূরা আল-কাহফ: ৩০-৩১]

﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١

“তাদের উপর থাকবে সবুজ ও মিহি রেশমের পোশাক এবং মোটা রেশমের পোশাক, আর তাদেরকে পরিধান করানো হবে রূপার চুড়ি এবং তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।” [সূরা আল্-ইনসান: ২১]

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يُدۡخِلُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣

“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং যেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।” [সূরা আল-হাজ্জ: ২৩]

﴿ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٣٣ ﴾ [فاطر: ٣٣]

“চিরস্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদেরকে স্বর্ণের চুড়ি ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।” [সূরা: ফাতির: ৩৩] আল-ইসতাবরাক: হলো যা কারুকার্যখচিত রেশমী পোশাক। [86] কেউ কেউ বলেন, ঘন রেশমী কাপড়, কেউ আবার বলেছেন, স্বর্ণখচিত রেশমী কাপড়, বা রেশমের কাপড়। [87] আদ-দিবাজ: সিল্কের তৈরি পোশাক। [88] আস-সুনদুস: সূক্ষ্ম রেশমের তৈরি এক ধরণের রেশমী কাপড়। [89] আদ-দুররা: মহামূল্যবান মণিমুক্তা। [90]

عن أبي هريرة t قال: سَمِعْتُ خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنِ، حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوءُ»

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আমি আমার দোস্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মু’মিনের যে পর্যন্ত তার উযুর পানি পৌছব, সে পর্যন্ত অলঙ্কার পরানো হবে। [91]

عن عبد الله بن مسعود t ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَوَّلُ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ ضَوْءُ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى لَوْنِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ، لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُورِ الْعَيْنِ، عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً، يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ لُحُومِهِمَا وَحُلَلِهِمَا كَمَا يُرَى الشَّرَابُ الْأَحْمَرُ فِي الزُّجَاجَةِ الْبَيْضَاءِ

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রথম দল যেটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের মত উজ্জল হবে। আর দ্বিতীয় জামাত যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আসমানে প্রজ্জলিত নক্ষত্র হতেও অধিক সুন্দর হবে। তাদের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ‘হুরে ঈন’ থেকে দুটি করে স্ত্রী থাকবে। আর প্রতিটি স্ত্রীর জন্য সত্তুরটি চাদর থাকবে। তাদের পায়ের গোড়ালীর মগজ তাদের চামড়ার উপর থেকে দেখা যাবে। আর তাদের চাদরের সৌন্দর্য হল, সাদা কাঁচের গ্লাসে লাল মদের মত।” [92] একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেশমী কাপড় হাদিয়া দেয়া হয়েছিল, লোকজন কাপড়টি দেখে খুব আশ্চর্য হলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«تَعْجَبُونَ مِنْ هَذِهِ لَمَنَادِيلُ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ فِي الْجَنَّةِ أَحْسَنُ مِمَّا تَرَوْنَ؟»

“তোমরা এটা দেখে আশ্চর্য হলে? অথচ জান্নাতে সা‘দ ইবন মু‘য়ায এর রুমাল এর চেয়েও অধিক উত্তম।” [93] দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের পোশাক পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের পোশাকের কথা কুরআনে বর্ণনা করেছে, এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

﴿ ۞هَٰذَانِ خَصۡمَانِ ٱخۡتَصَمُواْ فِي رَبِّهِمۡۖ فَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ قُطِّعَتۡ لَهُمۡ ثِيَابٞ مِّن نَّارٖ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ ١٩ يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِي بُطُونِهِمۡ وَٱلۡجُلُودُ ٢٠ ﴾ [الحج: ١٩، ٢٠

“এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে।” [সূরা আল-হাজ্জ: ১৯-২০]

﴿ وَتَرَى ٱلۡمُجۡرِمِينَ يَوۡمَئِذٖ مُّقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ ٤٩ سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٖ وَتَغۡشَىٰ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ ٥٠ ﴾ [ابراهيم: ٤٩، ٥٠]

“আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে।” [সূরা ইবরাহিম: ৪৯-৫০] ﴿ قُطِّعَتۡ لَهُمۡ ثِيَابٞ مِّن نَّارٖ ﴾ তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন, তামার তৈরি পোশাক যা উত্তাপ দিলে অত্যধিক গরম হয়। يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন, তামার পাত্রে পানি ফুটানো হবে, ফলে তা মারাত্মক গরম হবে। তাদের মাথায় ঢেলে দিলে পেট থেকে সব গলে বের হবে এবং ও চামড়া জ্বলে পুড়ে যাবে। [94] مُّقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ তারা শিকলে বাঁধা থাকবে। অর্থাৎ এক জনের সাথে অন্য জনকে বেঁধে রাখা হবে। প্রত্যেক শ্রেণির অপরাধীকে সম অপরাধীর সাথে বেঁধে রাখা হবে। [95] سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٖ তাদের পোশাক হবে আলকাতরার। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তামার দ্রবীভূত উষ্ণ পোশাক। [96]

وعن أبي مالك الأشعري قال: إن النبي r قَالَ: “أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ، لَا يَتْرُكُونَهُنَّ: الْفَخْرُ فِي الْأَحْسَابِ، وَالطَّعْنُ فِي الْأَنْسَابِ، وَالْاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ، وَالنِّيَاحَةُ ” وَقَالَ: «النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا، تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ، وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ»

আবু মালিক আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলিয়াত বিষয়ের চারটি জিনিস রয়েছে যা তারা ত্যাগ করছে না। বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব, অন্যের বংশের প্রতি কটাক্ষ, গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে! বৃষ্টি প্রার্থনা এবং মৃতদের জন্য বিলাপ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, বিলাপকারী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিনে তাঁকে দাঁড় করানো হবে, তখন তার দেহে আলকাতরার আবরণ থাকবে এবং খসখসে লোহার পোষাক থাকবে।” [97]

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ জান্নাত ও জাহান্নামের বিছানা

প্রথমত: জান্নাতীদের বিছানাপত্র: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ مُتَّكِ‍ِٔينَ عَلَىٰ فُرُشِۢ بَطَآئِنُهَا مِنۡ إِسۡتَبۡرَقٖۚ وَجَنَى ٱلۡجَنَّتَيۡنِ دَانٖ ٥٤ ﴾ [الرحمن: ٥٤]

“সেখানে পুরু রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায় তারা হেলান দেয়া অবস্থায় থাকবে এবং দুই জান্নাতের ফল-ফলাদি থাকবে নিকটবর্তী।” [সূরা আর-রহমান: ৫৪] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَفُرُشٖ مَّرۡفُوعَةٍ ٣٤ ﴾ [الواقعة: ٣٤]

“(তারা থাকবে) সুউচ্চ শয্যাসমূহে।” [সূরা আল্-ওয়াকিয়া: ৩৪] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ مُتَّكِ‍ِٔينَ عَلَىٰ رَفۡرَفٍ خُضۡرٖ وَعَبۡقَرِيٍّ حِسَانٖ ٧٦ ﴾ [الرحمن: ٧٦]

“তারা সবুজ বালিশে ও সুন্দর কারুকার্য খচিত গালিচার উপর হেলান দেয়া অবস্থায় থাকবে।” [সূরা আর-রহমান: ৭৬] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ فِيهَا سُرُرٞ مَّرۡفُوعَةٞ ١٣ وَأَكۡوَابٞ مَّوۡضُوعَةٞ ١٤ وَنَمَارِقُ مَصۡفُوفَةٞ ١٥ وَزَرَابِيُّ مَبۡثُوثَةٌ ١٦ ﴾ [الغاشية: ١٣، ١٦]

“সেখানে থাকবে সুউচ্চ আসনসমূহ। আর প্রস্তুত পানপাত্রসমূহ। আর সারি সারি বালিশসমূহ। আর বিস্তৃত বিছানো কার্পেটরাজি।” [সূরা আল-গাশিয়াহ: ১৩-১৬] النمارق অর্থ বালিশ। [98] العبقريّ বিছানা, কারো মতে, বিছানো সব কিছুকে العبقريّ বলে। এটা অতিরিক্ত গুণ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। الزرابيّ বিছানা। কার্পেট। الرفرف বালিশ, কেউ বলেছেন, আংটা, কারো মতে, বিছানার এক পাশ। [99]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের বিছানা ও লেপ: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا وَٱسۡتَكۡبَرُواْ عَنۡهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُجۡرِمِينَ ٤٠ لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٞ وَمِن فَوۡقِهِمۡ غَوَاشٖۚ وَكَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلظَّٰلِمِينَ ٤١ ﴾ [الاعراف: ٤٠، ٤١]

“নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তার ব্যাপারে অহঙ্কার করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে। আর এভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিদান দেই। তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামের বিছানা এবং তাদের উপরে থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন। আর এভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিদান দেই।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ৪০-৪১] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ لَهُم مِّن فَوۡقِهِمۡ ظُلَلٞ مِّنَ ٱلنَّارِ وَمِن تَحۡتِهِمۡ ظُلَلٞۚ ذَٰلِكَ يُخَوِّفُ ٱللَّهُ بِهِۦ عِبَادَهُۥۚ يَٰعِبَادِ فَٱتَّقُونِ ١٦ ﴾ [الزمر: ١٦]

“তাদের জন্য তাদের উপরের দিকে থাকবে আগুনের আচ্ছাদন আর তাদের নিচের দিকেও থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন; এদ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ভয় দেখান। ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা আমাকেই ভয় কর।” [সূরা আয্-যুমার: ১৬]

ষোড়শ পরিচ্ছেদ জান্নাতী ও জাহান্নামীদের খাদ্য

প্রথমত: জান্নাতীদের খাদ্য: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন

﴿ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ أَنتُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ تُحۡبَرُونَ ٧٠ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِيٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٧٢ لَكُمۡ فِيهَا فَٰكِهَةٞ كَثِيرَةٞ مِّنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٧٣ ﴾ [الزخرف: ٧٠، ٧٣

“তোমরা সস্ত্রীক সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী। আর এটিই জান্নাত, নিজদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর অধিকারী করা হয়েছে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক ফলমূল, যা থেকে তোমরা খাবে।” [সূরা আয্-যুখরুফ: ৭০-৭৩] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَنَعِيمٖ ١٧ فَٰكِهِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ وَوَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ١٨ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيٓ‍َٔۢا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ١٩ مُتَّكِ‍ِٔينَ عَلَىٰ سُرُرٖ مَّصۡفُوفَةٖۖ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ كُلُّ ٱمۡرِيِٕۢ بِمَا كَسَبَ رَهِينٞ ٢١ وَأَمۡدَدۡنَٰهُم بِفَٰكِهَةٖ وَلَحۡمٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢٢ يَتَنَٰزَعُونَ فِيهَا كَأۡسٗا لَّا لَغۡوٞ فِيهَا وَلَا تَأۡثِيمٞ ٢٣ ﴾ [الطور: ١٧، ٢٣

“নিশ্চয় মুত্তাকীরা (থাকবে) জান্নাতে ও প্রাচুর্যে। তাদের রব তাদেরকে যা দিয়েছেন তা উপভোগ করবে, আর তাদের রব তাদেরকে বাঁচাবেন জ্বলন্ত আগুনের আযাব থেকে। তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর, তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে। সারিবদ্ধ পালঙ্কে তারা হেলান দিয়ে বসবে; আর আমি তাদেরকে মিলায়ে দেব ডাগরচোখা হূর-এর সাথে। আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমরা তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের কর্মের কোন অংশই কমাব না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের ব্যাপারে দায়ী থাকবে। আর আমি তাদেরকে অতিরিক্ত দেব ফলমূল ও গোশত যা তারা কামনা করবে। তারা পরস্পরের মধ্যে পানপাত্র বিনিময় করবে; সেখানে থাকবে না কোন বেহুদা কথাবার্তা এবং কোন পাপকাজ।” [সূরা আত্-তূর: ১৭-২৩] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ ﴾ [الواقعة: ٢٠، ٢١]

“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। আর পাখির গোশ্ নিয়ে, যা তারা কামনা করবে।” [সূরা : আল্-ওয়াকিয়া: ২০-২১] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ يَوۡمَئِذٖ تُعۡرَضُونَ لَا تَخۡفَىٰ مِنكُمۡ خَافِيَةٞ ١٨ فَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ فَيَقُولُ هَآؤُمُ ٱقۡرَءُواْ كِتَٰبِيَهۡ ١٩ إِنِّي ظَنَنتُ أَنِّي مُلَٰقٍ حِسَابِيَهۡ ٢٠ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ ٢١ فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٖ ٢٢ قُطُوفُهَا دَانِيَةٞ ٢٣ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيٓ‍َٔۢا بِمَآ أَسۡلَفۡتُمۡ فِي ٱلۡأَيَّامِ ٱلۡخَالِيَةِ ٢٤ ﴾ [الحاقة: ١٨، ٢٤]

“সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন গোপনীয়তাই গোপন থাকবে না। তখন যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখ’। ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, আমি আমার হিসাবের সম্মুখীন হব’। সুতরাং সে সন্তোষজনক জীবনে থাকবে। সুউচ্চ জান্নাতে, তার ফলসমূহ নিকটবর্তী থাকবে।(বলা হবে,) ‘বিগত দিনসমূহে তোমরা যা অগ্রে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর।” [সূরা আল্-হাক্কাহ: ১৮-২৪]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের খাদ্য: ১- যাক্কুম বৃক্ষ: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ثُمَّ إِنَّكُمۡ أَيُّهَا ٱلضَّآلُّونَ ٱلۡمُكَذِّبُونَ ٥١ لَأٓكِلُونَ مِن شَجَرٖ مِّن زَقُّومٖ ٥٢ فَمَالِ‍ُٔونَ مِنۡهَا ٱلۡبُطُونَ ٥٣ فَشَٰرِبُونَ عَلَيۡهِ مِنَ ٱلۡحَمِيمِ ٥٤ فَشَٰرِبُونَ شُرۡبَ ٱلۡهِيمِ ٥٥ هَٰذَا نُزُلُهُمۡ يَوۡمَ ٱلدِّينِ ٥٦ ﴾ [الواقعة: ٥١، ٥٦]

“তারপর হে পথভ্রষ্ট ও অস্বীকারকারীরা, তোমরা অবশ্যই যাক্কূম গাছ থেকে খাবে, অতঃপর তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি পান করবে প্রচন্ড উত্তপ্ত পানি। অতঃপর তোমরা তা পান করবে তৃষ্ণাতুর উটের ন্যায়। প্রতিফল দিবসে এই হবে তাদের মেহমানদারী।” [সূরা : আল্-ওয়াকিয়া: ৫১-৫৬] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ إِنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ ٤٣ طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ ٤٤ كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِي فِي ٱلۡبُطُونِ ٤٥ كَغَلۡيِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٦ ﴾ [الدخان: ٤٣، ٤٦]

“নিশ্চয় যাক্কূম বৃক্ষ, পাপীর খাদ্য; গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত।” [সূরা : আদ্-দুখান: ৪৩-৪৬] যাক্কুম: দুর্গন্ধযুক্ত ভয়ানক বৃক্ষ, জাহান্নামীরা এটা খেতে খুবই অপছন্দ করবে, তারা অত্যন্ত অপছন্দ সত্বেও ক্ষুধার যন্ত্রনায় যাক্কুম বৃক্ষ গ্রহণ করবে। যেমন আরবদের কথা… কেউ মারাত্মক অপছন্দ সত্বেও খাবার খেলে বলে যাক্কুম খেয়েছে। [100] পাপীদের খাদ্য: পাপী ও অন্যায়ীর খাদ্য। [101] গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে: ফুটন্ত গরম পানি যেমন ফুটতে থাকে তেমনিভাবে তাদের পেটে গলিত তামার মত ফুটতে থাকবে। [102] ২- আল-গীসলীন: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ فَلَيۡسَ لَهُ ٱلۡيَوۡمَ هَٰهُنَا حَمِيمٞ ٣٥ وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنۡ غِسۡلِينٖ ٣٦ لَّا يَأۡكُلُهُۥٓ إِلَّا ٱلۡخَٰطِ‍ُٔونَ ٣٧ ﴾ [الحاقة: ٣٥، ٣٧]

“অতএব আজ এখানে তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না। আর ক্ষত-নিংসৃত পূঁজ ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না, অপরাধীরাই শুধু তা খাবে।” [সূরা আল্-হাক্কাহ: ৩৫-৩৭] আল-গীসলীন: হলো জাহান্নামে কাফিরদের শরীর থেকে ক্ষত-নিংসৃত পূঁজ। কেউ কেউ বলেন, জাহান্নামীদের বমি, এটা ক্ষত-নিংসৃত পূঁজের মত। কারো মতে, জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত রক্ত ও পানি। [103] ৩- কাঁটাযুক্ত খাদ্য: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ إِنَّ لَدَيۡنَآ أَنكَالٗا وَجَحِيمٗا ١٢ وَطَعَامٗا ذَا غُصَّةٖ وَعَذَابًا أَلِيمٗا ١٣ ﴾ [المزمل: ١٢، ١٣

“নিশ্চয় আমার নিকট রয়েছে শিকলসমূহ ও প্রজ্জ্বলিত আগুন। ও কাঁটাযুক্ত খাদ্য এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [সূরা আল্-মুয্যাম্মিল: ১২-১৩] কাঁটাযুক্ত খাদ্য গলায় আঁটকে যাবে, তা ভিতরেও যাবে না আবার বের ও হবে না। কেউ কেউ বলছেন, এটা যাক্কুম ও দরী‘। [104] ৪- আদ-দরী‘ বা কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ لَّيۡسَ لَهُمۡ طَعَامٌ إِلَّا مِن ضَرِيعٖ ٦ لَّا يُسۡمِنُ وَلَا يُغۡنِي مِن جُوعٖ ٧ ﴾ [الغاشية: ٦، ٧]

তাদের জন্য কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না। তা মোটা-তাজাও করবে না এবং ক্ষুধাও নিবারণ করবে না। [সূরা আল্-গাশিয়া: ৬-৭] আদ-দরী‘ বা কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম: কেউ কেউ বলেছেন, এটা কাঁটাযুক্ত লতা, কুরাইশরা একে আশ-শাবরিক বলে, যখন এটা শুকায় তখন একে আদ-দরী‘ বলা হয়, এটা খুবই ভয়ানক খাবার। [105]

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ জান্নাতীদের পানীয় ও এর নহরসমূহ এবং জাহান্নামীদের পানীয়

প্রথমত: জান্নাতীদের পানীয় ও এর নহরসমূহ ১- জান্নাতীদের পানীয়: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ يَشۡرَبُونَ مِن كَأۡسٖ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا ٥ عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا عِبَادُ ٱللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفۡجِيرٗا ٦ ﴾ [الانسان: ٥، ٦

নিশ্চয় সৎকর্মশীলরা পান করবে এমন পানপাত্র থেকে যার মিশ্রণ হবে কাফূর। এমন এক ঝর্ণা যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে, তারা এটিকে যথা ইচ্ছা প্রবাহিত করবে। [সূরা আল্-ইনসান: ৫-৬] আল্লাহর বাণীঃ

﴿ يَشۡرَبُونَ مِن كَأۡسٖ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا ٥ ﴾ [الانسان: ٥

“তারা পান করবে এমন পানপাত্র থেকে যার মিশ্রণ হবে কাফূর।” অর্থাৎ জান্নাতীরা এমন পাত্র থেকে পান করবে যাতে শরাব থাকবে আর এর মিশ্রণ হবে কাফুর। কাফুরের সুগন্ধি ও শীতলতা সবারই জানা আছে। এ ছাড়াও এতে জান্নাতের স্বাদ মিশে এক আলাদা মজাদার পানীয় হবে। [106] কারো মতে, কাফুর দ্বারা মিশ্রণ হবে আর মিসকের দ্বারা পরিবেশন করা হবে। [107] আল্লাহর বাণী:

﴿ يُفَجِّرُونَهَا تَفۡجِيرٗا ٦ ﴾ [الانسان: ٦]

“তারা এটিকে যথা ইচ্ছা প্রবাহিত করাবে।” চাই তারা তাদের ভবন বা আসনের পাশ দিয়ে হোক বা অন্য যে কোন জায়গা দিয়ে হোক, তাদের ইচ্ছা মতই প্রবাহিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَيُطَافُ عَلَيۡهِم بِ‍َٔانِيَةٖ مِّن فِضَّةٖ وَأَكۡوَابٖ كَانَتۡ قَوَارِيرَا۠ ١٥ قَوَارِيرَاْ مِن فِضَّةٖ قَدَّرُوهَا تَقۡدِيرٗا ١٦ وَيُسۡقَوۡنَ فِيهَا كَأۡسٗا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا ١٧ عَيۡنٗا فِيهَا تُسَمَّىٰ سَلۡسَبِيلٗا ١٨ ﴾ [الانسان: ١٥، ١٨]

“তাদের চারপাশে আবর্তিত হবে রৌপ্যপাত্র ও স্ফটিক স্বচ্ছ পানপাত্র- রূপার ন্যায় শুভ্র স্ফটিক পাত্র; যার পরিমাপ তারা নির্ধারণ করবে। সেখানে তাদেরকে পান করানো হবে পাত্রভরা আদা-মিশ্রিত সুরা, সেখানকার এক ঝর্ণা যার নাম হবে সালসাবীল।” [সূরা : আল্-ইনসান: ১৫-১৮]

وَيُسۡقَوۡنَ فِيهَا كَأۡسٗ

তারা এ সব পান পাত্র থেকে আদা মিশ্রিত সূরা পান করবে। কখনও তাদের পানীয়তে কাফুর মিশ্রিত থাকবে যা শীতল, আবার কখনও আদা মিশ্রিত থাকবে যা উষ্ণ হবে।

عَيۡنٗا فِيهَا تُسَمَّىٰ سَلۡسَبِيلٗا

সালসাবীল হলো জান্নাতের একটি ঝর্ণা। জান্নাতীরা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তা প্রবাহিত করতে পারবে। [108] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ يُسۡقَوۡنَ مِن رَّحِيقٖ مَّخۡتُومٍ ٢٥ خِتَٰمُهُۥ مِسۡكٞۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلۡيَتَنَافَسِ ٱلۡمُتَنَٰفِسُونَ ٢٦ وَمِزَاجُهُۥ مِن تَسۡنِيمٍ ٢٧ عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا ٱلۡمُقَرَّبُونَ ٢٨ ﴾ [المطففين: ٢٥، ٢٨]

“তাদেরকে সীলমোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় থেকে পান করানো হবে। তার মোহর হবে মিসক। আর প্রতিযোগিতাকারীদের উচিৎ এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা। আর তার মিশ্রণ হবে তাসনীম থেকে। তা এক প্রস্রবণ, যা থেকে নৈকট্যপ্রাপ্তরা পান করবে।” [সূরা আল্-মুতাফফিফীন: ২৫-২৮] الرحيق তারা জান্নাতে সুপেয় সূরা পান করবে, আর রহীক হলো এক ধরণের মদ। আর তাদের সর্বশেষ পানীয় হবে মিসকের দ্বারা। কারো মতে, রূপার ন্যায় সাদা পানীয় যা সীল মোহর করা থাকবে। [109] وَمِزَاجُهُۥ مِن تَسۡنِيمٍ রাহীকের মিশ্রণ হবে তাসনীম নামে পানীয় দ্বারা। এটা জান্নাতের সর্বোত্তম শরাব। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন,

عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا ٱلۡمُقَرَّبُونَ

তা এক প্রস্রবণ, যা থেকে নৈকট্যপ্রাপ্তরা পান করবে। [110] ২- জান্নাতের নহরসমূহ: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ وَمَغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡۖ كَمَنۡ هُوَ خَٰلِدٞ فِي ٱلنَّارِ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمٗا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥ ﴾ [محمد: ١٥]

“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হল, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্নাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্নাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?” [সূরা মুহাম্মদ: ১৫] مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِن অপরিবর্তনশীল নির্মল পানি। [111] আল-কাওসার ঝর্ণা: এটা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেয়া হয়েছে।

عَنِ عَبْد اللَّهِ بْن عَمْرٍو: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ، مَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنَ اللَّبَنِ، وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنَ المِسْكِ، وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ، مَنْ شَرِبَ مِنْهَا فَلاَ يَظْمَأُ أَبَدًا»

আবদুল্লাহ্ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার হাউয (হাউযে কাউসার) এক মাসের দূরত্ব সমান (বড়) হবে। তার পানি দুধের চেয়ে শুভ্র, তার ঘ্রাণ মিসকের চেয়ে সুগন্ধযুক্ত এবং তার পানপাত্রগুলি হবে আকাশের তারকার মত অধিক। যে ব্যক্তি তা থেকে পান করবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না।”[112] এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্ত একই হবে, দৈর্ঘ্য হবে এক মাসের দূরত্বের সমান আর প্রস্তও হবে এক মাসের দূরত্ব।

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمَّا عُرِجَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى السَّمَاءِ، قَالَ: ” أَتَيْتُ عَلَى نَهَرٍ، حَافَتَاهُ قِبَابُ اللُّؤْلُؤِ مُجَوَّفًا، فَقُلْتُ: مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: هَذَا الكَوْثَرُ

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আকাশের দিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি’রাজ হলে তিনি বলেন, আমি একটি জলাধারের (নদী) ধারে পৌঁছলাম, যার উভয় তীরে ফাঁপা মুক্তার তৈরি গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম, হে জিবরীল! এটি কি? তিনি বললেন, এটিই (হাউযে) কাউসার।”[113]

وفي رواية: ” بَيْنَمَا أَنَا أَسِيرُ فِي الجَنَّةِ، إِذَا أَنَا بِنَهَرٍ، حَافَتَاهُ قِبَابُ الدُّرِّ المُجَوَّفِ، قُلْتُ: مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: هَذَا الكَوْثَرُ، الَّذِي أَعْطَاكَ رَبُّكَ، فَإِذَا طِينُهُ – أَوْ طِيبُهُ – مِسْكٌ أَذْفَرُ

অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে, তিনি বলেছেন, “আমি জান্নাতে ভ্রমণ করছিলাম, এমন সময় এক ঝর্ণার কাছে এলে দেখি যে তার দু’টি ধারে ফাপা মুক্তার গম্বুজ রয়েছে । আমি বললাম, হে জিব্রাঈল! এটা কি? তিনি বললেন। এটা ঐ কাউসার যা আপনার প্রভু আপনাকে দান করেছেন। তার মাটিতে অথবা ঘ্রাণে ছিল উৎকৃষ্ট মানের মিসকের সুগন্ধি।” [114] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ إِنَّآ أَعۡطَيۡنَٰكَ ٱلۡكَوۡثَرَ ١ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلۡأَبۡتَرُ ٣ ﴾ [الكوثر: ١، ٣]

“নিশ্চয় আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি। অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর। নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ।” [সূরা আল্-কাউসার: ১-৩]

«إِنِّي فَرَطُكُمْ عَلَى الحَوْضِ، مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ، وَمَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا، لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ» ” فَأَقُولُ إِنَّهُمْ مِنِّي، فَيُقَالُ: إِنَّكَ لاَ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ، فَأَقُولُ: سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِي ” وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: سُحْقًا: بُعْدً

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌঁছব । যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে । আর যে পান করবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে । আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে । এরপর আমার এবং তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তখন বলব যে তারা তো আমারই উম্মত । তখন বলা হবে, তুমি তো জান না তোমার পরে এরা কি সব নতুন নতুন কীর্তি করেছে । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তখন আমি বলব, আমার পরে যারা দীনের মাঝে পরিবর্তন এনেছে তারা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকুক । ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এর অর্থ – তাকে দূর করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের পানীয়: ১- হামীম: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمٗا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥ ﴾ [محمد: ١٥]

“এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে?” [সূরা মুহাম্মাদ: ১৫] অর্থাৎ প্রচন্ড ফুটন্ত পানি যা সহ্য করা যায় না। ফলে তাদের পেটের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। [115] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ ١٩ يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِي بُطُونِهِمۡ وَٱلۡجُلُودُ ٢٠ ﴾ [الحج: ١٩، ٢٠

“তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে।” [সূরা আল-হাজ্জ: ১৯-২০] ২- সদীদ: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَٱسۡتَفۡتَحُواْ وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٖ ١٥ مِّن وَرَآئِهِۦ جَهَنَّمُ وَيُسۡقَىٰ مِن مَّآءٖ صَدِيدٖ ١٦ يَتَجَرَّعُهُۥ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُۥ وَيَأۡتِيهِ ٱلۡمَوۡتُ مِن كُلِّ مَكَانٖ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٖۖ وَمِن وَرَآئِهِۦ عَذَابٌ غَلِيظٞ ١٧ ﴾ [ابراهيم: ١٥، ١٧]

“আর তারা বিজয় কামনা করল, আর ব্যর্থ হল সকল স্বেচ্ছাচারী, হঠকারী। এর সামনে রয়েছে জাহান্নাম, আর তাদের পান করানো হবে গলিত পুঁজ থেকে। সে তা গিলতে চাইবে এবং প্রায় সহজে সে তা গিলতে পারবে না। আর তার কাছে সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না। আর এর পরেও রয়েছে কঠিন আযাব।” [সূরা: ইবরাহীম: ১৫-১৭] সদীদ হলো: কাফিরদের শরীর থেকে নির্গত বমি ও রক্ত। [116]

عن جابر t، عن النبي r قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَإِنَّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِينَةِ الْخَبَالِ ” فَقَالَوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ: «عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ» أَوْ «عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ»

জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বললেন, “যা নেশা সৃষ্টি করে, তাই হারাম। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তা‘আলার ওয়াদা, যে ব্যক্তি নেশা জাতীয় বস্তু পান করবে, তাকে তিনি “তীনাতূল খাবাল” পান করিয়ে ছাড়বেন। লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম “তীনাতুল খাবাল” কি? তিনি বললেন, দোযখবাসীদের ঘাম বা দোযখবাসীদের প্রস্রাব-পায়খানা।” [117] ৩- গলিত ধাতুর মত পানি: আল-মুহলি শব্দের অর্থ তেলের গাদ [118], ইহা মারাত্মক ফুটন্ত পানি, এর রঙ কালো ও গন্ধযুক্ত। কাফিররা যখন তা পান করতে চাবে তখন তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাবে এবং মুখের চামড়া ঝলসে যাবে। [119] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ إِنَّآ أَعۡتَدۡنَا لِلظَّٰلِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمۡ سُرَادِقُهَاۚ وَإِن يَسۡتَغِيثُواْ يُغَاثُواْ بِمَآءٖ كَٱلۡمُهۡلِ يَشۡوِي ٱلۡوُجُوهَۚ بِئۡسَ ٱلشَّرَابُ وَسَآءَتۡ مُرۡتَفَقًا ٢٩ ﴾ [الكهف: ٢٩

“আর বল, ‘সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে যেন ঈমান আনে এবং যে ইচ্ছা করে সে যেন কুফরী করে। নিশ্চয় আমি যালিমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করেছি, যার প্রাচীরগুলো তাদেরকে বেষ্টন করে রেখেছে। যদি তারা পানি চায়, তবে তাদেরকে দেয়া হবে এমন পানি যা গলিত ধাতুর মত, যা চেহারাগুলো ঝলসে দেবে। কী নিকৃষ্ট পানীয়! আর কী মন্দ বিশ্রামস্থল!” [সূরা : আল-কাহফ: ২৯] ৪- গাসসাক: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرۡدٗا وَلَا شَرَابًا ٢٤ إِلَّا حَمِيمٗا وَغَسَّاقٗا ٢٥ جَزَآءٗ وِفَاقًا ٢٦ إِنَّهُمۡ كَانُواْ لَا يَرۡجُونَ حِسَابٗا ٢٧ وَكَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا كِذَّابٗا ٢٨ وَكُلَّ شَيۡءٍ أَحۡصَيۡنَٰهُ كِتَٰبٗا ٢٩ فَذُوقُواْ فَلَن نَّزِيدَكُمۡ إِلَّا عَذَابًا ٣٠ ﴾ [النبا: ٢٤، ٣٠]

“সেখানে তারা কোন শীতলতা আস্বাদন করবে না এবং না কোন পানীয়। ফুটন্ত পানি ও পুঁজ ছাড়া। উপযুক্ত প্রতিফলস্বরূপ। নিশ্চয় তারা হিসাবের আশা করত না। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছিল। আর সব কিছুই আমি লিখিতভাবে সংরক্ষণ করেছি। সুতরাং তোমরা স্বাদ গ্রহণ কর। আর আমি তো কেবল তোমাদের আযাবই বৃদ্ধি করব।” [সূরা আন্-নাবা: ২৪-৩০] গাসসাক: হলো প্রচন্ড ঠান্ডা পানি যা সহ্য করা যায় না। ঠান্ডার কারণে চামড়া জ্বলে যাবে, যেমন আগুনের দ্বারা চামড়া ঝলসে যায়। এটা হলো অতিরিক্ত ঠাণ্ডা। জাহান্নামীদের রক্ত, পুঁজ, ঘাম ও ক্ষতের ঘা যা খুবই শীতল ও দুর্গন্ধ। [120] ৫- ফুটন্ত ঝর্ণার পানি: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন

﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٍ خَٰشِعَةٌ ٢ عَامِلَةٞ نَّاصِبَةٞ ٣ تَصۡلَىٰ نَارًا حَامِيَةٗ ٤ تُسۡقَىٰ مِنۡ عَيۡنٍ ءَانِيَةٖ ٥ ﴾ [الغاشية: ٢، ٥

“সেদিন অনেক চেহারা হবে অবনত। কর্মক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে। তাদের পান করানো হবে ফুটন্ত ঝর্ণা থেকে।” [সূরা : আল্-গাশিয়া: ২-৫] আনিয়াহ হলো অত্যন্ত ফুটন্ত টগবগ পানি। [121]

﴿ يَطُوفُونَ بَيۡنَهَا وَبَيۡنَ حَمِيمٍ ءَانٖ ٤٤ ﴾ [الرحمن: ٤٤]

“তারা ঘুরতে থাকবে জাহান্নাম ও ফুটন্ত পানির মধ্যে।” [সূরা : আর্-রাহমান: ৪৪] আরবেরা যখন কোন কিছু অত্যন্ত গরম হয় এবং তা আর গরম হওয়ার বাকী থাকে না তখন তাকে আনিয়াহ বলে। [122]

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ জান্নাতের অট্টালিকাসমূহ ও জাহান্নামের আবাসসমূহ

প্রথমত: জান্নাতের অট্টালিকা, তাবু ও কামরাসমূহ: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠ ﴾ [الزمر: ٢٠]

“কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরো কক্ষ। তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না।” [সূরা আয্-যুমার: ২০] ইবন কাসীর রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৌভাগ্যবান বান্দাহদের জন্য জান্নাতে কক্ষ তৈরি করে রেখেছেন। এগুলো উঁচু উঁচু অট্টালিকা যার কক্ষের উপরে কক্ষ নির্মিত হবে, তলার উপরে তলা থাকবে অর্থাৎ তা বহুতল ভবন হবে, এর নিচ দিয়ে ঝর্ণা বয়ে যাবে এবং এগুলো চমৎকার কারুকার্য খচিত হবে। [123]

عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ فِي الجَنَّةِ غُرَفًا تُرَى ظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا وَبُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا، فَقَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: لِمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: لِمَنْ أَطَابَ الكَلاَمَ، وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ، وَأَدَامَ الصِّيَامَ، وَصَلَّى بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতে একটি প্রাসাদ রয়েছে যার ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতর পরিদৃষ্ট হবে। তখন জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ এটি কার হবে? তিনি বললেন, এটি হবে তার যিনি ভাল কথা বলে, অন্যকে আহার করায়, সর্বদা রোযা রাখে এবং যখন রাতে সব মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন সে উঠে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করে।” [124]

وعن أبي هريرة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ قَالَ: ” بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي فِي الجَنَّةِ، فَإِذَا امْرَأَةٌ تَتَوَضَّأُ إِلَى جَانِبِ قَصْرٍ فَقُلْتُ: لِمَنْ هَذَا القَصْرُ؟ فَقَالُوا: لِعُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ فَذَكَرْتُ غَيْرَتَهُ فَوَلَّيْتُ مُدْبِرًا، فَبَكَى عُمَرُ وَقَالَ: أَعَلَيْكَ أَغَارُ يَا رَسُولَ اللَّهِ “

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক সময় আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, “আমি নিদ্রিত ছিলাম। দেখলাম আমি জান্নাতে অবস্থিত। হঠাৎ দেখলাম এক মহিলা একটি প্রাসাদের পাশে অযু করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ প্রাসাদটি কার? তারা উত্তরে বললেন, উমরের। তখন তাঁর (উমরের) আত্মমর্যাদাবোধের কথা আমার স্মরণ হল। আমি পেছনের দিকে ফিরে চলে আসলাম। এ কথা শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার সম্মুখে কি আমার মর্যাদাবোধ থাকতে পারে?” [125]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” دَخَلْتُ الجَنَّةَ، فَإِذَا أَنَا بِقَصْرٍ مِنْ ذَهَبٍ، فَقُلْتُ: لِمَنْ هَذَا؟ فَقَالُوا: لِرَجُلٍ مِنْ قُرَيْشٍ، فَمَا مَنَعَنِي أَنْ أَدْخُلَهُ يَا ابْنَ الخَطَّابِ، إِلَّا مَا أَعْلَمُ مِنْ غَيْرَتِكَ ” قَالَ: وَعَلَيْكَ أَغَارُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟

জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। আমি আমাকে একটি স্বর্ণের প্রাসাদের নিকট দেখতে পেলাম। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কার? তারা বলল, কুরাইশের জনৈক ব্যক্তির। হে ইবনুল খাত্তাব! এ প্রাসাদে ঢুকতে আমাকে কিছুই বাধা দিচ্ছিল না। কেবল তোমার আত্মমর্যাদাবোধ, যা আমার জানা ছিল। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপরেও কি আমি আত্মমর্যাদাবোধ প্রদর্শন করব?” [126]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: ” أَتَى جِبْرِيلُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: هَذِهِ خَدِيجَةُ قَدْ أَتَتْ مَعَهَا إِنَاءٌ فِيهِ إِدَامٌ، أَوْ طَعَامٌ أَوْ شَرَابٌ، فَإِذَا هِيَ أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلاَمَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّي وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِي الجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ لاَ صَخَبَ فِيهِ، وَلاَ نَصَبَ “

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ যে খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাবার দ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌছে যাবেন তখন তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি সুরম্য প্রাসারেদ সু-সংবাদ দিবেন যার ভিতরদেশ ফাঁকা-মুতি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার হট্টগোল; না কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি। [127] مِنْ قَصَبٍ অর্থাৎ রাজকীয় প্রাসাদের ন্যায় মণিমুক্তার তৈরি প্রশস্ত ভবন। কারো মতে, মণি মুক্তা, হীরা ও ইয়াকুত পাথর খচিত প্রাসাদ। [128] আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেছেন,

﴿ تَبَارَكَ ٱلَّذِيٓ إِن شَآءَ جَعَلَ لَكَ خَيۡرٗا مِّن ذَٰلِكَ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ وَيَجۡعَل لَّكَ قُصُورَۢا ١٠ ﴾ [الفرقان: ١٠]

“তিনি বরকতময়, যিনি ইচ্ছা করলে তোমার জন্য করে দিতে পারেন তার চেয়ে উত্তম বস্তু অনেক বাগান, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয় এবং তিনি তোমাকে প্রাসাদসমূহ দিতে পারেন।” [সূরা : আল-ফুরকান: ১০]

عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ فِي الجَنَّةِ خَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ مُجَوَّفَةٍ، عَرْضُهَا سِتُّونَ مِيلًا، فِي كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا أَهْلٌ مَا يَرَوْنَ الآخَرِينَ، يَطُوفُ عَلَيْهِمُ المُؤْمِنُونَ، وَجَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ، آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا، وَجَنَّتَانِ مِنْ كَذَا، آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا، وَمَا بَيْنَ القَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلَّا رِدَاءُ الكِبْرِ عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ» وفي رواية لمسلم: عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَبِي مُوسَى بْنِ قَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الْخَيْمَةُ دُرَّةٌ، طُولُهَا فِي السَّمَاءِ سِتُّونَ مِيلًا»

আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(জান্নাতে) দুটি উদ্যান থাকবে। এই দুটির সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু রূপার তৈরি হবে। এবং (জান্নাতে) আরো দুটি উদ্যান থাকবে। এই দুটির সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু সোনার তৈরি হবে। জান্নাতে-আদনের মধ্যে জান্নাতবাসীরা তাদের রবকে দেখবে। জান্নাতবাসী এবং তাদের রবের এই দর্শনের মাঝে আল্লাহর সত্তার উপর জড়ানো তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের পর্দা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।” [129] আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মণি-মুক্তার তাঁবু হবে। ঊর্ধাকাশের দিকে এর দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। [130] দু’রেওয়ায়েতের মধ্যে জান্নাতের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নিয়ে ভিন্ন বর্ণনা থাকতে কোনো অসুবিধে নেই। জান্নাতের যমিনের পরিমাপে এর দৈর্ঘ্য ষাট মাইল আর ঊর্ধাকাশের দিকে এর উচ্চতা ষাট মাইল। অতএব, এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একই। [131]

عن عثمان بن عفان t، عن النبي r قال: ” مَنْ بَنَى مَسْجِدًا – قَالَ بُكَيْرٌ: حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ: يَبْتَغِي بِهِ وَجْهَ اللَّهِ – بَنَى اللَّهُ لَهُ مِثْلَهُ فِي الجَنَّةِ

‘উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে, বুকাইর (রহ.) বলেন: আমার মনে হয় রাবী ‘আসিম’ (রহ) তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তা’য়ালা তার জন্যে জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন।” [132]

يقول الله U لمن حَمِدَ واسترجع عند موت ولده: ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الجَنَّةِ، وَسَمُّوهُ بَيْتَ الحَمْدِ “

“যে ব্যক্তি সন্তান মারা গেলে আল্লাহর প্রশংসা ও ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার সম্পর্কে বলেছেন, “আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং তার নামকরণ কর ‘‘বায়তুল হামদ’ বা প্রশংসালয়।”[133]

عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا، غَيْرَ فَرِيضَةٍ، إِلَّا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَوْ إِلَّا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ»

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যে কোন মুসলিম বান্দা দৈনিক ফরয ব্যতীত বার রাক‘আত সালাত আল্লাহর উদ্দেশ্যে আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরী করা হবে।” [134] ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, এগুলো হলো দৈনিক ধারাবাহিক বারো রাক‘আত সুন্নত সালাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١١ يَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡ وَيُدۡخِلۡكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٢ ﴾ [الصف: ١٠، ١٢]

“হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত এবং চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম আবাসগুলোতেও (প্রবেশ করবেন)। এটাই মহাসাফল্য।” [সূরা : আস্-সাফ: ১০-১২]

وفي حديث أبي هريرة الطويل عندما اشتكوا قلوبهم إذا فارقوا النبي r، وفيه أنهم سألوا رسول الله r عن بناء الجنة، فقال عليه الصلاة والسلام: لَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ، وَمِلَاطُهَا الْمِسْكُ الْأَذْفَرُ، وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَاليَاقُوتُ، وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ مَنْ دَخَلَهَا يَنْعَمُ وَلَا يَبْأَسُ، وَيَخْلُدُ وَلَا يَمُوتُ، لَا تَبْلَى ثِيَابُهُمْ، وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُمْ» ثُمَّ قَالَ: ” ثَلَاثٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ، الإِمَامُ العَادِلُ، وَالصَّائِمُ حِينَ يُفْطِرُ، وَدَعْوَةُ المَظْلُومِ يَرْفَعُهَا فَوْقَ الغَمَامِ، وَتُفَتَّحُ لَهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَيَقُولُ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: وَعِزَّتِي لَأَنْصُرَنَّكِ وَلَوْ بَعْدَ حِينٍ “

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে সাহাবীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবার থেকে দূরে গেলে তাদের মনের অবস্থার পরিবর্তনের কথা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অভিযোগ করলেন। এতে রয়েছে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জান্নাতের নির্মাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের একটি ইট হল রূপার আর একটি হল সোনার। এর গাঁথুনী হল সুগন্ধময় মিশকের। এর নুড়িগুলো হল মাতির ও ইয়াকুতের, মাটি হল যাফরানের। যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করবে সে নিয়ামত ও সুখ ভোগ করবে, কষ্ট পাবে না কখনও। সদাসর্বদা থকবে, মৃত্যু হবে না কখনও। তাদের পরিচ্ছদ কখনও পুরাতন হবে না, আর তাদের যৌবন কখনও শেষ হবে না।” এরপর তিনি বললেন: “তিন ব্যক্তি এমন যে তাদের দু’আ কখনও প্রত্যাখ্যান করা হয় না; ন্যায়পরায়ণ শাসনকর্তা, সাওম পালনকারী যখন সে ইফতার করে এবং মজলুমের দু’আ যা মেঘের উপরও তুলে নেওয়া হয় এবং আসমানের সব দরজা এর জন্য খুলে দেওয়া হয়, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেন: আমার ইজ্জতের কসম, কিছুকাল পরে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব।” [135]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের আবাসস্থল, তাদের শৃঙ্খল ও হাতুড়ি: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ بَلۡ كَذَّبُواْ بِٱلسَّاعَةِۖ وَأَعۡتَدۡنَا لِمَن كَذَّبَ بِٱلسَّاعَةِ سَعِيرًا ١١ إِذَا رَأَتۡهُم مِّن مَّكَانِۢ بَعِيدٖ سَمِعُواْ لَهَا تَغَيُّظٗا وَزَفِيرٗا ١٢ وَإِذَآ أُلۡقُواْ مِنۡهَا مَكَانٗا ضَيِّقٗا مُّقَرَّنِينَ دَعَوۡاْ هُنَالِكَ ثُبُورٗا ١٣ لَّا تَدۡعُواْ ٱلۡيَوۡمَ ثُبُورٗا وَٰحِدٗا وَٱدۡعُواْ ثُبُورٗا كَثِيرٗا ١٤ ﴾ [الفرقان: ١١، ١٤]

“বরং তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করেছে আর কিয়ামতকে যে অস্বীকার করে তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুন। দূর হতে আগুন যখন তাদেরকে দেখবে তখন তারা তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও প্রচন্ড চিৎকার শুনতে পাবে। আর যখন তাদেরকে গলায় হাত পেঁচিয়ে জাহান্নামের সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, সেখানে তারা নিজদের ধ্বংস আহ্বান করবে। একবার ধ্বংসকে ডেকো না; বরং অনেকবার ধ্বংসকে ডাকো।” [সূরা : আল-ফুরকান: ১১-১৪] مُّقَرَّنِينَ অর্থাৎ তাদের হাত গলার সাথে বেড়ী দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়া হবে। [136]

دَعَوۡاْ هُنَالِكَ ثُبُورٗا তারা নিজেদের ধ্বংস, ক্ষতি, সর্বনাশ ও নিরাশা নিজেরাই ডাকবে। [137] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ إِذِ ٱلۡأَغۡلَٰلُ فِيٓ أَعۡنَٰقِهِمۡ وَٱلسَّلَٰسِلُ يُسۡحَبُونَ ٧١ فِي ٱلۡحَمِيمِ ثُمَّ فِي ٱلنَّارِ يُسۡجَرُونَ ٧٢ ﴾ [غافر: ٧١، ٧٢]

“যখন তাদের গলদেশে বেড়ী ও শিকল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে- ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে পোড়ানো হবে।” [সূরা : গাফের: ৭১-৭২] ٱلۡأَغۡلَٰلُ হলো غِلٍّ এর বহুবচন। এটা হলো লোহার শিকল যা কয়েদিদের হাতে পড়ানো হয়। তাদের গলদেশে বেড়ী থাকবে। কয়েদিদের হাতে বেড়ির সাথে শিকল থাকবে, তাদেরকে উপুর করে একবার জাহীমে আবার হামীমে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। [138] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ خُذُوهُ فَغُلُّوهُ ٣٠ ثُمَّ ٱلۡجَحِيمَ صَلُّوهُ ٣١ ثُمَّ فِي سِلۡسِلَةٖ ذَرۡعُهَا سَبۡعُونَ ذِرَاعٗا فَٱسۡلُكُوهُ ٣٢ إِنَّهُۥ كَانَ لَا يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ ٱلۡعَظِيمِ ٣٣ وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ ٣٤ فَلَيۡسَ لَهُ ٱلۡيَوۡمَ هَٰهُنَا حَمِيمٞ ٣٥ وَلَا طَعَامٌ إِلَّا مِنۡ غِسۡلِينٖ ٣٦ لَّا يَأۡكُلُهُۥٓ إِلَّا ٱلۡخَٰطِ‍ُٔونَ ٣٧ ﴾ [الحاقة: ٣٠،

(বলা হবে,) ‘তাকে ধর অতঃপর তাকে বেড়ি পরিয়ে দাও।’ ‘তারপর তাকে তোমরা নিক্ষেপ কর জাহান্নামে’। ‘তারপর তাকে বাঁধ এমন এক শেকলে যার দৈর্ঘ্য হবে সত্তর হাত।’ সে তো মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করত না, আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহিত করত না। অতএব আজ এখানে তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না। আর ক্ষত-নিংসৃত পূঁজ ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না, অপরাধীরাই শুধু তা খাবে। [সূরা : আল্-হাক্কাহ: ৩০-৩৭] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ إِنَّآ أَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ سَلَٰسِلَاْ وَأَغۡلَٰلٗا وَسَعِيرًا ٤ ﴾ [الانسان: ٤

“আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি শেকল, বেড়ি ও প্রজ্বলিত অগ্নি।” [সূরা আল-ইনসান: ৪] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন

﴿ إِنَّ لَدَيۡنَآ أَنكَالٗا وَجَحِيمٗا ١٢ ﴾ [المزمل: ١٢

“নিশ্চয় আমার নিকট রয়েছে শিকলসমূহ ও প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।” [সূরা আল্-মুয্যাম্মিল: ১২] الأنكال অর্থ হাড়ের শিকল যা কখনো আলাদা হয় না। কারো মতে, এটা লোহার শিকল। [139] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ ۞هَٰذَانِ خَصۡمَانِ ٱخۡتَصَمُواْ فِي رَبِّهِمۡۖ فَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ قُطِّعَتۡ لَهُمۡ ثِيَابٞ مِّن نَّارٖ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ ١٩ يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِي بُطُونِهِمۡ وَٱلۡجُلُودُ ٢٠ وَلَهُم مَّقَٰمِعُ مِنۡ حَدِيدٖ ٢١ كُلَّمَآ أَرَادُوٓاْ أَن يَخۡرُجُواْ مِنۡهَا مِنۡ غَمٍّ أُعِيدُواْ فِيهَا وَذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ٢٢ ﴾ [الحج: ١٩، ٢٢]

“এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ী। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে তা থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে, দহন-যন্ত্রণা আস্বাদন কর।” [সূরা : আল-হাজ্জ: ১৯-২২] المقامع শব্দটি مِقْمَع এর বহুবচন। যা দ্বারা কোন কিছু পিটানো হয়, অর্থাৎ হাতুড়ি বা চাবুক। [140]

ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ জান্নাতী ও জাহান্নামীদের শরীরের হাড়সমূহ

প্রথমত: জান্নাতীদের শরীরের হাড়সমূহ তাদের বয়স ও শক্তি:

عن أبي هريرة t عن النبي r في صفة أهل الجنة، وفيه: «أزواجهم الحور العين، على خلق رجل واحد، على صورة أبيهم آدم ستون ذراعاً في السماء»

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ থেকে জান্নাতীদের গুনাবলী সম্পর্কে বলেন, “তাদের স্ত্রীরা হবে ডাগর চোখ বিশিষ্ট হুর। তাদেরকে একই ব্যক্তির আকৃতিতে সৃষ্টি করা হবে। অর্থাৎ, তাদের পিতা আদম আ. এর আকৃতি। তাদের দৈর্ঘ্য হবে ষাট গজ।” [141]

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَدْخُلُ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ جُرْدًا مُرْدًا مُكَحَّلِينَ أَبْنَاءَ ثَلاَثِينَ أَوْ ثَلاَثٍ وَثَلاَثِينَ سَنَةً».

মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জান্নাতীরা লোমহীন, শ্মশ্রুহীন, কাজলটানা চোখ বিশিষ্ট ত্রিশ বা তেত্রিশ বছরের যুবকরূপে জান্নাতে দাখিল হবে।” [142]

عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: يُعْطَى الْمُؤْمِنُ فِي الجَنَّةِ قُوَّةَ كَذَا وَكَذَا مِنَ الجِمَاعِ، قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ أَوَ يُطِيقُ ذَلِكَ؟ قَالَ: يُعْطَى قُوَّةَ مِائَةٍ.

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতে প্রত্যেক মুমিনকে এত এত সঙ্গম শক্তি দেওয়া হবে। বলা হলো : ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা করতে সক্ষম হবে কি? তিনি বললেন: তাকে তো একশ জনের শক্তি দেওয়া হবে।” [143] দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের শরীরের হাড়, তাদের মাড়ির দাঁত ও চামড়া:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا بَيْنَ مَنْكِبَيِ الكَافِرِ مَسِيرَةُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ للرَّاكِبِ المُسْرِعِ»

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কাফিরের দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানের দুরুত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের ভ্রমণের সমান হবে।” [144]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ضِرْسُ الْكَافِرِ، أَوْ نَابُ الْكَافِرِ، مِثْلُ أُحُدٍ وَغِلَظُ جِلْدِهِ مَسِيرَةُ ثَلَاثٍ»

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কাফিরদের দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমতুল্য হবে এবং তাদের চর্মের দুর্গন্ধ তিন দিনের দূরত্ব পর্যন্ত পৌছবে।” [145] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا سَوۡفَ نُصۡلِيهِمۡ نَارٗا كُلَّمَا نَضِجَتۡ جُلُودُهُم بَدَّلۡنَٰهُمۡ جُلُودًا غَيۡرَهَا لِيَذُوقُواْ ٱلۡعَذَابَۗ ٥٦ ﴾ [النساء: ٥٦

“নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে তখনই আমি তাদেরকে পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে যাতে তারা আস্বাদন করে আযাব।” [সূরা আল-বাকারাহ: ৫৬] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ تَلۡفَحُ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ وَهُمۡ فِيهَا كَٰلِحُونَ ١٠٤ ﴾ [المؤمنون: ١٠٤

“আগুন তাদের চেহারা দগ্ধ করবে, সেখানে তারা হবে বীভৎস চেহারাবিশিষ্ট।” [সূরা : আল-মুমিনূন: ১০৪] তাদের দাঁতগুলো বীভৎস হবে, অথবা তাদের চিরুনি হবে আগুনের, ফলে তাদের দাঁতগুলো বের হয়ে থাকবে ও চেহারা বীভৎস হবে। [146] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ يَوۡمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمۡ فِي ٱلنَّارِ يَقُولُونَ يَٰلَيۡتَنَآ أَطَعۡنَا ٱللَّهَ وَأَطَعۡنَا ٱلرَّسُولَا۠ ٦٦ ﴾ [الاحزاب: ٦٦

“যেদিন তাদের চেহারাগুলো আগুনে উপুড় করে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম”! [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬৬] কাফেরদেরকে উপুড় করে আগুনে জ্বালানো হবে, এতে আযাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। কুরআন ও হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, জাহান্নামীদের আযাবের তারতম্য হবে। যেমন নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়। [147]

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: يُحْشَرُ الْمُتَكَبِّرُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرِّ فِي صُوَرِ الرِّجَالِ يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ، فَيُسَاقُونَ إِلَى سِجْنٍ فِي جَهَنَّمَ يُسَمَّى بُولَسَ تَعْلُوهُمْ نَارُ الأَنْيَارِ يُسْقَوْنَ مِنْ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ طِينَةَ الخَبَالِ.

‘আমর ইবন শু‘আইব তার পিতার সূত্রে তার পিতামহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে মানুষের সূরতে পিপীলিকার ন্যায় একত্রিত করা হবে। সব দিক থেকে লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছাদিত করে ফেলবে। জাহান্নামের বূলাছ নামীয় বন্দীখানায় তাদের হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কঠিন অগ্নি তাদের গ্রাস নিবে। জাহান্নামীদের পূঁতি গন্ধময় পূঁজ রক্ত ইত্যাদি তাদের পান করান হবে। [148]

বিংশ পরিচ্ছেদ জান্নাতের বৃক্ষ ও এর ছায়া এবং জাহান্নামের বৃক্ষ ও এর ছায়া

প্রথমত: জান্নাতের বৃক্ষ ও এর ছায়া

عن أبي سعيد الخدري عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ شَجَرَةً يَسِيرُ الرَّاكِبُ الْجَوَادَ الْمُضَمَّرَ السَّرِيعَ، مِائَةَ عَامٍ مَا يَقْطَعُهَا»

আবু সাঈদ খূদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যা স্ফুর্তিবাজ দ্রুতগামী অশ্বের আরোহী একশ বছর পর্যন্ত সফর করেও অতিক্রম করতে পারবে না।” [149] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ ٢٧ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ ٣٢ لَّا مَقۡطُوعَةٖ وَلَا مَمۡنُوعَةٖ ٣٣ ﴾ [الواقعة: ٢٧، ٣٣

“আর ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছের নিচে, আর কাঁদিপূর্ণ কলাগাছের নিচে, আর বিস্তৃত ছায়ায়, আর সদা প্রবাহিত পানির পাশে, আর প্রচুর ফলমূলে, যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও হবে না”। [সূরা : আল্-ওয়াকিয়া: ২৭-৩৩] আলেমগণ বলেছেন, এখানে ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বৃক্ষের ডাল পালা ও শাখা প্রশাখার বিস্তৃত ছায়া। [150] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ وَفَوَٰكِهَ مِمَّا يَشۡتَهُونَ ٤٢ ﴾ [المرسلات: ٤١، ٤٢

“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণা-বহুল স্থানে, আর ফলমূল-এর মধ্যে, যা তারা চাইবে। [সূরা আল-মুরসালাত: ৪১-৪২] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَلِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٧ ذَوَاتَآ أَفۡنَانٖ ٤٨ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٤٩ فِيهِمَا عَيۡنَانِ تَجۡرِيَانِ ٥٠ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ ٥١ فِيهِمَا مِن كُلِّ فَٰكِهَةٖ زَوۡجَانِ ٥٢ ﴾ [الرحمن: ٤٦، ٥٢

“আর যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে, তার জন্য থাকবে দু’টি জান্নাত। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নিআমতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? উভয়ই বহু ফলদার শাখাবিশিষ্ট। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নি‘আমতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? উভয়ের মধ্যে থাকবে দু’টি ঝর্ণাধারা যা প্রবাহিত হবে। সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নি‘আমতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে? উভয়ের মধ্যে প্রত্যেক ফল থেকে থাকবে দু’ প্রকারের।” [সূরা : আর্-রাহমান: ৪৬-৫২] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ فِيهِمَا فَٰكِهَةٞ وَنَخۡلٞ وَرُمَّانٞ ٦٨ ﴾ [الرحمن: ٦٨

“এ দু’টিতে থাকবে ফলমূল, খেজুর ও আনার।” [সূরা : আর্-রাহমান: ৬৮] আল্লাহর বাণী:

﴿ وَدَانِيَةً عَلَيۡهِمۡ ظِلَٰلُهَا وَذُلِّلَتۡ قُطُوفُهَا تَذۡلِيلٗا ١٤ ﴾ [الانسان: ١٤

“তাদের উপর সন্নিহিত থাকবে উদ্যানের ছায়া এবং তার ফলমূলের থোকাসমূহ তাদের সম্পূর্ণ আয়ত্তাধীন করা হবে।” [সূরা : আল্-ইনসান: ১৪] আল্লাহর বাণী:

﴿ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ ٢١ فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٖ ٢٢ قُطُوفُهَا دَانِيَةٞ ٢٣ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيٓ‍َٔۢا بِمَآ أَسۡلَفۡتُمۡ فِي ٱلۡأَيَّامِ ٱلۡخَالِيَةِ ٢٤ ﴾ [الحاقة: ٢١، ٢٤

“সুতরাং সে সন্তোষজনক জীবনে থাকবে। সুউচ্চ জান্নাতে, তার ফলসমূহ নিকটবর্তী থাকবে।(বলা হবে,) বিগত দিনসমূহে তোমরা যা অগ্রে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর।” [সূরা : আল্-হাক্কাহ: ২১-২৪] আল্লাহর বাণী:

﴿ إِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ مَفَازًا ٣١ حَدَآئِقَ وَأَعۡنَٰبٗا ٣٢ وَكَوَاعِبَ أَتۡرَابٗا ٣٣ وَكَأۡسٗا دِهَاقٗا ٣٤ لَّا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا كِذَّٰبٗا ٣٥ جَزَآءٗ مِّن رَّبِّكَ عَطَآءً حِسَابٗا ٣٦ ﴾ [النبا: ٣١، ٣٦

“নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা। উদ্যানসমূহ ও আঙ্গুরসমূহ। আর সমবয়স্কা উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী। আর পরিপূর্ণ পানপাত্র। তারা সেখানে কোন অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না। তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রতিফল, যথোচিত দানস্বরূপ।” [সূরা আন্-নাবা: ৩১-৩৬] একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুল কুসুফ তথা সূর্যগ্রহণের সালাতে আঙ্গুরের কাঁদি দেখছিল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস,

قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، رَأَيْنَاكَ تَنَاوَلْتَ شَيْئًا فِي مَقَامِكَ ثُمَّ رَأَيْنَاكَ كَعْكَعْتَ؟ قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي رَأَيْتُ الجَنَّةَ، فَتَنَاوَلْتُ عُنْقُودًا، وَلَوْ أَصَبْتُهُ لَأَكَلْتُمْ مِنْهُ مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا، وَأُرِيتُ النَّارَ، فَلَمْ أَرَ مَنْظَرًا كَاليَوْمِ قَطُّ أَفْظَعَ، وَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ»

“লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা থেকে কি যেন ধরেছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পেছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমি তো জান্নাত দেখছিলাম এবং একগুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়ে ছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে, দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। এরপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা স্ত্রী লোক।”[151]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَوْمًا يُحَدِّثُ وَعِنْدَهُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ البَادِيَةِ: ” أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ اسْتَأْذَنَ رَبَّهُ فِي الزَّرْعِ، فَقَالَ لَهُ: أَوَلَسْتَ فِيمَا شِئْتَ؟ قَالَ: بَلَى، وَلَكِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَزْرَعَ، فَأَسْرَعَ وَبَذَرَ، فَتَبَادَرَ الطَّرْفَ نَبَاتُهُ وَاسْتِوَاؤُهُ وَاسْتِحْصَادُهُ وَتَكْوِيرُهُ أَمْثَالَ الجِبَالِ، فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: دُونَكَ يَا ابْنَ آدَمَ، فَإِنَّهُ لاَ يُشْبِعُكَ شَيْءٌ “، فَقَالَ الأَعْرَابِيُّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لاَ تَجِدُ هَذَا إِلَّا قُرَشِيًّا أَوْ أَنْصَارِيًّا، فَإِنَّهُمْ أَصْحَابُ زَرْعٍ، فَأَمَّا نَحْنُ فَلَسْنَا بِأَصْحَابِ زَرْعٍ، فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আলোচনারত ছিলেন। তখন সেখানে একজন গ্রাম্য লোকও উপস্থিত ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, একজন জান্নাতবাসী অনুমতি প্রার্থনা করবে কৃষিকার্য করার জন্য। আল্লাহ্ তাকে বলবেন, তুমি যা চাও তা কি পাওনি? সে বলবে, হ্যাঁ, পেয়েছি। তবে আমি কৃষিকাজ করতে পছন্দ করছি। অতি সত্বর ব্যবস্থা করা হবে এবং বীজ বোনা হবে। তখনই নিমিষে চারা গজাবে সোজা হয়ে দাঁড়াবে এবং তা কাটা হবে আর তা পর্বত পরিমাণ স্তূপীকৃত করা হবে। আল্লাহ্ তখন বলবেন, হে আদম সন্তান! লও। কারণ, তোমাকে কোন কিছুই তৃপ্তি দেবে না। এমন সময় জনৈক বেদুঈন বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ঐ লোকটিকে আপনি কুরাইশী কিংবা আনসারী পাবেন। কেননা, তাঁরা হলেন কৃষিজীবী। আর আমরা কৃষিজীবী নই! এতে রাসূলুল্লাহ্ হেসে দিলেন। [152] এ হাদীস প্রমাণ করে যে, জান্নাতে যা কিছু ইচ্ছা পোষণ করা হবে তাই পাবে। কেননা জান্নাত হলো মনে যা চাবে তাই পাবে। চোখে যা ভাল লাগবে তাই পূরণ হবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমীন। [153]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামের বৃক্ষ ও এর ছায়া: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ إِنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ ٤٣ طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ ٤٤ كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِي فِي ٱلۡبُطُونِ ٤٥ كَغَلۡيِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٦ ﴾ [الدخان: ٤٣، ٤٦]

“নিশ্চয় যাক্কূম বৃক্ষ, পাপীর খাদ্য ; গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত। [সূরা আদ-দুখান: ৪৩-৪৬] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ ثُمَّ إِنَّكُمۡ أَيُّهَا ٱلضَّآلُّونَ ٱلۡمُكَذِّبُونَ ٥١ لَأٓكِلُونَ مِن شَجَرٖ مِّن زَقُّومٖ ٥٢ فَمَالِ‍ُٔونَ مِنۡهَا ٱلۡبُطُونَ ٥٣ فَشَٰرِبُونَ عَلَيۡهِ مِنَ ٱلۡحَمِيمِ ٥٤ فَشَٰرِبُونَ شُرۡبَ ٱلۡهِيمِ ٥٥ ﴾ [الواقعة: ٥١، ٥٥]

“তারপর হে পথভ্রষ্ট ও অস্বীকারকারীরা, তোমরা অবশ্যই যাক্কূম গাছ থেকে খাবে, অতঃপর তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি পান করবে প্রচন্ড উত্তপ্ত পানি। অতঃপর তোমরা তা পান করবে তৃষ্ণাতুর উটের ন্যায়।” [সূরা : আল্-ওয়াকিয়া: ৫১-৫৫] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ إِنَّهَا شَجَرَةٞ تَخۡرُجُ فِيٓ أَصۡلِ ٱلۡجَحِيمِ ٦٤ طَلۡعُهَا كَأَنَّهُۥ رُءُوسُ ٱلشَّيَٰطِينِ ٦٥ فَإِنَّهُمۡ لَأٓكِلُونَ مِنۡهَا فَمَالِ‍ُٔونَ مِنۡهَا ٱلۡبُطُونَ ٦٦ ثُمَّ إِنَّ لَهُمۡ عَلَيۡهَا لَشَوۡبٗا مِّنۡ حَمِيمٖ ٦٧ ﴾ [الصافات: ٦٤، ٦٧

“নিশ্চয় এ গাছটি জাহান্নামের তলদেশ থেকে বের হয়। এর ফল যেন শয়তানের মাথা; নিশ্চয় তারা তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ।” [সূরা : আস্-সাফ্ফাত: ৬৪-৬৭] আল্লাহর বাণী:

﴿ وَأَصۡحَٰبُ ٱلشِّمَالِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلشِّمَالِ ٤١ فِي سَمُومٖ وَحَمِيمٖ ٤٢ وَظِلّٖ مِّن يَحۡمُومٖ ٤٣ لَّا بَارِدٖ وَلَا كَرِيمٍ ٤٤ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُتۡرَفِينَ ٤٥ وَكَانُواْ يُصِرُّونَ عَلَى ٱلۡحِنثِ ٱلۡعَظِيمِ ٤٦ ﴾ [الواقعة: ٤١، ٤٦]

“আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচন্ড উত্তপ্ত পানিতে, আর প্রচন্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়, যা শীতলও নয়, সুখকরও নয়। নিশ্চয় তারা ইতঃপূর্বে বিলাসিতায় মগ্ন ছিল, আর তারা জঘন্য পাপে লেগে থাকত।” [সূরা : আল্-ওয়াকিয়া: ৪১-৪৬]

আল্লাহর বাণী:

﴿ وَظِلّٖ مِّن يَحۡمُومٖ ٤٣ ﴾ [الواقعة: ٤٣]

“আর প্রচন্ড কালো ধোঁয়ার ছায়ায়” [সূরা : আল্-ওয়াকিয়া: ৪২] কালো ধোঁয়া। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ ٱنطَلِقُوٓاْ إِلَىٰ ظِلّٖ ذِي ثَلَٰثِ شُعَبٖ ٣٠ لَّا ظَلِيلٖ وَلَا يُغۡنِي مِنَ ٱللَّهَبِ ٣١ إِنَّهَا تَرۡمِي بِشَرَرٖ كَٱلۡقَصۡرِ ٣٢ كَأَنَّهُۥ جِمَٰلَتٞ صُفۡرٞ ٣٣ وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ٣٤ ﴾ [المرسلات: ٣٠، ٣٤

“যাও তিন শাখা বিশিষ্ট আগুনের ছায়ায়, যা ছায়াদানকারী নয় এবং তা জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখার মোকাবেলায় কোন কাজেও আসবে না। নিশ্চয় তা (জাহান্নাম) ছড়াবে প্রাসাদসম স্ফুলিঙ্গ। তা যেন হলুদ উষ্ট্রী। মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ!” [সূরা আল্-মুরসালাত: ৩০-৩৪] উপরিউক্ত আয়াতে ছায়া দ্বারা আগুনের দুর্ন্ধময় কালো ধোঁয়াকে বুঝানো হয়েছে। যা আসলে ছায়া নয়, জ্বলন্ত আগুনের মোকাবিলায় কোন কাজে ও আসবে না। অর্থাৎ জ্বলন্ত আগুনের উষ্ণতা কমাতে পারবে না।[154] ‘সামূল’ দ্বারা উষ্ণ হাওয়াকে ও হামীম দ্বারা ফুটন্ত পানিকে বুঝানো হয়েছে। [155]

একবিংশ পরিচ্ছেদ জান্নাতীদের খাদেম ও জাহান্নামীদের কারারক্ষক

প্রথমত: জান্নাতীদের খাদেম ও পরিচারিকা: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ ﴾ [الزخرف: ٧١]

“স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী।” [সূরা : আয্-যুখরুফ: ৭১] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَيُطَافُ عَلَيۡهِم بِ‍َٔانِيَةٖ مِّن فِضَّةٖ وَأَكۡوَابٖ كَانَتۡ قَوَارِيرَا۠ ١٥ قَوَارِيرَاْ مِن فِضَّةٖ قَدَّرُوهَا تَقۡدِيرٗا ١٦ ﴾ [الانسان: ١٥، ١٦

“তাদের চারপাশে আবর্তিত হবে রৌপ্যপাত্র ও স্ফটিক স্বচ্ছ পানপাত্র- রূপার ন্যায় শুভ্র স্ফটিক পাত্র; যার পরিমাপ তারা নির্ধারণ করবে।” [সূরা : আল্-ইনসান: ১৫-১৬] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيۡتَهُمۡ حَسِبۡتَهُمۡ لُؤۡلُؤٗا مَّنثُورٗا ١٩ ﴾ [الانسان: ١٩

আর তাদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করবে চিরকিশোরেরা; তুমি তাদেরকে দেখলে বিক্ষিপ্ত মুক্তা মনে করবে। [সূরা : আল্-ইনসান: ১৯] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ غِلۡمَانٞ لَّهُمۡ كَأَنَّهُمۡ لُؤۡلُؤٞ مَّكۡنُونٞ ٢٤ ﴾ [الطور: ٢٤

আর তাদের সেবায় চারপাশে ঘুরবে বালকদল; তারা যেন সুরক্ষিত মুক্তা। [সূরা আত্-তূর: ২৪] আল্লাহ তা‘আলা অগ্রগামীদের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلسَّٰبِقُونَ ١٠ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلۡمُقَرَّبُونَ ١١ فِي جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ١٢ ثُلَّةٞ مِّنَ ٱلۡأَوَّلِينَ ١٣ وَقَلِيلٞ مِّنَ ٱلۡأٓخِرِينَ ١٤ عَلَىٰ سُرُرٖ مَّوۡضُونَةٖ ١٥ مُّتَّكِ‍ِٔينَ عَلَيۡهَا مُتَقَٰبِلِينَ ١٦ يَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ ١٧ بِأَكۡوَابٖ وَأَبَارِيقَ وَكَأۡسٖ مِّن مَّعِينٖ ١٨ لَّا يُصَدَّعُونَ عَنۡهَا وَلَا يُنزِفُونَ ١٩ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٢٤ لَا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا تَأۡثِيمًا ٢٥ إِلَّا قِيلٗا سَلَٰمٗا سَلَٰمٗا ٢٦ ﴾ [الواقعة: ١٠، ٢٦

“আর অগ্রগামীরাই অগ্রগামী। তারাই সান্নিধ্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে নিআমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে । বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে, আর অল্পসংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। স্বর্ণ ও দামী পাথরখচিত আসনে! তারা সেখানে হেলান দিয়ে আসীন থাকবে মুখোমুখি অবস্থায়। তাদের আশ-পাশে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা, পানপাত্র, জগ ও প্রবাহিত ঝর্ণার শরাবপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে, তা পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে। আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। আর পাখির গোশ্ নিয়ে, যা তারা কামনা করবে। আর থাকবে ডাগরচোখা হূর, যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা, তারা যে আমল করত তার প্রতিদানস্বরূপ। তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোন বেহুদা কথা, এবং না পাপের কথা; শুধু এই বাণী ছাড়া, ‘সালাম, সালাম” [সূরা : আল্-ওয়াকিয়া: ১০-২৬] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣ ﴾ [الزمر: ٧٣

“আর যারা তাদের রবকে ভয় করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন সেখানে এসে পৌঁছবে এবং এর দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা ভাল ছিলে। অতএব স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এখানে প্রবেশ কর”। [সূরা : আয্-যুমার: ৭৩]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের রক্ষক: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ عَلَيۡهَا تِسۡعَةَ عَشَرَ ٣٠ وَمَا جَعَلۡنَآ أَصۡحَٰبَ ٱلنَّارِ إِلَّا مَلَٰٓئِكَةٗۖ وَمَا جَعَلۡنَا عِدَّتَهُمۡ إِلَّا فِتۡنَةٗ لِّلَّذِينَ كَفَرُواْ ﴾ [المدثر: ٣٠، ٣١

“তার উপর রয়েছে ঊনিশজন (প্রহরী)। আর আমি ফেরেশতাদেরকেই জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়েছি। আর কাফিরদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ আমি তাদের সংখ্যা নির্ধারণ করেছি।” [সূরা : আল্-মুদ্দাসসির: ৩০-৩১] আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামে আযাব প্রদানকারী ফিরিশতাদের সম্পর্কে বলেছেন,

﴿ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [التحريم:

“যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়।” [সূরা : আত্-তাহরীম: ৬] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন

﴿ فَلۡيَدۡعُ نَادِيَهُۥ ١٧ سَنَدۡعُ ٱلزَّبَانِيَةَ ١٨ ﴾ [العلق: ١٧، ١٨]

“অতএব, সে তার সভাসদদের আহবান করুক। অচিরেই আমি ডেকে নেব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে।” [সূরা : আল্-আলাক: ১৭-১৮] الزبانية মানে আযাবের ফিরিশতা। زبنيّ এর বহুবচন। الزبن শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ হলো তাড়িয়ে দেয়া, ঠেলে দেয়া। জাহান্নামের আযাবের কিছু ফিরিশতাদেরকে ঝাবানিয়া বলা হয়, কেননা তারা জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে তাড়িয়ে পাঠাবে। [156] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَنَادَوۡاْ يَٰمَٰلِكُ لِيَقۡضِ عَلَيۡنَا رَبُّكَۖ قَالَ إِنَّكُم مَّٰكِثُونَ ٧٧ لَقَدۡ جِئۡنَٰكُم بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَكُمۡ لِلۡحَقِّ كَٰرِهُونَ ٧٨ ﴾ [الزخرف: ٧٧، ٧٨

“তারা চিৎকার করে বলবে, ‘হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন’। সে বলবে, ‘নিশ্চয় তোমরা অবস্থানকারী’। অবশ্যই তোমাদের কাছে আমি সত্য নিয়ে এসেছিলাম; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী।” [সূরা : আয্-যুখরুফ: ৭৭-৭৮] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَسِيقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ إِلَىٰ جَهَنَّمَ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا فُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَآ أَلَمۡ يَأۡتِكُمۡ رُسُلٞ مِّنكُمۡ يَتۡلُونَ عَلَيۡكُمۡ ءَايَٰتِ رَبِّكُمۡ وَيُنذِرُونَكُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هَٰذَاۚ قَالُواْ بَلَىٰ وَلَٰكِنۡ حَقَّتۡ كَلِمَةُ ٱلۡعَذَابِ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٧١ ﴾ [الزمر: ٧١]

“আর কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কি রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত’? তারা বলবে, ‘অবশ্যই এসেছিল’; কিন্তু কাফিরদের উপর আযাবের বাণী সত্যে পরিণত হল।” [সূরা : আয্-যুমার: ৭১] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন

﴿ وَقَالَ ٱلَّذِينَ فِي ٱلنَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ يُخَفِّفۡ عَنَّا يَوۡمٗا مِّنَ ٱلۡعَذَابِ ٤٩ قَالُوٓاْ أَوَ لَمۡ تَكُ تَأۡتِيكُمۡ رُسُلُكُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِۖ قَالُواْ بَلَىٰۚ قَالُواْ فَٱدۡعُواْۗ وَمَا دُعَٰٓؤُاْ ٱلۡكَٰفِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَٰلٍ ٥٠ ﴾ [غافر: ٤٩، ٥٠

“আর যারা আগুনে থাকবে তারা আগুনের দারোয়ানদেরকে বলবে, ‘তোমাদের রবকে একটু ডাকো না! তিনি যেন একটি দিন আমাদের আযাব লাঘব করে দেন। তারা বলবে, ‘তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেনি’? জাহান্নামীরা বলবে, ‘হ্যাঁ অবশ্যই’। দারোয়ানরা বলবে, ‘তবে তোমরাই দো‘আ কর। আর কাফিরদের দো‘আ কেবল নিষ্ফলই হয়।” [সূরা : গাফের: ৪৯-৫০]

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ জান্নাতে প্রিয়জনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও জাহান্নামে প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছেদ

প্রথমত: জান্নাতে পরিবার পরিজন ও সন্তান সন্ততির সাথে দেখা সাক্ষাৎ: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ كُلُّ ٱمۡرِيِٕۢ بِمَا كَسَبَ رَهِينٞ ٢١ ﴾ [الطور: ٢١]

“আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমরা তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের কর্মের কোন অংশই কমাব না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের ব্যাপারে দায়ী থাকবে।” [সূরা: আত্-তূর: ২১] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ তা‘য়ালা ঈমানের উপর মৃত্যু বরণকারী মু’মিনের সন্তানের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। যদিও তারা কোন আমল করেনি। কেননা তাদের দ্বারা মু’মিনেরা চক্ষু শীতল করত। ফলে তারা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে উত্তম আকৃতিতে পিতামাতার সাথে মিলিত হবে।[157] এটা হলো আল্লাহর দয়ায় পিতামাতার আমলের বরকতে সন্তানের মর্যাদা বৃদ্ধি। অন্যদিকে সন্তানের দু‘আর বরকতে পিতামাতার মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِي الْجَنَّةِ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ، أَنَّى لِي هَذِهِ؟ فَيَقُولُ: بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মহান আল্লাহ জান্নাতে নেককার বান্দাহর মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। সে বলবে, হে রব! কিভাবে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেল? আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের দু‘আর ফলে।” [158]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন মানুষ মরে যায় তখন তিনটি জিনিস ব্যতীত তার থেকে সমস্ত কাজ ছিন্ন হয়ে যায়। সে তিনটি ব্যতীত কোন আমলই তার কাছে পৌঁছায় না। এমন কোন সাদকা কাজ, যা সর্বদা প্রচলিত থাকে। কিংবা এমন কোনো ইলম বা জ্ঞান, যা থেকে উপকৃত হওয়া যায়। অথবা নেক্-সন্তান, যে তার জন্যে দু’আ করে।” [159]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামে প্রিয়জন ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছেদ আল্লাহর বাণী:

﴿ قُلۡ إِنَّ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ وَأَهۡلِيهِمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ أَلَا ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡخُسۡرَانُ ٱلۡمُبِينُ ١٥ ﴾ [الزمر: ١٥]

“বল, নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত যারা কিয়ামত দিবসে নিজদেরকে ও তাদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত পাবে। জেনে রেখ, এটাই স্পষ্ট ক্ষতি।” [সূরা : আয্-যুমার: ১৫] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَتَرَى ٱلظَّٰلِمِينَ لَمَّا رَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَ يَقُولُونَ هَلۡ إِلَىٰ مَرَدّٖ مِّن سَبِيلٖ ٤٤ وَتَرَىٰهُمۡ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا خَٰشِعِينَ مِنَ ٱلذُّلِّ يَنظُرُونَ مِن طَرۡفٍ خَفِيّٖۗ وَقَالَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ وَأَهۡلِيهِمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ أَلَآ إِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ فِي عَذَابٖ مُّقِيمٖ ٤٥ ﴾ [الشورا: ٤٤، ٤٥]

“আর তুমি যালিমদেরকে দেখবে, যখন তারা আযাব প্রত্যক্ষ করবে তখন বলবে, ‘ফিরে যাওয়ার কোন পথ আছে কি’? তুমি তাদেরকে আরো দেখবে যে, তাদেরকে অপমানে অবনত অবস্থায় জাহান্নামে উপস্থিত করা হচ্ছে, তারা আড় চোখে তাকাচ্ছে। আর কিয়ামতের দিন মুমিনগণ বলবে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত যারা নিজদের ও পরিবার-পরিজনের ক্ষতি সাধন করেছে। সাবধান! যালিমরাই থাকবে স্থায়ী আযাবে।” [সূরা : আশ্-শূরা: ৪৪-৪৫] অর্থাৎ তাদের সাথে চিরদিনের বিচ্ছেদ, চাই তার পরিবার পরিজন জান্নাতে যাক বা জাহান্নামে যাক। অথবা এর মর্মার্থ হলো জাহান্নামে সবাই বাস করবে; কিন্তু তাদের সাথে কোন দেখা সাক্ষাৎ হবে না, তাদের কোন আনন্দ বিনোদন থাকবে না। আর এটাই হলো স্পষ্ট ক্ষতিগ্রস্ততা। কেননা তাদেরকে জাহান্নামে ফেলা হবে। চিরকালের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রিয়জন, বন্ধু বান্ধব, পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে, ফলে তাদেরকে ও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। [160]

ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ জান্নাতীদের মানসিক শান্তি ও জাহান্নামীদের মানসিক শাস্তি

প্রথমত: জান্নাতীদের মানসিক শান্তি

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ لِأَهْلِ الجَنَّةِ: يَا أَهْلَ الجَنَّةِ؟ فَيَقُولُونَ: لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ، فَيَقُولُ: هَلْ رَضِيتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: وَمَا لَنَا لاَ نَرْضَى وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، فَيَقُولُ: أَنَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالُوا: يَا رَبِّ، وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُ: أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي، فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا “

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেছেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতীদের ডেকে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! উত্তরে তারা বলবেন: হে রব, ‘আমরা তোমার দরবারে উপস্থিত, আমরা তোমার নিকট সফলতা কামনা করছি, যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে’ তখন আল্লাহ তাদের বলবেন, তোমরা কি আমার প্রতি রাজি-খুশি? তারা বলবে, হে আমাদের রব রাজি-খুশি না হওয়ার কি আছে? তুমি আমাদের এমন সবকিছু দিয়েছ, যা তুমি তোমার আর কোন মাখলুককে দাওনি। তারপর আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এর চেয়েও উত্তম কিছু দান করব? তখন তারা বলবে, কোন জিনিস এর চেয়ে উত্তম? তখন আল্লাহ ঘোষণা দেবেন, “তোমাদের প্রতি আমার সন্তুষ্টি অবধারিত, আমি আর কখনো তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না”[161]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” يُجَاءُ بِالْمَوْتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، كَأَنَّهُ كَبْشٌ أَمْلَحُ فَيُوقَفُ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ، فَيُقَالُ: يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ هَلْ تَعْرِفُونَ هَذَا؟ فَيَشْرَئِبُّونَ وَيَنْظُرُونَ وَيَقُولُونَ: نَعَمْ، هَذَا الْمَوْتُ، قَالَ: وَيُقَالُ: يَا أَهْلَ النَّارِ هَلْ تَعْرِفُونَ هَذَا؟ قَالَ فَيَشْرَئِبُّونَ وَيَنْظُرُونَ وَيَقُولُونَ: نَعَمْ، هَذَا الْمَوْتُ، قَالَ فَيُؤْمَرُ بِهِ فَيُذْبَحُ، قَالَ: ثُمَّ يُقَالُ: يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ خُلُودٌ فَلَا مَوْتَ، وَيَا أَهْلَ النَّارِ خُلُودٌ فَلَا مَوْتَ “

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “মৃত্যুকে কিয়ামতের দিন একটি মেষের আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে রাখা হবে। তারপর বলা হবে, হে জান্নাতবাসী তোমরা একে চেন? তখন তারা মাথা উঁচু করবে এবং দেখে বলবে, হ্যাঁ আমরা চিনি, এ হল মৃত্যু। তারপর জাহান্নামীদের বলা হবে, হে জাহান্নামবাসী, তোমরা একে চেন? তখন তারা মাথা উঁচু করবে এবং দেখে বলবে, হ্যাঁ আমরা চিনি, এ হল মৃত্যু। তারপর আদেশ দেয়া হবে যবেহ করার জন্য। তখন তাকে যবেহ করা হবে। তারপর জান্নাতীদের বলা হবে, হে জান্নাতীগণ, তোমরা জান্নাতে চিরদিন থাকবে আর কোন দিন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে না। এবং জাহান্নামীদের বলা হবে, হে জাহান্নামীরা, তোমরা জাহান্নামে চিরদিন থাকবে, আর কোন দিন তোমরা মৃত্যুবরণ করবে না।” [162]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “فَيَزْدَادُ أَهْلُ الجَنَّةِ فَرَحًا إِلَى فَرَحِهِمْ، وَيَزْدَادُ أَهْلُ النَّارِ حُزْنًا إِلَى حُزْنِهِمْ “

আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. হতেও অনুরূপ বর্ণিত। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “তখন জান্নাতীদের আনন্দ আরো বৃদ্ধি পাবে। আর জাহান্নামীদের অশান্তি আরো বৃদ্ধি পাবে।” [163]

দ্বিতীয়তঃ জাহান্নামীদের মানসিক শাস্তি: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন

﴿ وَقَالَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لَمَّا قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ إِنَّ ٱللَّهَ وَعَدَكُمۡ وَعۡدَ ٱلۡحَقِّ وَوَعَدتُّكُمۡ فَأَخۡلَفۡتُكُمۡۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيۡكُم مِّن سُلۡطَٰنٍ إِلَّآ أَن دَعَوۡتُكُمۡ فَٱسۡتَجَبۡتُمۡ لِيۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوٓاْ أَنفُسَكُمۖ مَّآ أَنَا۠ بِمُصۡرِخِكُمۡ وَمَآ أَنتُم بِمُصۡرِخِيَّ إِنِّي كَفَرۡتُ بِمَآ أَشۡرَكۡتُمُونِ مِن قَبۡلُۗ إِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٢ ﴾ [ابراهيم: ٢٢]

“আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য ওয়াদা, তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করো না, বরং নিজদেরকেই ভর্ৎসনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতঃপূর্বে তোমরা আমাকে যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব” [সূরা ইবরাহীম: ২২] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿أَلَمۡ تَكُنۡ ءَايَٰتِي تُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ ١٠٥ قَالُواْ رَبَّنَا غَلَبَتۡ عَلَيۡنَا شِقۡوَتُنَا وَكُنَّا قَوۡمٗا ضَآلِّينَ ١٠٦ رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡهَا فَإِنۡ عُدۡنَا فَإِنَّا ظَٰلِمُونَ ١٠٧ قَالَ ٱخۡسَ‍ُٔواْ فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ ١٠٨ إِنَّهُۥ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ ١٠٩ فَٱتَّخَذۡتُمُوهُمۡ سِخۡرِيًّا حَتَّىٰٓ أَنسَوۡكُمۡ ذِكۡرِي وَكُنتُم مِّنۡهُمۡ تَضۡحَكُونَ ١١٠ إِنِّي جَزَيۡتُهُمُ ٱلۡيَوۡمَ بِمَا صَبَرُوٓاْ أَنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ١١١﴾ [المؤمنون: ١٠٥، ١١١]

“আমার আয়াতসমূহ কি তোমাদের কাছে পাঠ করা হত না?’ তারপর তোমরা তা অস্বীকার করতে’। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল, আর আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট’। ‘হে আমাদের রব, এ থেকে আমাদেরকে বের করে দিন, তারপর যদি আমরা আবার তা করি তবে অবশ্যই আমরা হব যালিম। ’আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই থাক, আর আমার সাথে কথা বলো না।’ আমার বান্দাদের একদল ছিল যারা বলত, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করুন,আর আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তারপর তাদেরকে নিয়ে তোমরা ঠাট্টা করতে। অবশেষে তা তোমাদেরকে আমার স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল। আর তোমরা তাদের নিয়ে হাসি-তামাশা করতে।’ নিশ্চয় আমি তাদের ধৈর্যের কারণে আজ তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম; নিশ্চয় তারাই হল সফলকাম।” [সূরা আল-মুমিন, আয়াত: ১০৫-১১১] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ يُنَادَوۡنَ لَمَقۡتُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُ مِن مَّقۡتِكُمۡ أَنفُسَكُمۡ إِذۡ تُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلۡإِيمَٰنِ فَتَكۡفُرُونَ ١٠ قَالُواْ رَبَّنَآ أَمَتَّنَا ٱثۡنَتَيۡنِ وَأَحۡيَيۡتَنَا ٱثۡنَتَيۡنِ فَٱعۡتَرَفۡنَا بِذُنُوبِنَا فَهَلۡ إِلَىٰ خُرُوجٖ مِّن سَبِيلٖ ١١ ذَٰلِكُم بِأَنَّهُۥٓ إِذَا دُعِيَ ٱللَّهُ وَحۡدَهُۥ كَفَرۡتُمۡ وَإِن يُشۡرَكۡ بِهِۦ تُؤۡمِنُواْۚ فَٱلۡحُكۡمُ لِلَّهِ ٱلۡعَلِيِّ ٱلۡكَبِيرِ ١٢ ﴾ [غافر: ١٠، ١٢]

“নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদেরকে উচ্চকণ্ঠে বলা হবে, তোমাদের নিজদের প্রতি তোমাদের (আজকের) এ অসন্তোষ অপেক্ষা অবশ্যই আল্লাহর অসন্তোষ অধিকতর ছিল, যখন তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করা হয়েছিল তারপর তোমরা তা অস্বীকার করেছিলে। তারা বলবে, হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে দু’বার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দু’বার জীবন দিয়েছেন। অতঃপর আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব (জাহান্নাম থেকে) বের হবার কোন পথ আছে কি’? [তাদেরকে বলা হবে] ‘এটা তো এজন্য যে, যখন আল্লাহকে এককভাবে ডাকা হত তখন তোমরা তাঁকে অস্বীকার করতে আর যখন তাঁর সাথে শরীক করা হত তখন তোমরা বিশ্বাস করতে। সুতরাং যাবতীয় কর্তৃত্ব সমুচ্চ, মহান আল্লাহর।” [সূরা গাফের, আয়াত: ১০, ১২] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَقَالَ ٱلَّذِينَ فِي ٱلنَّارِ لِخَزَنَةِ جَهَنَّمَ ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ يُخَفِّفۡ عَنَّا يَوۡمٗا مِّنَ ٱلۡعَذَابِ ٤٩ قَالُوٓاْ أَوَ لَمۡ تَكُ تَأۡتِيكُمۡ رُسُلُكُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِۖ قَالُواْ بَلَىٰۚ قَالُواْ فَٱدۡعُواْۗ وَمَا دُعَٰٓؤُاْ ٱلۡكَٰفِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَٰلٍ ٥٠ ﴾ [غافر: ٤٩، ٥٠]

“আর যারা আগুনে থাকবে তারা আগুনের দারোয়ানদেরকে বলবে, ‘তোমাদের রবকে একটু ডাকো না! তিনি যেন একটি দিন আমাদের আযাব লাঘব করে দেন।’ তারা বলবে, ‘তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেনি’? জাহান্নামীরা বলবে, ‘হ্যাঁ অবশ্যই’। দারোয়ানরা বলবে, ‘তবে তোমরাই দো‘আ কর। আর কাফিরদের দো‘আ কেবল নিষ্ফলই হয়।” [সূরা গাফের, আয়াত: ৪৯, ৫০] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَنَادَوۡاْ يَٰمَٰلِكُ لِيَقۡضِ عَلَيۡنَا رَبُّكَۖ قَالَ إِنَّكُم مَّٰكِثُونَ ٧٧ لَقَدۡ جِئۡنَٰكُم بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَكُمۡ لِلۡحَقِّ كَٰرِهُونَ ٧٨ ﴾ [الزخرف: ٧٧، ٧٨]

“তারা চিৎকার করে বলবে, ‘হে মালিক, তোমার রব যেন আমাদেরকে শেষ করে দেন’। সে বলবে, ‘নিশ্চয় তোমরা অবস্থানকারী’।‘অবশ্যই তোমাদের কাছে আমি সত্য নিয়ে এসেছিলাম; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী।” [সূরা যুখরফ: ৭৭- ৭৮] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَنَادَىٰٓ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَنَّةِ أَصۡحَٰبَ ٱلنَّارِ أَن قَدۡ وَجَدۡنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقّٗا فَهَلۡ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمۡ حَقّٗاۖ قَالُواْ نَعَمۡۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنُۢ بَيۡنَهُمۡ أَن لَّعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّٰلِمِينَ ٤٤ ﴾ [الاعراف: ٤٤

“আর জান্নাতের অধিবাসীগণ আগুনের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, ‘আমাদের রব আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা আমরা সত্য পেয়েছি। সুতরাং তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছেন, তা কি তোমরা সত্যই পেয়েছ’? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ’। অতঃপর এক ঘোষক তাদের মধ্যে ঘোষণা দেবে যে, আল্লাহর লা’নত যালিমদের উপর।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ৪৪] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَنَادَىٰٓ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِ أَصۡحَٰبَ ٱلۡجَنَّةِ أَنۡ أَفِيضُواْ عَلَيۡنَا مِنَ ٱلۡمَآءِ أَوۡ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُۚ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ ٥٠ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُواْ دِينَهُمۡ لَهۡوٗا وَلَعِبٗا وَغَرَّتۡهُمُ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَاۚ فَٱلۡيَوۡمَ نَنسَىٰهُمۡ كَمَا نَسُواْ لِقَآءَ يَوۡمِهِمۡ هَٰذَا وَمَا كَانُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا يَجۡحَدُونَ ٥١ ﴾ [الاعراف: ٥٠، ٥١]

“আর আগুনের অধিবাসীরা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডেকে বলবে, ‘আমাদের উপর কিছু পানি অথবা তোমাদেরকে আল্লাহ যে রিযক দিয়েছেন, তা ঢেলে দাও’। তারা বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা কাফিরদের উপর হারাম করেছেন’। ‘যারা তাদের ধর্মকে গ্রহণ করেছে খেলা ও তামাশারূপে এবং তাদেরকে দুনিয়ার জীবন প্রতারিত করেছে’। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে ভুলে যাব, যেমন তারা তাদের এই দিনের সাক্ষাতকে ভুলে গিয়েছিল। আর (যেভাবে) তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৫০, ৫১]

চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ জান্নাতীদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ও জাহান্নামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি

প্রথমত: জান্নাতীদের সর্বোচ্চ পুরস্কার: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ ۞لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ ٢٦ ﴾ [يونس: ٢٦]

“যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরো বেশি কিছু।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৬] আয়াতে ‘আল-হুসনা’ অর্থ জান্নাত আর ‘যিয়াদা’ বা আরো বেশী কিছু অর্থ আল্লাহর দিকে তাকানো বা আল্লাহর দীদার লাভ। [164] আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,

﴿لَهُم مَّا يَشَآءُونَ فِيهَا وَلَدَيۡنَا مَزِيدٞ ٣٥﴾ [ق: ٣٥

“তারা যা চাইবে, সেখানে তাদের জন্য তাই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরো অধিক।” সূরা ক্বাফ, আয়াত: ৩৫] এখানে ‘মাযিদ’ বা অধিক দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানো। [165] আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,

﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢، ٢٣]-

“সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জ্বল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপকারী।” সূরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২২, ২৩]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ أُنَاسٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ القِيَامَةِ؟ فَقَالَ: «هَلْ تُضَارُّونَ فِي الشَّمْسِ لَيْسَ دُونَهَا سَحَابٌ» قَالُوا: لاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «هَلْ تُضَارُّونَ فِي القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ لَيْسَ دُونَهُ سَحَابٌ» قَالُوا: لاَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: ” فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ يَوْمَ القِيَامَةِ كَذَلِكَ

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার কতিপয় লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? উত্তরে তিনি বললেন, সূর্যের নিচে যখন কোন মেঘ থাকে না তখন তা দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলল,না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, পূর্ণিমার চাঁদ যদি মেঘের অন্তরালে না থাকে তবে তা দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বলল, না ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেন, তোমরা নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলাকে ঐরূপ দেখতে পাবে। [166]

عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنَظَرَ إِلَى القَمَرِ لَيْلَةً – يَعْنِي البَدْرَ – فَقَالَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ، كَمَا تَرَوْنَ هَذَا القَمَرَ، لاَ تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا»

জারীর ইবন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা অবশ্যই অচিরেই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমনি তোমরা এই চাঁদটিকে দেখতে পাচ্ছ। অথচ তোমরা এটি দেখতে কোন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছ না। অতএব, যদি তোমরা সক্ষম হও তবে সূর্য উদয়ের পূর্বের নামায এবং সূর্যাস্তের পূর্বের নামায আদায় করতে যেন পরাজিত না হও। তাহলে তাই কর। [167]

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ القِيَامَةِ؟ قَالَ: «هَلْ تُضَارُونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالقَمَرِ إِذَا كَانَتْ صَحْوًا؟»، قُلْنَا: لاَ، قَالَ: «فَإِنَّكُمْ لاَ تُضَارُونَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ يَوْمَئِذٍ، إِلَّا كَمَا تُضَارُونَ فِي رُؤْيَتِهِمَا»

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কিয়ামতের দিন আমাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ করব কি? তিনি বললেন: মেঘমুক্ত আকাশে তোমরা সূর্য দেখতে কোন বাধাপ্রাপ্ত হও কি? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন: সেদিন তোমারাও তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে বাধাপ্রাপ্ত হবে না। এতটুকু ব্যতীত যতটুকু সূর্য দেখার সময় পেয়ে থাক।” [168]

عَنْ صُهَيْبٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، قَالَ: يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ “

সুহাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন, তোমরা কি চাও আমি আরো অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবেন, আপনি কি আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে দেননি, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেননি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর আল্লাহ তা‘আলা পর্দা তুলে নিবেন। আল্লাহর দীদার অপেক্ষা অতি প্রিয় কোন বস্তু তাদের দেওয়া হয়নি।” [169]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَسُوقًا، يَأْتُونَهَا كُلَّ جُمُعَةٍ، فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ فَتَحْثُو فِي وُجُوهِهِمْ وَثِيَابِهِمْ، فَيَزْدَادُونَ حُسْنًا وَجَمَالًا، فَيَرْجِعُونَ إِلَى أَهْلِيهِمْ وَقَدِ ازْدَادُوا حُسْنًا وَجَمَالًا، فَيَقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ: وَاللهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا، فَيَقُولُونَ: وَأَنْتُمْ، وَاللهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا “

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমু‘আয় জান্নাতী লোকেরা এতে সমবেত হবে। অতঃপর উত্তরের বায়ু প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমন্ডল ও কাপড় চোপড়ে গিয়ে লাগবে। এতে তাদের সৌন্দর্য এবং গায়ের রং আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তারা নিজ পরিবারের নিকট ফিরে আসবে। এসে দেখবে, তাদের গায়ের রং এবং সৌন্দর্যও বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর কসম! আমাদের নিকট হতে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমাদের গায়ের সৌন্দর্য আমাদের কাছ হতে যাবার পর বহুশুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।” [170]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «جَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ، آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا، وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ، آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا، وَمَا بَيْنَ القَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلَّا رِدَاءُ الكِبْرِ عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ

আবদুল্লাহ ইবন কায়স রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুটি জান্নাত এমন যে, এগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী রুপার তৈরি। অন্য দুটি জান্নাত এমন, যেগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি। ‘আদন’ নামক জান্নাতে জান্নাতিগণ আল্লাহর দীদার লাভ করবেন। এ সময় তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে তাঁর মহিমার চাদর ব্যতীত আর কোন অন্তরায় থাকবে না।” [171]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের সর্বোচ্চ ভয়াবহ আযাব: জাহান্নামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে আল্লাহর দীদার থেকে বঞ্চিত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥ ثُمَّ إِنَّهُمۡ لَصَالُواْ ٱلۡجَحِيمِ ١٦ ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ١٧ ﴾ [المطففين: ١٥، ١٧]

“কখনো নয়, নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। তারপর নিশ্চয় তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা অস্বীকার করতে।”[সূরা আল্-মুতাফফিফীন: ১৫-১৭] কাফির ও মুনাফিকদের সবচেয়ে বেশী আযাব হবে। আল্লাহর বাণী:

﴿ إِنَّ ٱلۡمُجۡرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ٧٤ لَا يُفَتَّرُ عَنۡهُمۡ وَهُمۡ فِيهِ مُبۡلِسُونَ ٧٥ ﴾ [الزخرف: ٧٤، ٧٥]

“নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে স্থায়ী হবে; তাদের থেকে আযাব কমানো হবে না এবং তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়বে।” [সূরা : আয্-যুখরুফ: ৭৪-৭৫] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ فَذُوقُواْ فَلَن نَّزِيدَكُمۡ إِلَّا عَذَابًا ٣٠ ﴾ [النبا: ٣٠]

“সুতরাং তোমরা স্বাদ গ্রহণ কর। আর আমি তো কেবল তোমাদের আযাবই বৃদ্ধি করব।” [সূরা আন্-নাবা: ৩০] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ لَهُمۡ فِيهَا زَفِيرٞ وَهُمۡ فِيهَا لَا يَسۡمَعُونَ ١٠٠ ﴾ [الانبياء: ١٠٠]

“সেখানে থাকবে তাদের আর্তনাদ, আর সেখানে তারা শুনতে পাবে না।” [সূরা : আল-আম্বিয়া: ১০০]

﴿ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ شَقُواْ فَفِي ٱلنَّارِ لَهُمۡ فِيهَا زَفِيرٞ وَشَهِيقٌ ١٠٦ ﴾ [هود: ١٠٦

“অতঃপর যারা হয়েছে দুর্ভাগা, তারা থাকবে আগুনে। সেখানে থাকবে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ।” [সূরা: হূদ: ১০৬ ]

﴿ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَهُمۡ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُم مِّنۡ عَذَابِهَاۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي كُلَّ كَفُورٖ ٣٦ وَهُمۡ يَصۡطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا نَعۡمَلۡ صَٰلِحًا غَيۡرَ ٱلَّذِي كُنَّا نَعۡمَلُۚ أَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ فَذُوقُواْ فَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٍ ٣٧ ﴾ [فاطر: ٣٦، ٣٧]

“আর যারা কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। আর সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে দিন, আমরা পূর্বে যে আমল করতাম, তার পরিবর্তে আমরা নেক আমল করব’। (আল্লাহ বলবেন) ‘আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি যে, তখন কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত? আর তোমাদের কাজে তো সতর্ককারী এসেছিল। কাজেই তোমরা আযাব আস্বাদন কর, আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা ফাতির: ৩৬-৩৭]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِنَّ أَهْلَ النَّارِ لَيَبْكُونَ حَتَّى لَوْ أُجْرِيَتِ السُّفُنُ فِي دُمُوعِهِمْ لَجَرَتْ، وَإِنَّهُمْ لَيَبْكُونَ الدَّمَ يَعْنِي مَكَانَ الدَّمْعِ»

আব্দুল্লাহ ইবন কাইস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জাহান্নামীরা সারা জীবন কাঁদতে থাকবে, এমনকি তাদের চোখের পানিতে নৌকা চালালে তাও চলবে, তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে রক্ত প্রবাহিত হবে। [172]

পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ জান্নাতের পথ ও জাহান্নামের পথ

প্রথমত: জান্নাতের পথ:

জান্নাতে যাওয়ার উপায় হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। আল্লাহর বাণী:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَجِيبُواْ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمۡ لِمَا يُحۡيِيكُمۡۖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَحُولُ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَقَلۡبِهِۦ وَأَنَّهُۥٓ إِلَيۡهِ تُحۡشَرُونَ ٢٤ ﴾ [الانفال: ٢٤

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন সে তোমাদেরকে আহবান করে তার প্রতি, যা তোমাদেরকে জীবন দান করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন। আর নিশ্চয় তাঁর নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।” [আল-আনফাল: ২৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَأَنتُمۡ تَسۡمَعُونَ ٢٠ ﴾ [الانفال: ٢٠

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছ।” [আল-আনফাল: ২০]

﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]

“রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।” [সূরা হাশর: ৭] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ قُلۡ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَإِنَّمَا عَلَيۡهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيۡكُم مَّا حُمِّلۡتُمۡۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهۡتَدُواْۚ ٥٤ ﴾ [النور: ٥٤]

“বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।’ তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে শুধু তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তবে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে।” [সূরা : আন্-নূর:৫৪]

﴿ لَّا تَجۡعَلُواْ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيۡنَكُمۡ كَدُعَآءِ بَعۡضِكُم بَعۡضٗاۚ قَدۡ يَعۡلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمۡ لِوَاذٗاۚ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [النور: ٦٣]

“তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।” [সূরা : আন্-নূর: ৬৩]

﴿ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ٧١ ﴾ [الاحزاب: ٧١]

“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।” [সূরা : আল্-আহযাব: ৭১]

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣﴾ [النساء: ١٣]

“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা” [সূরা আন-নিসা: ১৩] সুতরাং যে আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে সেই সফলকাম হয়েছে। আল্লাহর বাণী:

﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَ [الشمس: ٩]

“নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তকে পরিশুদ্ধ করেছে”’। [সূরা আশ-শামস: ৯]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى»، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করল।”[173]

وعنه t قال:قال رسول الله r: «مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যারা আমার অনুসরণ করে তারা মূলত আল্লাহরই অনুসরণ করল। আর যারা আমার অবাধ্য হলো তারা মূলত আল্লাহরই অবাধ্য হলো।” [174] জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায় হলো উপকারী ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা। আর তা হলো কুরআন ও সুন্নহের ইলম অর্জন করে তদানুযায়ী আমল করা। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا، سَهَّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ

“যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণের পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” [175] বান্দাহ যখন জান্নাতীদের আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ وَلَلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ لَّكَ مِنَ ٱلۡأُولَىٰ ٤ ﴾ [الضحا: ٤]

“আর অবশ্যই তোমার জন্য পরবর্তী সময় পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে উত্তম।” [সূরা আদ-দুহা: ৪]

জান্নাতে যাওয়ার উপায়সমূহ সংক্ষেপে নিম্নরূপ: আল্লাহ, ফিরিশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, কিয়ামত ও তাকদীরের ভাল মন্দের উপর ঈমান আনা। শাহাদাতাইন তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এর অনুযায়ী আমল করা। সালাত কায়েম করা, যাকাত দেয়া, রমাদান মাসের সাওম পালন করা, সামর্থবান হলে হাজ্জ আদায় করা। এমনিভাবে আল্লাহর ইবাদাত করা যেন তুমি তাকে দেখছ, আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও তবে ভাবো তিনি তো তোমাকে দেখছেন। কথা ও কাজে সত্যবাদী হওয়া, আমানতের হেফাযত করা, ওয়াদ পূর্ণ করা, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, প্রতিবেশীর প্রতি দয়া করা, ইয়াতীম মিসকিন, দাসদাসী ও পশুপাখির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, মেহমানের সম্মান করা, একজন মুসলিম ভাইয়ের বিপদে সহযোগিতা করা, বিপদগ্রস্ত লোকের সাহায্য করা, একজন মুসলিমের দোষ গোপন করা, তাকে সাহায্য করা, একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদাত করা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য মহব্বত রাখা, আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহর রহমতের আশা করা, আল্লাহর নিকট তাওবা করা, আল্লাহর আদেশের উপর ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, আল্লাহর যিকির করা, তাঁর নিকট দু‘আ করা ও চাওয়া, সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা, কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, যে তোমাকে বঞ্চিত করে তাকে তুমি দেবে আর যে তোমার প্রতি অবিচার করে তুমি তাকে ক্ষমা করবে, কেননা আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকিনদের জন্য জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٣٤ ﴾ [ال عمران: ١٣٤]

“যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।” [সূরা আলে ইমরান: ১৩৪] যাবতীয় কর্মে ইনসাফ করা, আল্লাহর সব মাখলুকের প্রতি ইনসাফ করা; এমনকি কাফিরদের প্রতি ও, মানুষকে খানা খাওয়ানো, সালামের প্রসার করা, গভীর রাতে সালাত আদায় করা, সদাচরণ করা, আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল, কিতাব, মুসলিমদের ইমাম ও সাধারণ মুসলিমদের হিতাকাংখী হওয়া ইত্যাদি। এ সব আমল ও এ ধরনের যে সব আমল আছে যে গুলো দ্বারা একজন বান্দা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আর এটিই হল, মহা সফলতা।[176] জান্নাতে যাওয়ার সব আমল এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে একথায় বলা যায় যে, জান্নাতীদের সব আমল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ ও আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ ۚ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣ ﴾ [النساء: ١٣]

“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা” [সূরা আন-নিসা: ১৩]

দ্বিতীয়ত: জাহান্নামে যাওয়ার কারণসমূহ: জাহান্নামে যাওয়ার কারণ অসংখ্য ও অগণিত। সামগ্রিক কারণ হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা। এ পথ জাহান্নামীদের কর্মকান্ডের পথ যা বান্দাহকে মহা ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। তাই জাহান্নামীদের সব ধরণের আমল থেকে দূরে থাকা অত্যাবশ্যকীয়। জাহান্নামে যাওয়ার কারণসমূহ সংক্ষেপে নিম্নরূপ: আল্লাহর সাথে শরিক করা, নবী ও রাসূলদের অস্বীকার করা, কুফরী করা, হিংসা করা, যুলম ও অত্যাচার করা, আমানতের খিয়ানত করা , প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়া, খিয়ানত করা, আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা, জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা, কার্পণ্য করা, কথা ও কাজে দ্বিমূখী হওয়া, মুনাফেকি করা, আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া, বিপদে ধৈর্যহারা হওয়া, আল্লাহর সীমালংঘন করা, আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা অমান্য করা, আল্লাহকে বাদ দিয়ে মাখলুককে ভয় করা, খালেককে বাদ দিয়ে মাখলুক থেকে আশা করা, খালেকের উপর ভরসা না করে মাখলুকের উপর ভরসা করা, আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া, কুরআন ও সুন্নাহের বিরোধিতা করা, আল্লাহর নাফরমানি করে মাখলুকের আনুগত্য করা, বাতিলের উপর গোড়ামী করা, আল্লাহর আয়াতের উপহাস করা, সত্যকে অস্বীকার করা, ইলম ও সাক্ষ্যপ্রদানে যা প্রকাশ করা উচিত তা গোপন করা, যাদু করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা, আল্লাহর হারামকৃত আত্মাকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা, ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা, সুদ খাওয়া, ঘুষ দেয়া, অন্যায় ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা, যুধের ময়দান থেকে পালায়ন করা, সতীসাধ্বী নারীকে অপবাদ দেয়া, গীবত করা, চোগলখোরি করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মদ্যপান করা, বড়াই করা, অহংকার করা, চুরি করা, মিথ্যা কসম খাওয়া, নারীরা পুরুষের সাথে এবং পুরুষরা নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা, দান করে খোটা দেয়া, মিথ্যা কসম দ্বারা মাল বিক্রি করা, গণক ও জ্যোতিষকে বিশ্বাস করা, প্রাণীর ছবি বানানো, কবরে সেজদা করা, মৃত ব্যক্তির উপর আওয়াজ করে কান্না করা, পুরুষদের জন্য পায়ের গোড়ালীর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা, পুরুষদের রেশমি কাপড় ও অলংকার পরিধান করা, প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া, ওয়াদা খেলাফ করা, এছাড়াও আরো অন্যন্য আমলসমূহ যা মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছায়। আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।[177] জাহান্নামে যাওয়ার সব আমল এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে সংক্ষেপে বলা যায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানীর সব কাজই জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤﴾ [النساء: ١٤]

“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।” [সূরা আন-নিসা: ১৪] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [الاحزاب: ٣٦]

“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।” [সূরা : আল্-আহযাব: ৩৬]

﴿ وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١، ٣

“সময়ের কসম, নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততায় নিপতিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।” [সূরা আল-আসর: ১-৩] আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নাম ও সুউঁচু সিফাতের ওয়াসিলায় তাঁর কাছে সরল সঠিক পথের প্রার্থনা করছি। আল্লাহর কাছে মহাসফলতা অর্জনকারী জান্নাতের কামনা করছি, আরো তাওফিক কামনা করছি কথা ও কাজে যে সব কাজ জান্নাতের নিকটবর্তী করে সেগুলো করার। আল্লাহর কাছে মহাক্ষতিগ্রস্ত জাহান্নাম থেকে ও সেব কাজ জাহান্নামের নিকটবর্তী করে সে সব কাজ থেকে পানাহ চাচ্ছি। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাব্বীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত একনিষ্ঠার সাথে তাঁর অনুসরণকারী সকলের উপর।

[1] আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৯২।
[2] মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৯।
[3] বুখারী, হাদীস নং ১৩১৬।
[4] আল-ক্বামূস আল-মুহীত, পৃষ্ঠা: ৬৬৯, মুখতাসারুস সিহাহ, পৃষ্ঠা: ২১৫, মুফরাদাত গরীবিল কুরআন, লেখক আল-আসফিহানী, পৃষ্ঠা: ৬৪৭।
[5] আল-‘মুজামুল মুফাহরিস লি আল-ফাযিল কুরআনিল কারীম: পৃষ্ঠা ৫২৭।
[6] আল-ক্বামূস আল-মুহীত, পৃষ্ঠা: ৪৯১, আল-‘মুজাম আল অসীত, পৃষ্ঠা: ১/২৩৩, মুফরাদাত গরীবিল কুরআন, লেখক আল-আসফিহানী, পৃষ্ঠা: ২৮২, মুখতারুস সিহাহ, পৃষ্ঠা: ৭৪।
[7] আল-‘মুজামুল মুফাহরিস লি আল-ফাযিল কুরআনিল কারীম: পৃষ্ঠা ২৩১-২৩২।
[8] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৮২৪।
[9] বুখারী, হাদীস নং ২৭৯৬।
[10] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬৭।
[11] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৩৯২, তাফসীরে বাগভী: ৪/৩৬৭।
[12] মুসলিম, হাদীস নং ২০৪।
[13] বুখারী, হাদীস নং ৩৯৭৬, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৭৩-২৮৭৫।
[14] মুসলিম, হাদীস নং ২২৮৪।
[15] ‘হাদিয়ুল আরোয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ’ লেখক: ইবনুল কাইয়েম রহ., পৃ: ১১১।
[16] লিসানুল আরব: ১৩/৯৯, মুফরাদাতুল কুরআন: পৃষ্ঠা: ২০৪, মিসবাহুল মুনীর: ১/১১২।
[17] মু ‘জামুল মুফাহরিস লি আলফাযিল কুরআন: ৮০-৮২।
[18] হাদিউল আরো য়াহ, লেখক ইবনুল কাইয়েম, পৃষ্ঠা: ১১১।
[19] ফাতহুল বারী: ৬/১৩, ক্বামুসূল মুহীত: পৃষ্ঠা ৭২৫।
[20] হাদিয়ুল আরো য়াহ, পৃ: ১১৬।
[21] হাদিয়ুল আরো য়াহ, পৃ: ১১৭।
[22] তাফসীরে ইবন কাসীর: ২/৫৩৯।
[23] তাফসীরে বাগবী: ৩/৩৫।
[24] .তাফসীরে বগবী: ৪৬০/৪, তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪৮৭/৪।
[25]. আল্লামা ইবন্ কাসীর: ৪৮৭/৪।
[26] .আল্লামা ইবনে কাসীর: ২৩৬/৪।
[27] বুখারী, হাদীস নং: ২৭৯০।
[28] তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/৪৮৫, তাফসীরে বগবী: ৪/৪৫৮।
[29] তাফসীরে বগবী: ৪/৪৫৮-৪৫৯, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/৪৮৫-৪৮৬, তাখফীফ মিনান নার, লেখক, ইবন রজব: পৃষ্ঠা ৬২-৬৩।
[30] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৪৬।
[31] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৮৬।
[32] আবু দাউদ: হাদীস নং ৪৭৫৩, নাসায়ী: ২০৫৯, ইবন মাজাহ: ৪২৬৯, মুসনাদে আহমদ: ১৮৫৩৪।
[33]. এ শব্দটির অর্থ গব্মুজ এটি বহু বচন, এর এক বচন جنبذة বুখারি নবীদের আলোচনা অধ্যায়ে শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীসটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষে প্রমাণস্বরূপ। তারা বলেন, জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে সৃজিত এবং জান্নাত আসমানে। দেখুন: ইমাম মুসলিম, শরহে নাওয়াওয়ী, পৃ: ৫৭৯/৩।
[34] মুত্তাফাকুন আলাইহ : বুখারী: হাদিস নং: ৩৪৯, মুসলিম, হাদীস নং: ১৬২।
[35]. তিরমিযি, হাদীস নং ২৫৬০। নাসায়ী, হাদীস নং: ৩৭৭২।
[36] বুখারী, হাদীস নং ১৩৭৯, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৬৬।
[37] মুসনাদে আহমদ: ৩/৪৫৫, নাসায়ী: হাদীস নং ২০৭১।

[38] মুসলিম, হাদীস নং: ১৮৮৭।
[39] বুখারী, হাদীস নং ৩৩২৭।
[40] মুসলিম, হাদীস নং ২৩৪।
[41] মুসলিম: হাদিস নং ২৯৬৭।
[42] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৫৭।
[43] বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৭।
[44] তাফসীরে বাগবী: ৪/৪৯১, তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৫১৬, ৫৪৯।
[45] তিরমিযী: হাদীস নং ৬৮২।
[46] তিরমিযী: হাদীস নং ২৫৬০। নাসায়ী: হাদীস নং ৩৭৬৩।
[47] বুখারী, হাদীস নং ৬৪৮৭, মুসলিম, হাদীস নং ২৮২২।
[48] ফাতহুল বারী: ১১/৩২০।
[49] ফাতহুল বারী: ১১/৩২০।
[50] শরহে নাওয়াওয়ী: ১৭/১৬৫।
[51] মুসলিম, হাদীস নং ১৯৮।
[52] মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬।
[53] মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৫।
[54] তিরিমিযী, হাদীস নং ২৩৫৩-২৩৫৪।
[55] তিরিমিযী, হাদীস নং ২৩৫৫।
[56] মুসলিম, হাদীস নং ২৯৮০।
[57] হাদিউল আরোআহ: পৃষ্ঠা ১৩৪।
[58] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৫।
[59] শরহে নাওয়াওয়ী: ১৩/৫৪।
[60] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৪৮।
[61] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪১।
[62] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৪।
[63] মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৪৮।
[64] মুসলিম, হাদীস নং ৭৯।
[65] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪১।
[66] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩১।
[67] মুসনাদে আহমদ: হাদীস নং ১১৩৬০।
[68] তিরমিযী, হাদীস নং ২৯১৪।
[69] বুখারী, হাদীস নং ২৭৯০।
[70] মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৪।
[71] হাদিউল আরো য়াহ: পৃষ্ঠা ৯৯।
[72] আত-তাখয়ীব মিনান নার ওয়াত-তা‘আরিফ বিহাল: পৃষ্ঠা ৬৯।
[73] বুখারী, হাদীস নং ১১২১-১১২২।
[74] মুসলিম, হাদীস নং ২৯৬৭।
[75] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৪।
[76] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭১, মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬।
[77] মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮।
[78] মুসলিম, হাদীস নং ১৮৯।
[79] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬২, মুসলিম, হাদীস নং ২১৩।
[80] মুসলিম, হাদীস নং ২১৩।
[81] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৩।
[82] বুখারী, হাদীস নং ৩২৬০।
[83] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪২।
[84] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৫।
[85] শরহে নাওয়াওয়ী ‘আলা সহীহ মুসলিম: ৯/২৮৭।
[86] আন-নিহায়া ফি গরীবিল হাদীস, লেখক ইবন আসীর: ১/৪৭।
[87] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ১১২০।
[88] আন-নিহায়া ফি গরীবিল হাদীস: ১/৪৭।
[89] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ৭১০।
[90] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ৫৫০।
[91] মুসলিম, হাদীস নং ২৫০।
[92] আল-মু‘জাম আল-কাবীর, লেখক: ইমাম তাবরানী, হাদীস নং ১০৩২১।
[93] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৮, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৬৮।
[94] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৩/২১৩, ৪/৪২, ৪৬৫, তাফসীরে বাগভী: ৪/৬৭, ৪৩৮।
[95] তাফসীরে ইবন কাসীর: ২/৫৪৫।
[96] পূর্বসূত্র।
[97] মুসলিম, হাদীস নং ৯৩৪।
[98] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৫০৪, হাদিউল আরো য়াহ: পৃষ্ঠা ২২০।
[99] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/২৮১, হাদিউল আরো য়াহ: পৃষ্ঠা ২২০।
[100] তাফসীরে বাগভী: ৪/১৫৪।
[101] তাফসীরে বাগভী: ৪/১৪৬-১৫৪।
[102] তাফসীরে বাগভী: ৪/১৫৪, তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/১৪৬।
[103] গরীবুল কুরআন, লেখক আল-আসফেহানী: পৃষ্ঠা ৩৬১, তাফসীরে বাগভী: ৪/৩৯০, তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪১৭।
[104] তাফসীরে বাগভী: ৪/৪১০, তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৩৮।
[105] গরীবুল কুরআন, লেখক আল-আসফেহানী: পৃষ্ঠা ৩৬১, তাফসীরে বাগভী: ৪/৪৭৮।
[106] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৫৫।
[107] তাফসীরে বাগভী: ৪/৪২৭।
[108] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৫৭, তাফসীরে বাগভী: ৪/৪৩৬।
[109] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৮৭, তাফসীরে বাগভী: ৪/৪৬১।
[110] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৮৮, তাফসীরে বাগভী: ৪/৪৬২।
[111] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/১৭৭, তাফসীরে বাগভী: ৪/১৮১।
[112] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭৯, মুসলিম, ২২৯২।
[113] বুখারী, হাদীস নং ৪৯৬৪।
[114] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৮১।
[115] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/১৭৬।
[116] তাফসীরে ইবন কাসীর: ২/৫৩৭, তাফসীরে বাগভী: ৩/২৯।
[117] মুসলিম, হাদীস নং ২০০২।
[118] মুফরাদাত গরীবুল কুরআন, আসফেহানী: পৃষ্ঠা ৪৭৬।
[119] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৩/৮২, ৪/৪২১।
[120] তাফসীর ইবন কাসীর: ৪/৪২, ৪৬৫, তাফসীরে বাগভী: ৪/৬৭, ৪৩৮।
[121] তাফসীর ইবন কাসীর: ৪/৫০৩, তাফসীরে বাগভী: ৪/৪৭৮।
[122] তাখভীফ মিনান নার, ইবন রজব হাম্মালী: পৃষ্ঠা ১৫০।
[123] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৫০।
[124] তিরমিযী: হাদীস নং ১৯৮৪।
[125] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪২।
[126] বুখারী, হাদীস নং ৭০২৪।
[127] বুখারী, হাদীস নং ৩৮২০।
[128] ফাতহুল বারী: ৭/১৩৮।
[129] বুখারী, হাদীস নং ৪৮৭৯।
[130] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৮।
[131] শরহে ইমাম নাওয়াওয়ী: ১৭/১৭৫।
[132] বুখারী, হাদীস নং ৪৫০, মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৩।
[133] তিরমিযী, হাদীস নং ১০২১।
[134] মুসলিম, হাদীস নং ৭২৮।
[135] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫২৬, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৮০৪৩।
[136] তাফসীরে ইবন কাকাসীর: ৩/৩১২, বাগভী: ৩/৩৬২।
[137] পূর্বসূত্রদ্বয়।
[138] আন নিহায়া ফি গরীবিল হাদীস, ইবন আসীর: ৩/৩৮০, তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৮৯।
[139] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৩৮, বাগভী: ৪/৪১০।
[140] তাফসীরে বাগভী: ৩/২৮১, তাফসীরে ইবন কাসীর: ৩/২১৩।
[141] বুখারী, হাদীস নং ৩৩২৭, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৪।
[142] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫৪৫।
[143] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫৩৬।
[144] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৫১।
[145] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫১।
[146] আততাখভীফ মিনান নার: পৃষ্ঠা ১৭১।
[147] ফাতহুল বারী: ১১/৪২৩।
[148] তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৯২।
[149] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৫২, মুসলিম, হাদীস নং ২৮২৮।
[150] শরহে ইমাম নাওয়াওয়ী: ১৭/১৬৭।
[151] বুখারী, হাদীস নং ১০৫২, মুসলিম, হাদীস নং ৯০৭।
[152] বুখারী, হাদীস নং ৭৫১৯।
[153] ফাতহুল বারী: ৫/২৭।
[154] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৬১, ৪৯৫।
[155] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/২৯৫।
[156] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা: ১৫৫২, আল-‘মুজাম আল ওয়াসীত: ১/৩৮৮, তাফসীরে বাগভী: ৪/৫০৮, তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৫২৬।
[157] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/২৪২।
[158] মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১০৬১০।
[159] মুসলিম, হাদীস নং ১৬৩১।
[160] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৯, ২২১।
[161] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৪৯।
[162] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৯।
[163] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৪৮, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৫০।
[164] হাদীউল আরওয়াহ: পৃষ্ঠা ২৮৮।
[165] হাদীউল আরওয়াহ: পৃষ্ঠা ২৯১।
[166] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭৩, মুসলিম, হাদীস নং ১৮২।
[167] বুখারী, হাদীস নং ৭৪৩৪, মুসলিম, হাদীস নং ৬৩৩।
[168] বুখারী, হাদীস নং ৭৪৩৯।
[169] মুসলিম, হাদীস নং ১৮১।
[170] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৩।
[171] বুখারী, হাদীস নং ৪৮৭৮, মুসলিম, হাদীস নং ১৮০।
[172]
[173] বুখারী, হাদীস নং ৭২৮০।
[174] বুখারী, হাদীস নং ২৯৫৭, মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩৫।
[175] মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৯।
[176] এসব আমলের অধিকাংশই উল্লেখ আছে মাজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ: ১০/৪২২-৪২৩।
[177] মাজমুয়ায়ে ফতওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. ১০/ ৪২৩-৪২৪, ইমাম যাহবী রহ. এর কবীরা গুনাহ এবং ইবনে নুহাসের তাম্বীহুল গাফেলীন।


সংকলন: ড. সাঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদনা: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব